শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বিয়ে মানবজীবনে পরহেজগারি দান করে

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

বিয়ে মানবজীবনে পরহেজগারি দান করে

ইসলামী সভ্যতা যে কটি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে তার অন্যতম পরিবার। আল কোরআন ও রসুল (সা.)-এর জীবনের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে আদর্শ পারিবারিক জীবন গঠনের খুঁটিনাটি বিস্তারিত নির্দেশনা। পরিবারব্যবস্থা ভেঙে গেলে ইসলাম নামক সভ্যতার বিশাল প্রাচীরটিও হু হু করে ধসে পড়বে। আল্লাহ ভালো করেই জানেন মানবসভ্যতার জন্য পরিবারের বিকল্প নেই। তাই কোরআনে মানুষকে পরিবার গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ। সুরা নুরে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত-সিঙ্গেল আছে তাদের বিয়ে করিয়ে দাও।’ বিয়েহীন সমাজ সুস্থ-সুন্দর-সভ্য নয়। পাশ্চাত্যের বিকৃত জীবনাচারের দিকে তাকালেই তা সহজে বুঝতে পারা যায়। সেখানে মানুষ বিয়েকে বোঝা মনে করে। সন্তান ধারণ ও লালনপালন তাদের দৃষ্টিতে মহাঝামেলা। ফল এই দাঁড়িয়েছে যে, পাশ্চাত্যের সমাজে মানুষ আর মানুষ নেই, তারা হয়ে পড়েছে মানুষবেশী একেকটি রোবট। যত দিন কাজের সামর্থ্য আছে তত দিন সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের মূল্য আছে। কিন্তু যে মুহূর্তে তারা কর্মহীন-অক্ষম হয়ে পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের জায়গা হয় ওল্ডহোম নামক যন্ত্রণার কারাগারে। অথচ ইসলাম বলছে, যখন তোমার বাবা-মা ওল্ডএজে চলে আসবে, তখন তাদের জন্য ভালোবাসার ডানা বিছিয়ে দাও। জীবনের শেষ দিনগুলোও যেন তারা হেসে খেলে অতিবাহিত করতে পারে। বিয়েহীন পাশ্চাত্য সমাজ ও ইসলামী সমাজের মৌলিক পার্থক্য এখানেই। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে শুধু দুনিয়ার কল্যাণ নয়, আখিরাতের অফুরন্ত কল্যাণের চাবিকাঠিও। বিয়েকে ইসলাম ‘ধর্মের অর্ধেক’ বলে ঘোষণা করেছে। ইসলামী সমাজের কোনো সদস্যের যৌক্তিক কারণ ছাড়া বিয়ে থেকে বিরত থাকা নিন্দনীয়। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘বিয়ে হলো আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নত পালন করবে সে যেন আমাকেই ভালোবাসল। আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে।’ বিয়ে মানুষের চোখ সংযত করে, লজ্জাস্থান হেফাজত করে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখ, তারা যেন অতিদ্রুত বিয়ে করে ফেল। বিয়ে চোখ সংযত রাখে, লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে। আর যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই সে যেন রোজা রেখে নিজের চাহিদাকে সংযত করে।’ মুসলিম। বিয়ে পরকীয়া-অবৈধ প্রেমের দুয়ার বন্ধ করে দেয়। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি অন্য নারী দেখে তোমাদের মনে কুধারণা জন্মে, তোমরা তোমাদের স্ত্রীর কাছে যাও, তার সঙ্গে সময় কাটাও তাহলে তোমাদের মন থেকে পাপের ইচ্ছা চলে যাবে।’ মুসলিম। তিনি আরও বলেছেন, ‘স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো বেগানা নারীর প্রতি যদি তোমাদের প্রেম জাগে, তাহলে জানবে এটা শয়তানের কাজ। এমন হলে তোমার স্ত্রীর কাছে যাও এবং তাকে সময় দাও, সে তোমার কামনা-বাসনা পূরণের জন্য বৈধ সঙ্গী।’ মুসলিম।

বিয়ের মাধ্যমে দীনের অর্ধেক পূর্ণ হয়ে যায়। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি বিয়ে করে তাহলে ধর্মের অর্ধেক দায়িত্ব পালন করা তার জন্য সহজ হয়ে গেল। সে যেন বাকি অর্ধেক দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতন থাকে।’ মিশকাতুল মাসাবিহ বর্ণিত এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, মানুষ যত ধরনের গুনাহ করে তার অর্ধেক হলো যৌনতাকেন্দ্রিক গুনাহ। বিয়ে মানুষকে এসব গুনাহ থেকে দূরে রাখে। ফলে তার জন্য জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ হয়ে যায়। বিয়ে করলে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহর দায়িত্ব- ১. যে দাস তার মনিবের সঙ্গে মুক্তির জন্য চুক্তি করেছে, আল্লাহ তাকে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী করে তোলেন। ২. যে ব্যক্তি গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য বিয়ে করেছে, আল্লাহ তাকে গুনাহ থেকে হেফাজত করেন  এবং ৩. যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করছে, আল্লাহ তাকে বিজয় দান করেন।’ নাসায়ি।

বিয়ে উম্মতের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রেমময় ও সুস্থ দেহের নারী বিয়ে কর। যেন বেশি সন্তান জন্ম দিতে পারে। কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মতের সংখ্যাধিক্যের কারণে অন্য নবীর সামনে গর্ব করব।’ আদাবুজ জিফাফ।

লেখক : মুফাসসিরে কুরআন।

সর্বশেষ খবর