রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
ইতিহাস

রাজস্ব আদায় নীতি

ভারতে প্রাথমিক পর্যায়ের ব্রিটিশ শাসনের মূল বিষয় ছিল রাজস্ব। প্রদেশটিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে এ থেকে কী পরিমাণ রাজস্ব সংগ্রহ করা যায় সে ব্যাপারে ব্রিটিশদের কোনো নিশ্চিত ধারণা ছিল না। ১৭৭২ সালে হেস্টিংস সিদ্ধান্ত নিলেন প্রদেশটি কত বেশি রাজস্ব দিতে পারে সে ব্যাপারে পাঁচ বছরের জন্য রাজস্ব সংগ্রহের অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার। যেখানে জমিদার বা বংশপরম্পরায় রাজস্ব আদায়কারীরা যৎপরোনাস্তি রাজস্ব দিতে স্বীকৃত না হবে সেখানে এতদপেক্ষা অধিকতর রাজস্ব প্রদানে স্বীকৃত ব্যক্তিকে রাজস্ব আদায়ের অধিকার দিতে হবে। এই তথাকথিত ইজারাদারি ব্যবস্থাও ব্যর্থ প্রমাণিত হয়, হেস্টিংসের কাছেও। হেস্টিংসের শাসনামলের বাদবাকি সময় কোম্পানি রাজস্ব নির্ধারণ করত সাম্বর্ষিক ভিত্তিতে এবং চুক্তি হতো সাধারণত জমিদারদের সঙ্গে। সম্পত্তি ও উত্তরাধিকারসংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমা রাজস্ব প্রদানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হওয়ায় ১৭৬৫ সালের পর বাংলার দেওয়ান হিসেবে কোম্পানির ওপর দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি করার দায় বর্তায়। ফৌজদারি বিচারের দায়দায়িত্ব ছিল নবাবের এবং তিনি ইসলামী দন্ডবিধি মোতাবেক ফৌজদারি মামলার বিচার করতেন। হেস্টিংস মনে করতেন দেশীয় ক্ষয়িষ্ণু বিচারব্যবস্থা পুনরুজ্জীবনের জন্য ব্রিটিশ হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি ব্রিটিশ তত্ত্বাবধানে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয়বিধ বিচারালয়ের নতুন স্তর বিন্যাস ঘটালেন। বাংলায় প্রচলিত আইনের আওতায়ই বিচারালয়সমূহের কাজকর্ম পরিচালিত হবে। যেসব ইউরোপীয় বিচারক এসব আইনের প্রয়োগ করবেন তাদের সুবিধার্থে হেস্টিংস এগুলোর অনুবাদ করালেন।

বাংলার গভর্নর হিসেবে হেস্টিংসকে শুধু একটা বিশাল প্রদেশের অভ্যন্তরীণ শাসনই পরিচালনা করতে হয়নি, তাঁকে ভারতীয় বিভিন্ন রাজ্য এবং কখনো কখনো অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তির সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়েছে। ১৭৭০-এর দশকে বাংলার বা মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ের ব্রিটিশ শক্তির পক্ষে মোগল সাম্রাজ্যের উত্তরসূরি হিসেবে নতুন বিকাশ লাভকারী ভারতীয় শক্তিগুলো থেকে নির্লিপ্ত থাকা সম্ভব ছিল না। নতুন জয়ের অভীপ্সা হেস্টিংসের যদিও ছিল না, কিন্তু মৈত্রীচুক্তির মাধ্যমে প্রভাববলয় সম্প্রসারণের অভিলাষ তাঁর অবশ্যই ছিল। ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে মোড় নিচ্ছিল তাতে শান্তির মাধ্যমে প্রভাব বৃদ্ধির সম্ভাবনা খুব কমই ছিল। কোম্পানিকে বারবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর