শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
মেজর (অব.) সিনহার মৃত্যু

‘কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে, বাঁশি সংগীতহারা’

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

‘কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে, বাঁশি সংগীতহারা’

মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সমসাময়িক বেদনাবিধুর পরিবেশ এবং আমার মতো সামান্য কলমযোদ্ধার অলস কলমের কথা বলতে গিয়ে প্রিয় কবি মহাদেব সাহাকে উদ্ধৃত করে লিখেছিলাম ‘বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভাল নেই’। তা দেখে অলক্ষ্যে কেউ হেসেছিল কিনা জানি না, তবে ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি দুই সপ্তাহের মাথায় মেজর সিনহাকে এভাবে হারিয়ে লিখতে হবে, ‘কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে, বাঁশি সংগীতহারা’ শিরোনামে। এ শিরোনাম কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রশ্ন’ কবিতার একটি চরণ। এ কবিতায় কবিগুরু ভগবানকে উদ্দেশ করে লিখেছিলেন : ভগবান, তুমি যুগে যুগে দূত পাঠায়েছ বারে বারে/দয়াহীন সংসারে-/তারা বলে গেল ‘ক্ষমা কর সবে’, বলে গেল ‘ভালোবাসো- অন্তর হতে বিদ্বেষবিষ নাশো’। বরণীয় তারা, স্মরণীয় তারা, তবুও বাহির-দ্বারে/আজি দুর্দিনে ফিরানু তাদের ব্যর্থ নমস্কারে॥/আমি যে দেখেছি গোপন হিংসা কপট রাত্রিছায়ে

হেনেছে নিঃসহায়ে,/আমি- যে দেখেছি- প্রতিকারহীন, শক্তের অপরাধে/বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।/আমি যে দেখিনু তরুণ বালক উন্মাদ হয়ে ছুটে/কী যন্ত্রণায় মরেছে পাথরে নিষ্ফল মাথা কুটে॥/কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে, বাঁশি সংগীতহারা,/অমাবস্যার কারা/লুপ্ত করেছে আমার ভুবন দুঃস্বপ্নের তলে,/তাই তো তোমায় শুধাই অশ্রুজলে-/যাহারা তোমার বিষাইয়াছে বায়ু, নিভাইয়াছে তব আলো,/তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রিয় পাঠক! রবীন্দ্রনাথের কোনো কবিতা পেশ করার ইচ্ছা নিয়ে লিখতে বসিনি। ৭ আগস্ট, ১৯৪১ সাল, অর্থাৎ আজ থেকে ঠিক ৭৯ বছর আগে গত হয়েছেন বিশ্বকবি। তাই বলা যায়, প্রায় ৮০ বছর আগে এ কবিতা লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যা প্রাসঙ্গিক মনে হলো কক্সবাজারের বাহারছড়ায় প্রাণ হারানো মেজর (অব.) সিনহা রাশেদের কথা ভেবে। সাবেক  কেবিনেট সচিব ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনপ্রধান সা’দত হোসাইন একাধিক টকশোয় বলেছিলেন, সরকার কার্যকর না ব্যর্থ ও নিয়ন্ত্রণহীন, তার প্রমাণ সরকারের ‘মেশিনারিজ’ বা প্রশাসনের সচলতা বা গতিপ্রকৃতি। আর রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘ভগবানের দূতে’র মতো মাঠপর্যায়ে সরকারের দূতরূপে কাজ করে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ‘দয়াহীন সংসার’ ছেড়ে চলে গেলেন মেজর রাশেদ (অব.)। এ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার দায় সামগ্রিকভাবে কোনো বাহিনী নেবে না, এটাই স্বাভাবিক। আবার সাবেক সহকর্মীকে হারিয়ে মেজর সিনহার বন্ধু, সিনিয়র বা জুনিয়ররা বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখবেন এও স্বাভাবিক। এখানে দুটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। তাই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে হয়, ‘অন্তর থেকে বিদ্বেষবিষ নাশো’।

দুঃখজনক এ ঘটনা করোনার মধ্যে ঈদের যৎসামান্য আনন্দ আয়োজনকে ম্লান করে দিয়েছে। পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করে মসজিদের ছাদে ঈদের নামাজ পড়েছি। বুক ভাসিয়ে দোয়া করেছি অগ্রজ মেজর হামিম, বন্ধুসম মেজর মিজান ও অনুজ কর্নেল আজিমের জন্য, যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, প্রশিক্ষণ নিয়েছি, খেলাধুলা করেছি এবং আনন্দ-বেদনার সঙ্গী হয়েছি। করোনার কালো থাবা এই হাস্যোজ্জ্বল মুখগুলো কেড়ে নিয়েছে, একমুঠ মাটিও দিতে পারিনি তাদের কবরে। আর রাওয়া (রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন) থেকে প্রায় প্রতিদিন মেসেজ আসে পরিচিতজন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর খবর নিয়ে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি অধিকাংশের মৃত্যু করোনায়। এখনো হাসপাতালের (সিএমএইচ) বিছানায় প্রহর গুনছে শতাধিক পরিচিতজন। তাদের সবাইকে আবার দেখতে পাব, এ আশায় বুক বাঁধি, দোয়া করি। এরই মাঝে মেজর সিনহা রাশেদ (অব.)-এর ব্যতিক্রমী মৃত্যু সত্যিই পীড়াদায়ক।

পুলিশ ও আনসার বাহিনীতে ‘চাঁদমারি’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে, যার অর্থ অস্ত্র চালনা বা গুলি ছোড়া প্রশিক্ষণ। তবে ঈদের আগের চাঁদরাতে (শুক্রবার) পুলিশের জনৈক এসআই লিয়াকত কোনো ‘চাঁদমারি’ প্রশিক্ষণ নয়, সন্দেহবশতও নয়, নিশ্চিত শত্রু ভেবে সামনে থেকে অতি নিকট দূরত্বে গুলি চালিয়েছেন মেজর (অব.) সিনহা রাশেদের শরীরে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত আনা হয়েছে বলে ঘোষণা করেন কর্তব্যরত ডাক্তার। এসআই লিয়াকত ও তার সঙ্গীদের দাবি, তাদের কাছে তথ্য ছিল ডাকাতি শেষে কক্সবাজার ফিরছিল তথাকথিত ডাকাত বা ডাকাত দল। তাই মেজর (অব.) সিনহা রাশেদের গাড়ি তল্লাশি করতে চান এসআই লিয়াকত গং। কিন্তু তিনি এতে শুধু বাধাই দেননি বরং সঙ্গে থাকা ব্যক্তিগত পিস্তল দিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করতে উদ্ধত হন। ফলে জীবন রক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালান এসআই লিয়াকত, যার ফলে প্রাণ হারান মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ। পক্ষান্তরে একজন সাবেক সেনা অফিসার হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যমতে মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ ছিলেন ৫১তম বিএমএল কোর্সের চৌকস অফিসার। একসময় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স বা এসএসএফে কর্মরত ছিলেন এই সুদর্শন অফিসার। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে তাকে কর্তব্য পালন করতে দেখা গেছে বিভিন্ন ছবিতে। এসএসএফে চাকরির জন্য সাধারণ সেনা অফিসারের গুণাবলির অতিরিক্ত প্রশ্নাতীত আনুগত্য, দেশ ও নেতা-নেত্রীর নিরাপত্তায় নিজের জীবন উৎসর্গ করার মানসিকতা এবং শত প্রলোভনে পথভ্রষ্ট না হওয়ার মতো সুদৃঢ় মনোবল থাকা অত্যাবশ্যক। যতটুকু জেনেছি, মেজর (অব.) সিনহা রাশেদের মাঝে তা-ই ছিল। সেনাবাহিনীর চাকরি ছাড়ার আগেও মিডিয়ার প্রতি তার আগ্রহের কথা মিডিয়ার বন্ধুদের কাছে জেনেছি। সর্বশেষ তার কক্সবাজার ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল ভ্রমণের ওপর ডকুমেন্টারি নির্মাণ। চাঁদরাতে শুটিং করার জন্যই তারা মেরিন ড্রাইভ ধরে কক্সবাজার থেকে টেকনাফের দিকে যান এবং রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় পুলিশের এসআই লিয়াকতের গুলিতে প্রাণ হারান। এসআই লিয়াকত একটি প্রাইভেট কারে থাকা মাত্র দুজনকে (মেজর সিনহা ও সঙ্গী সিফাত) কেন ডাকাত ভাবলেন তা বোধগম্য নয়। এসএসএফে পুলিশ সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করেন এবং নেতা-নেত্রী ও রাষ্ট্রীয় অতিথিদের নিরাপত্তা পুলিশের সাহায্য নিয়েই নিশ্চিত করা হয়। সুতরাং চেকপোস্টে পুলিশের একজন কর্তব্যরত এসআইর সঙ্গে কীভাবে আচরণ বা সহায়তা করা প্রয়োজন, তা একজন সাবেক এসএসএফ সদস্য হিসেবে ভালোই জানা থাকার কথা মেজর (অব.) সিনহা রাশেদের। তাই তার পক্ষে পুলিশকে গুলি করতে উদ্ধত হওয়ার খবর মেনে নেওয়া কঠিন। পুলিশের তথ্যমতে, তার গাড়িতে ইয়াবা ট্যাবলেট ও গাঁজা পাওয়া যায়। এর বাইরে তাদের দাবিকৃত শুটিংয়ের কোনো সরঞ্জাম ও সামগ্রী পাওয়া গেছে কিনা, তা জানায়নি কেউ। আর তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে তারা তথাকথিত ডাকাতি বা মাদক বহনে জড়িত ছিলেন, তবে একজন এসআই লিয়াকতের দায়িত্ব কি আত্মরক্ষার নামে তার দিকে গুলি ছোড়া? রবীন্দ্রনাথের কথায় ‘আজ দুর্দিনে’ পুলিশের চেকপোস্টে এভাবে ‘ব্যর্থ নমস্কার’ প্রাপ্য ছিল না পরিচয় দেওয়া একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার বা সাধারণ নাগরিকের। রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন ‘গোপন হিংসা কপট রাত্রি-ছায়ে হেনেছে নিঃসহায়ে’। আর আমরা অপেক্ষা করব ‘রাত্রি-ছায়ে’ প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল তা জানার জন্য। এমন ‘নিঃসহায়’ মৃত্যু যেন চিরতরে বন্ধ হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে নানাবিধ তথ্য। কোনটি সঠিক, কোনটি বিকৃত, কোনটি অর্ধসত্য কিংবা হীন উদ্দেশ্যে মনগড়া- তা যাচাই করার আগেই সব তথ্য পৌঁছে যায় মোবাইল নামক সবজান্তার কাছে। চাকরিজীবনে সেনাবাহিনীর যত ইউনিটে চাকরি করেছি, প্রতি ইউনিটের অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের মাঝে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। বৃহত্তর কলেবরে ক্যাডেট কলেজের সাবেক ক্যাডেট, বিএমএর ক্যাডেট, রাওয়া সদস্য, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব সদস্য, ডিফেন্স ফোরামসহ কত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যে রয়েছে, তার সঠিক হিসাব জানা কঠিন। এসব সামাজিক মাধ্যমে ঈদের দিন থেকে নানা অভিব্যক্তি, আবেগ মন্তব্য, ছবিসহ বহু কিছু ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে এ সবকিছুর মধ্যে একটি সীমা থাকা অত্যাবশ্যক। অহেতুক উত্তেজনা ছড়িয়ে সাবেক সেনা অফিসারদের মাঝে কোনো ভুল বার্তা পৌঁছে দিতে পারে সুযোগসন্ধানীরা। তাই যে কোনো তথ্য পাওয়া মাত্র তা প্রচার বা ফরোয়ার্ড বা পোস্ট না করে তার সত্যতা যাচাই ও এর সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে ভাবতে হবে। অপ্রিয় হলেও এ কথা সত্য, তুলনামূলকভাবে অসামরিক সরকারি আমলার চেয়ে সেনা অফিসারের সংখ্যা অনেক কম। অথচ বিভিন্ন কারণে চাকরি হারানো, পদোন্নতি না পাওয়া, জেলে যাওয়া এমনকি ফাঁসির মঞ্চে ঝোলা কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারের সংখ্যা অনেক বেশি। সুতরাং আর যেন কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি প্রয়োজন। পুুলিশ এবং সেনাবাহিনী উভয়ই রাষ্ট্র ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। পুলিশ ও সেনাবাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে এবং দেশ স্বাধীন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতবাদীদের প্রতিরোধেও উভয় বাহিনী একই ক্যাম্পে অবস্থান করেছে দীর্ঘদিন। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে স্বাধীনতার পর থেকেই উভয় বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গড়া হয় যৌথবাহিনী। এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‌্যাব গঠনের পর সেনা অফিসার ও অন্য সদস্যরা সরাসরি পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জঙ্গিবাদ, অবৈধ ক্লিনিক, ভেজাল ওষুধ প্রভৃতির বিরুদ্ধে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন। জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযান ও সম্প্রতি সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে বনদস্যু ও জলদস্যুদের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে জীবন বাজি রেখেছেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের বর্তমান প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ মাত্র চার মাস আগেও র‌্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর র‌্যাবের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি একদিকে যেমন বহু সেনা সদস্যকে কাছ থেকে দেখেছেন, তেমনিভাবে ১৯৮৮ থেকে ২০২০- এই ৩২ বছরে দেখেছেন পুলিশ বাহিনীর বহু অর্জন, বিসর্জন ও আত্মত্যাগ এবং কলঙ্কের ইতিহাস। সুতরাং তার প্রতি আস্থা রেখেও উভয় বাহিনীকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার স্বার্থে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত প্রত্যাশা করছি। প্রথমে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও পরবর্তীতে শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন প্রমাণ করে সরকার বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছে। উভয় বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপর্যুপরি বৈঠক এবং ‘কোনো ব্যক্তির দায় বাহিনী বহন করবে না’ শীর্ষক দৃঢ় অঙ্গীকার সঠিক তদন্তের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আমার আগের একটি লেখায় ‘পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’ (পিবিআই) এবং পিবিআই-প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছিলাম ফেনীর নুসরাত হত্যাকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওসি মোয়াজ্জেমের ন্যক্কারজনক ভূমিকা সঠিকভাবে তদন্তের মাধ্যমে জনসম্মুখে ও আদালতে তুলে ধরার জন্য। আমি আবারও লিখতে চাই এমন প্রশংসাবাণী মেজর (অব). সিনহা রাশেদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানকারীদের নিয়ে। রবীন্দ্রনাথের মতো কখনো ভাবতে চাই না ‘প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে, বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’।

মেজর (অব.) সিনহা রাশেদের গাড়িতে ইয়াবা বা গাঁজা ছিল কিনা, তা তদন্ত কমিটিই হয়তো বের করবে। তবে কক্সবাজার ও টেকনাফ হয়ে মাদক যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তা সবাই জানে। প্রশাসন ও সুশৃঙ্খল বাহিনীর কোনো কোনো বিপথগামী সদস্যও মাদকাসক্ত কিংবা মাদক ব্যবসায় সংযুক্ত থাকার খবরে কেউ অবাক হয় না। তাই পুলিশের পক্ষে যে কাউকে মাদকের মামলায় আটক করা কিংবা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে বন্দুকযুদ্ধে বা ক্রসফায়ারে নিক্ষেপ করা অসম্ভব কিছু নয়। তবু কি থামছে মাদকের করাল গ্রাস? করোনার মাঝেও জমজমাট মাদকের বাণিজ্য। এমনকি হোম ডেলিভারিতে মাদক বিক্রির তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। মাদকসেবী আগামী প্রজন্মের দিকে তাকালে রবীন্দ্রনাথের কথাই মনে পড়ে, যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘তরুণ বালক উন্মাদ হয়ে ছুটে, কী যন্ত্রণায় মরেছে পাথরে নিষ্ফল মাথা কুটে॥’ মাদকের এমন বিস্তার না ঘটলে হয়তো কোনো পুলিশচৌকি থাকত না বাহারছড়ায়। আর একজন এসআই লিয়াকতকে সেখানে এভাবে তল্লাশি চালাতে হতো না। সত্যি বলতে গেলে অবশ্যই বলতে হবে, আজ অনেকের কণ্ঠই রুদ্ধ। রবীন্দ্রনাথের মতো তারা হয়তো লিখছেন না ‘কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে, বাঁশি সংগীতহারা’। তবে করোনা, বন্যা, অর্থনৈতিক মন্দা, বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- সব মিলিয়ে অনেকের কণ্ঠই আজ রুদ্ধ এবং জীবন ছন্দহীন। তবু আমাদের বাঁচতে হবে, ছন্দে ফিরতে হবে।

                লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

সর্বশেষ খবর