শিরোনাম
বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

হজরত আবুবকরের কালজয়ী ভাষণ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হজরত আবুবকরের কালজয়ী ভাষণ

রসুল (সা.)-এর ওফাতের পর হজরত আবুবকর (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময়টা ছিল ইসলামের ইতিহাসে খুবই নাজুক। একদিকে ধর্মত্যাগের হিড়িক, অন্যদিকে ভন্ড নবীর উদ্ভব, আবার মুসলমানদের একটি অংশ জাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানায়, এক কথায় ওই সময় খিলাফতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে আবুবকর (রা.) মুসলমানদের ঐক্য বজায় রেখেছেন। যে কারণে ইতিহাসবিদরা তাঁকে ‘ইসলামের ত্রাণকর্তা’ উপাধি দিয়েছেন।

খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করে জনগণের উদ্দেশে হজরত আবুবকর (রা.) যে ভাষণ দিয়েছেন, তা আজও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সরকারের জন্য পাথেয়। রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক মজবুত করার সহজ উপায় বলা হয়েছে সে ভাষণে। আসুন সংক্ষেপে জেনে নিই প্রথম ভাষণে যে উপদেশগুলো দিয়েছিলেন খলিফা আবুবকর (রা.)। ১. হে আমার দেশবাসী! আমি তোমাদের আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ এবং আল্লাহর দেখানো হেদায়াতের ওপর অটল থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। ২. আল্লাহর আনুগত্য করবে এবং সৎপথপ্রাপ্ত নেতার আনুগত্য করবে। নেতার আনুগত্যের মধ্যেও তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। জেনে রাখো! সৎ নেতার আনুগত্য করাও আল্লাহ-প্রদত্ত হেদায়াতের একটি নিদর্শন। ৩. সাবধান! নফসের আনুগত্য করবে না। নফসবিজয়ী ব্যক্তিই প্রকৃত কল্যাণের অধিকারী। যারা নফসের আনুগত্য করেছে, তারা দুনিয়া-আখিরাতে ধ্বংস হয়ে গেছে। ৪. সাবধান! অহংকার করবে না। যে মাটি থেকে অহংকারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে, একদিন সে এবং তার অহংকার মাটিতেই মিশে যাবে। ভেবে দেখ, অহংকারীর মতো নির্বোধ এ পৃথিবীতে আর কে আছে? ৫. সাবধান! মানুষের অভিশাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলবে। মানুষের অভিশাপ জীবনে দুঃখ বয়ে আনে। এমনভাবে চল যেন তোমার কোনো দাপট নেই, ক্ষমতার দাপট চিরদিন থাকে না। ৬. মনোবল দৃঢ় রাখ। তবেই যে কোনো লক্ষ্যে তোমরা সফল হবে। নিয়ত যার দৃঢ়, আল্লাহ তার সহায় থাকেন। তাই আল্লাহর ওপর ভরসা করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাও। সাহসী হও, ভীরু হইও না। ৭. শুধু ভালো কাজ করাই সওয়াব নয়, খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকাও সওয়াব। তাই খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকো। অনেক ভালো কাজের পাশাপাশি যদি অনেক খারাপ কাজও জমা হয়ে যায়, তাহলে ফল শূন্য হতে পারে। ভালো কাজ অল্প কিন্তু খারাপ কাজ থেকে পরহেজ ছিলে, তাহলে তোমরা সহজেই নাজাত পেয়ে যাবে। ৮. ভালো কাজ কর। ভালো কাজ অবশ্যই আল্লাহ কবুল করেন। অলসতা করে ভালো কাজ ছেড়ে দিও না। তাহলে দুনিয়া-আখিরাতে আফসোস করবে। ৯. যে কাজ আল্লাহর আজাব ডেকে আনে, তা ছেড়ে দাও। আর আল্লাহর রহমত ডেকে আনে যে কাজ, তা আঁকড়ে ধর। মনে রেখ, এমন অনেক কাজ আছে বাইরে থেকে দেখে যা খারাপ মনে হয়, আসলে তা ভালো। আবার এমন অনেক কাজ আছে বাইরে থেকে দেখে ভালো মনে হয় আসলে তা খারাপ। তাই আমল করার ক্ষেত্রে তোমাদের অনেক বেশি সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। শয়তান তোমাদের পেছনে লেগে আছে। ভুলে যেও না সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন। ১০. আল্লাহর আজাবকে ভয় কর এবং অন্যকেও ভয় দেখাও। নিজে জাহান্নাম থেকে বাঁচো, অন্যদেরও বাঁচাও। শুধু নিজের চিন্তা করলে মুক্তি মিলবে না। সবার মুক্তির ফিকির করতে হবে। সবার নাজাতের জন্য এক ধরনের পেরেশানি নিজের ভিতর থাকা চাই। ১১. মনে রেখ, আল্লাহই একমাত্র সাহায্যকারী। তিনি সাহায্য না করলে ভালো কাজ করা সম্ভব নয়। মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্যও তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন। এ বিশ্বাস মনে গেঁথে নিলে শয়তানের মন্ত্রণা থেকে বাঁচা সহজ হবে। নেক আমল করে অনেকেই আত্মতৃপ্তিতে ভোগে, যা নেক আমলের প্রতিদান নষ্ট করে দেয়।

লেখক : মুফাস্সিরে কোরআন।

সর্বশেষ খবর