১. গরিব-দুঃখীদের দেওয়ার পরও  কোরবানির কিছু মাংস আমাদের ঘরে থেকেই যায়। ফলে বছরে এ সময়ই সবচেয়ে বেশি মাংস খাওয়া হয়। গরু অথবা খাসির মাংসে প্রচুর চর্বি থাকে। এ বাড়তি চর্বিতে এলডিএল বা Low density lipoprotein থাকে। মোটা দাগে একে খারাপ বা ক্ষতিকর কলেস্টেরল বলা হয়। এটি ধমনির গায়ে জমা হতে পারে। ফলে ধমনির লুমেনকে ছোট করে ফেলে। তাই রক্তচাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া রক্তচাপ স্ট্রোকের মতো মৃত্যুঝুঁকিও ডেকে আনতে পারে। ২. মাংস এক অত্যাবশ্যকীয় প্রাণিজ প্রোটিন। সুতরাং এর প্রয়োজন আছে। সাধারণত দৈনিক প্রতি কেজি শরীরের ওজনে ১ গ্রাম প্রাণিজ প্রোটিনই যথেষ্ট। অর্থাৎ  কারও ওজন ৬৫ কেজি হলে দৈনিক ৬৫  গ্রাম প্রোটিন যথেষ্ট। মাংশের মাত্র ১/২ টুকরোতেই এ প্রোটিন পাওয়া যায়। সুতরাং দিনে ২ টুকরোর বেশি মাংসের দরকার নেই। বাড়তি খাওয়া মাংস মুখের স্বাদ ছাড়া কোনো লাভই আনতে পারে না। ৩. ছোটবেলায় দেহের ক্ষয় পূরণ ও বৃদ্ধি সাধনের জন্য প্রোটিন দরকার হলেও পরিণত বয়সে বৃদ্ধি সাধনের যেহেতু প্রয়োজন নেই তাই প্রোটিনের প্রয়োজন আরও কমে যায়। ৪. একসঙ্গে বাড়তি মাংস খাওয়ার ফলে বদহজম হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। অনেকেই স্বাদ বাড়ানোর জন্য বেশি করে তেল-ঝাল-লবণ ব্যবহার করেন। এতেও বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। সঙ্গে পোলাওর বাড়তি তেলও গ্যাসের সমস্যা বাড়াতে পারে। প্রচন্ড দাবদাহের এ দিনগুলোয় কাচ্চি বিরিয়ানি আরও স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। কারও পায়খানা কষা বা পাতলা হতে পারে। কারও পর্যায়ক্রমে দুটোই হতে পারে। মলত্যাগের সময় জ্বলুনিও হতে পারে। ৫. Gout-জাতীয় অসুখ রেড মিট খাওয়ার কারণে ইউরিক অ্যাসিড হঠাৎ বেড়ে ব্যথা-বেদনা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। রাতের বেলা বেশি মাংস খাওয়া হলে বদহজমে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ৬. ভরপেটে অস্বস্তি হলে এনজাইম-জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। সোডা-জাতীয় পানীয় যেমন কোকাকোলা বা Eno সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে। পায়খানা বারবার হলে ওরস্যালাইন সেবন করা যেতে পারে। অবস্থা এর চেয়ে জটিল হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো। ৭. গরু-খাসির মাংস থেকে কোনোক্রমেই করোনা ছড়ায় না। তাই মাংস বেশি খেলে অন্য সমস্যা যা-ই হোক, করোনা হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

লেখক : ক্লাসিফাইড স্পেশালিস্ট ফার্মাকোলজি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ।