শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

সমৃদ্ধ দেশ গড়াই হোক ১৫ আগস্টের অঙ্গীকার

টিপু মুনশি

সমৃদ্ধ দেশ গড়াই হোক ১৫ আগস্টের অঙ্গীকার

শোকের মাস আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমরা হারিয়েছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সপরিবার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ষড়যন্ত্রকারী ও ঘাতকরা মনে করেছিল ইতিহাস থেকে তাঁর নাম মুছে যাবে। তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একটি আদর্শ, একটি প্রতিষ্ঠান, বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা। স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে জেল-জুলুম-অত্যাচার। মৃত্যুভয় তাঁকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে জেলে কাটিয়েছেন। আগরতলা যড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেওয়ার নীলনকশা তৈরি করা হয়েছিল। পাকিস্তানিদের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র যোদ্ধায় পরিণত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে আমরা অস্ত্রহাতে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। বাবার সঙ্গে আমিও সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি।

মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তারা একের পর এক চক্রান্তের ফাঁদ পেতেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর বিপথগামী উচ্চাভিলাষী কয়েকজন সদস্যকে ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যবহার করেছে ওই চক্রান্তেরই বাস্তব রূপ দিতে। এরাই স্বাধীনতার সূতিকাগার বলে পরিচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে হামলা চালায় গভীর রাতে। হত্যা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। বিশ্ব ও মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম এ হত্যাকান্ডের মাধ্যমে সেদিন তারা কেবল বঙ্গবন্ধুকেই নয়, তাঁর সঙ্গে বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতার আদর্শগুলোকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। মুছে ফেলতে অপপ্রয়াস চালিয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাথাও। বঙ্গবন্ধুর নৃশংসতম হত্যাকান্ড বাঙালি জাতির জন্য করুণ বিয়োগগাথা হলেও ভয়ঙ্কর ওই হত্যাকান্ডে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না করে বরং দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়ালে রাখার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরস্কৃতও হয়েছে নানাভাবে। হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাক সরকার।

১৯৭৬ সালের ৮ জুন ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে অভিযুক্ত হত্যাকারী গোষ্ঠীর ১২ জনকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। তবে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত এবং নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে বিচার সম্পন্ন হয়।

স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছি কিছু পাওয়ার আশায় নয়। দেশে অনেক পটপরিবর্তন হয়েছে, কোনো কিছু পাওয়ার আশায় ও চাপের মুখে আদর্শচ্যুত হইনি। সংগ্রাম করে গেছি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য। বঙ্গবন্ধু ভালোবেসে বুকে টেনে নিয়েছেন আপন করে। বঙ্গবন্ধুর সে ভালোবাসার মূল্য দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি জীবনভর। বঙ্গবন্ধু দুটি উদ্দেশ্য সফল করতে সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মৃত্যুভয় তাঁকে থামাতে পারেনি। কোনো লোভ তাঁকে আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। হাজারো প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু এগিয়ে গেছেন নিজের উদ্দেশ্য সফল করতে। একটি হলো বাঙালি জাতির মুক্তি অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, অন্যটি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্থাৎ সুজলা সুফলা উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন সংগ্রাম করে আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়ার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। আমরাও প্রধানমন্ত্রীর সহযোদ্ধা।

বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য, বাঙালি জাতিকে জাগ্রত করার জন্য। বিশ্বদরবারে বাঙালি জাতি আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাঙালি জাতির সম্মান সমুন্নত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফলতার জন্য, মানব জাতির কল্যাণে কাজ করার জন্য, মানবতাকে সম্মান করার জন্য জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান বারবার সম্মানে ভূষিত করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এজন্য বাঙালি জাতি গর্বিত। এ সম্মান পুরো বাঙালি জাতির। বিশ্বদরবারে আজ বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি সম্মানিত। এ সম্মান আপনাআপনি আসেনি। বঙ্গবন্ধু যেমন সারা জীবন সংগ্রাম করে বাংলাদেশ স্বাধীন করে গেছেন, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এ সম্মান অর্জন করেছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করে বাঙালি জাতিকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে চেয়েছিল, আজ তারা পরাজিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে, আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ। দেশের অর্থনীতি আজ একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। একসময় যারা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি এবং বিশ্বের দরিদ্র দেশের মডেল হিসেবে উল্লেখ করেছিল, আজ তারাই বলছে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থাশীল।

কভিড-১৯-এর কারণে বিশ্ব আজ স্তব্ধ, বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত। লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। বাংলাদেশও এর থেকে মুক্ত নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে সফলভাবেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ। বিশ্বনেতারা কভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধা, যোগ্যতা ও কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বের চরম নাজুক অর্থনীতির মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রয়েছে। বিশ্বমন্দা অর্থনীতির মধ্যেও গত বছরের জুলাই থেকে এ বছর জুলাইয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২৩.০৬ মিলিয়ন বেশি হয়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। আমরা বিশ্বাস করি, আবার ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।

লেখক : বাণিজ্যমন্ত্রী।

 

সর্বশেষ খবর