মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

শাঁখারীবাজার

প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা হোক

বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে ইসলামপুর ও নবাবপুর রোডের সংযোগস্থলের একটি অংশজুড়ে আছে শাঁখারীবাজার। শাঁখারী, শঙ্খচূর্ণ ও সিঁদুর ব্যবসায়ীদের পেশার ওপর ভিত্তি করেই এ স্থানটির নামকরণ। দাক্ষিণাত্যে প্রায় ২ হাজার বছর আগে থেকে এ শিল্পের প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। ঢাকায় বল্লাল সেনের (দ্বাদশ শতক) আমলে শঙ্খশিল্পের প্রচলন হয় বলে অনুমান করা হয়। একসময় পুরান ঢাকার মানুষের প্রধান পেশা ছিল শঙ্খশিল্প। বহু বছর আগ থেকেই ঢাকার শঙ্খবলয় ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি হতো। সপ্তদশ শতকে নেপাল, ভুটান, চীন, বার্মা প্রভৃতি দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ টাকার শাঁখা রপ্তানি হতো বলে জানা যায়। বর্তমানে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী দেশের মধ্যেই বিক্রি হয়। ঢাকার শাঁখারীবাজার শঙ্খ কেনাবেচার প্রধান কেন্দ্র। শাঁখারীবাজারে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করছে। শাঁখারীবাজারে দাঁড়িয়ে আছে বহু জরাজীর্ণ ভবন। তবে কিছু ভবন সংস্কার করা হয়েছে। কোনো কোনো ভবনের বারান্দায় বানর ঝোলার দৃশ্যও বর্তমান। কোনো কোনো বাড়ি ও স্থাপনার বয়স শতবর্ষ পেরিয়ে এখন প্রতœস্থান হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছে। এ এলাকার মানুষের বাসগৃহ, স্থাপত্য নকশা, পেশার ঐতিহ্য নান্দনিক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। যুগের পর যুগ চলতে থাকা এ ডিজাইনের পরিবর্তন না করেই তারা জরাজীর্ণ ভবনগুলো সংস্কার করেছেন। শাঁখারীবাজারকেও সরকার ঐতিহ্যিক এলাকা ঘোষণা করেছিল। প্রতœতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ২০০৯ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চালু হয়। এর আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর সংস্কার, পয়ঃনিষ্কাশনসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করার কথা ছিল। তবে এলাকার বাসিন্দাদের আন্দোলনের মুখে ঐতিহ্য ঘোষণা বাতিল করে সরকার। জাতীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করা উচিত ছিল। ঐতিহ্যবাহী শাঁখারীবাজারকে প্রতœতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা সময়ের দাবি। আমাদের আশা, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জোর পদক্ষেপ নেবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর