সভ্য সমাজ বা রাষ্ট্রকাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো পুলিশ। পুলিশহীন রাষ্ট্রকাঠামো কল্পনায় আনাও কঠিন। আমাদের দেশের বর্তমান পুলিশ বাহিনীর সৃষ্টি হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে ঔপনিবেশিক শাসনকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলেও ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী পাকিস্তানি শাসকরা পুলিশ বাহিনীকে যুগোপযোগী করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ব্রিটিশ শাসকদের মতো পাকিস্তানি শাসকরাও পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করেছে নিজেদের শাসন ও শোষণ টিকিয়ে রাখার পাহারাদার হিসেবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা অসামান্য দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালি জাতির ওপর নির্বিঘেœ গণহত্যা চালাতে প্রথমে হামলা চালায় রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টারে। মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্য মুক্তিবাহিনীর হয়ে লড়েছেন। স্বাধীনতার পর পুলিশকে যুগোপযোগী বাহিনীতে পরিণত করা প্রয়োজন সব সরকার স্বীকার করলেও নিজেদের হীনস্বার্থ জিইয়ে রাখতে সে পথে এগোয়নি। ১৩ বছর আগে পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, কিন্তু অধ্যাদেশটি আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান সরকার পুলিশকে নতুন রূপে দেখতে চাইলেও তাদের আমলেও ১৩ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে পুলিশ সংস্কারের প্রস্তাবিত অধ্যাদেশটি। পুলিশকে আরও জনবান্ধব ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ওই সংস্কার প্রস্তাব আনা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এস এম শাহজাহানের নেতৃত্বে একটি কমিটি পুলিশ সংস্কারের খসড়া অধ্যাদেশ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। কক্সবাজারে সিনহা হত্যার পর পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনাকালে পুলিশের মহৎ সেবা তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করলেও সিনহা হত্যা তার প্রায় সবটুকুই নিষ্প্রভ করে দিয়েছে। যার পুনরাবৃত্তি রোধে পুলিশের সংস্কার সময়েরই দাবি।