শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে

আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করে আশরাফুল মাখলুকাতের সম্মান দান করেছেন। তাদের জন্য পবিত্র খাদ্য-পানীয় আহার্য হিসেবে দান করেছেন। আল্লাহ ইরশাদ করছেন, ‘হে নবী! আপনি বলুন তোমাদের জন্য সমস্ত ভালো জিনিস হালাল করা হয়েছে।’ সুরা মায়িদাহ। অন্যত্র ইরশাদ করছেন, ‘হে রসুলগণ! আপনারা পবিত্র বস্তু আহার করুন। আল্লাহ হারাম ও অপবিত্র বস্তু আহার নিষেধ করেছেন।’ তিনি ইরশাদ করছেন, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। তাই তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। শয়তান তো মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না?’ সুরা মায়িদাহ।

শয়তান মানবজাতিকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়। এ ক্ষেত্রে তার কার্যকর হাতিয়ার মানুষকে মদ পান করিয়ে নেশাগ্রস্ত করা। মদ বা মাদকদ্রব্য মানুষের জ্ঞান ঢেকে ফেলে, মানুষ নেশাগ্রস্ত হয়। অতএব, যে বস্তুই নেশা সৃষ্টি করে, তা নিষিদ্ধ ও হারাম। মদপান সব অপরাধ ও পাপের উৎস। এ প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মদপান সব অশ্লীলতা ও কবিরা গুনাহর উৎস।’ কানজুল উম্মাল। কেননা মদ পানের পর তার বিবেক-বিবেচনা লোপ পায়, যার ফলে সে যে কোনো অশ্লীল ও বেহায়াপনার মতো কাজ অবলীলায় করতে থাকে। নিজ স্ত্রী ও পরস্ত্রীর মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না। মানুষে মানুষে শত্রুতা ও হিংসা সৃষ্টি করে। কথাবার্তা ও আচার-আচরণ তার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। মানবিক সব গুণ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে যায়। মারামারি, হানাহানির মতো ঘটনা ঘটে, বিশেষ করে যুবসমাজের চারিত্রিক মারাত্মক অবক্ষয় দেখা দেয়। অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, ইভ টিজিং, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন মহামারী আকারে সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। নেশাগ্রস্ত যুবক বেসামাল হয়ে পড়ে, ফলে একটি জাতির যুবসমাজ অবনতির অতল গহ্বরে নেমে যায়। এ জাতির উন্নতি কখনো সম্ভব হয় না। তাই মদপান অভিশপ্ত কাজ, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তিই অভিশপ্ত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মদ যে ব্যক্তি পান করে, যে তা পান করায়, যে তা বিক্রি করে, যে তা কেনে, যে তা তৈরি করায়, যে তা তৈরি করে, যে তা বহন করে, যার জন্য তা বহন করা হয় এবং যে এর মূল্য ভক্ষণ করে- সবার প্রতি আল্লাহ লানত করেন।’ তিনি আরও ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য মদ ও জুয়া হারাম করে দিয়েছেন।’ মূলত আঙ্গুর, খেজুর, গম, যব, মধু- এ পাঁচটি বস্তুর দ্বারা মদ তৈরি হয়। ফকিহদের মতে যেসব বস্তুর মধ্যে নেশা আছে, তা পানকারীর মানবিক সব গুণ বিলুপ্ত করে দেয়, এমনকি নিজের সত্তা, নিজের ধর্ম ও দুনিয়ার সব কিছু ভুলে গিয়ে নিছক কল্পনার জগতে বিচরণ করতে শুরু করে। তার সবই নিষিদ্ধ। তাই মদ যে জিনিস দিয়ে তৈরি হোক না কেন, তা হারাম। নবীজি ইরশাদ করেছেন, ‘শেষ জমানায় ভিন্ন নামে, ভিন্ন লেভেলে, ভিন্ন রঙে, ভিন্ন ঢঙে, নেশার বস্তু সমাজে ছড়িয়ে পড়বে। তার সবই সম্পূর্ণরূপে হারাম।’ বর্তমানে সারা বিশ্বে মদ বিভিন্ন নামে কোম্পানির উন্নত লেবেলে বাজারজাত করা হচ্ছে।  আইনগত বৈধতার লেবেল লাগিয়ে, উঠতি বয়সের কলেজ -ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেমেয়েসহ সমাজ ও রাষ্ট্রীয় উচ্চ লেভেলের সবার কাছে অত্যন্ত সমাদৃত, পার্টিগুলোতে এহেন বস্তুর অনুপস্থিতি বেমানান। বিশেষ করে মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজে একটু গোপনীয়তার সঙ্গে উপভোগ্য ও পরিবেশিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোয় হেরোইন, গাঁজা, হাশিশ, আফিম, কোকেন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, প্যাথেডিন, তাড়ি ইত্যাদি মাদকদ্রব্যসহ তামাক জাতীয় সিগারেট, জর্দা, গুল, খইনির ব্যবহার সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে। এ ধরনের মাদকদ্রব্য পানে স্বাস্থ্যও ভেঙে পড়ে। স্নায়ু চেতনা হারিয়ে ফেলে। ফলে এসব বিষাক্ত দ্রব্য পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি সমাজদেহে ব্যাপক পচন ধরিয়ে দেয়।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর