বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

সি আর দত্তের মহাপ্রয়াণ

বীরউত্তমের প্রতি আমাদের শেষ শ্রদ্ধা

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) চিত্তরঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত) বীরউত্তম চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের সময় সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় ফ্লোরিডার বয়েন্টনবিচের বিথেসডা সাউথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই জাতীয় বীর। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর আট মাস। ফ্লোরিডায় মেয়ের বাসায় গত বৃহস্পতিবার বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলেন সি আর দত্ত। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পায়ে অস্ত্রোপচারও হয়। তবে তিনি আর সুস্থ হননি। এমনিতেই ছিলেন হাঁপানির রোগী। অস্ত্রোপচারের পর তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। অচল হয়ে পড়ে কিডনিও। কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সংজ্ঞা ফেরানো সম্ভব হলেও পরে অবস্থার আরও অবনতি হয়। সোমবার দুপুরেই চিকিৎসকরা সংজ্ঞা ফেরানোর আশা ছেড়ে দেন। পরিবারের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের এই বীরউত্তমকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এজন্য তাঁর এক মেয়ে কানাডা থেকে ঢাকায় আসছেন বাবার লাশ গ্রহণ করার জন্য। ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি আসামের রাজধানী শিলংয়ে জন্মগ্রহণ করেন সি আর দত্ত। বাবা উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ছিলেন পুলিশ অফিসার। প্রাথমিক শিক্ষা শিলংয়ে শুরু হলেও পরে তাঁর পরিবার স্থায়ীভাবে চলে আসে হবিগঞ্জে। হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাসের পর খুলনার দৌলতপুর বি এল কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন সি আর দত্ত। ’৫১ সালে যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ’৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে আসালংয়ে একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাঁকে পুরস্কৃত করে। সি আর দত্ত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার। বেশ কটি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন। বলেছেন জাতি মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। বীরউত্তম সি আর দত্ত অবসর জীবনে মুক্তিযুুদ্ধের অঙ্গীকার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করে গেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন সদালাপী ও সজ্জন। তাঁর মৃত্যু সারা দেশের জনমনে গভীর ছায়া বিস্তার করেছে। বীরউত্তম সি আর দত্তের প্রতি আমাদের শেষ শ্রদ্ধা। অভিবাদন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর