শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বাল্যবিয়ের অভিশাপ

সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে

বাল্যবিয়ে নামের অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করার কাজটি যে খুব কঠিন, তা বলাই বাহুল্য। সমাজের অত্যন্ত গভীরে বাসা বেঁধে আছে এ ব্যাধি। তা ছাড়া আইনকানুন ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দুর্বলতা অনস্বীকার্য, পারিবারিক বাধা পর্বতপ্রমাণ। অন্যদিকে বাল্যবিয়ের প্রকোপের মূল কারণ নিহিত রয়েছে বিপুলসংখ্যক পরিবারের মধ্যেই। অভিভাবকরা কৈশোর পেরোনোর আগেই মেয়ে বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন। করোনাভাইরাস মহামারীতে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে ২ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মা-বাবা অনেকটা নীরবে লুকিয়ে কিশোরী মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কিছু বাল্যবিয়ে বন্ধ করা গেলেও বেশির ভাগই আটকানো যাচ্ছে না। শহরের তুলনায় গ্রামেই বাল্যবিয়ের পরিমাণ বেশি। বিশেষ করে দেশের উপকূলীয় ও প্রত্যন্ত জেলা এবং উত্তরাঞ্চলে বেশি ঘটছে বাল্যবিয়ে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দরিদ্র পরিবারের দৈনিক উপার্জন কমে যাওয়া, শহর থেকে অনেক পরিবারের গ্রামে স্থানান্তর, অসচেতনতা, কন্যাসন্তানের ভরণপোষণ ও নিরাপত্তা দিতে না পারা, মহামারীতে কম খরচে অভিভাবকরা যৌতুক ছাড়া সন্তানদের বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন। বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ঘটনার সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। উল্টো চিত্রটি অনেক বড়। দেশের আনাচেকানাচে এখনো বাল্যবিয়ে অব্যাহত আছে; সব খবর সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয় না। কুমিল্লার এক কিশোরী জুনের প্রথম দিকে নিজের বিয়ে ঠেকাতে চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮-এ ফোন দিয়ে সাহায্য চায়। স্থানীয় প্রশাসন তার বাল্যবিয়ে রক্ষা করে। সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ সারা দেশে বিপদে পড়া শিশুদের সাহায্য করে থাকে। প্রতিটি উপজেলায় চাইল্ড হেল্পলাইনের মোবাইল টিম আছে। এ ছাড়া সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এ হেল্পলাইনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাল্যবিয়ে রোধে কাজ করছে। বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বাল্যবিয়ে বন্ধ করার পক্ষে অনুকূল নয়। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর