সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পিঁয়াজপুরাণ ও সম্রাট নিরোর কথকতা

সাইফুর রহমান

পিঁয়াজপুরাণ ও সম্রাট নিরোর কথকতা

গত বছর পিঁয়াজের দাম বেড়ে যখন আকাশচুম্বী সে সময় কুমিল্লার কোনো এক অঞ্চলে বিয়েবাড়িতে উপহার -স্বরূপ দেওয়া হয় ৫ কেজি পিঁয়াজ। সে সময় প্রতি কেজির দাম ২০০ টাকা হলে ৫ কেজির দাম পড়ে ১ হাজার টাকা। বিয়ের উপহার হিসেবে নেহায়েত মন্দ নয়। খবরটা বেশ বিদ্রূপের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল কয়েকটা পত্রিকায়। খবরটা পড়ে আমি নিজেও বেশ রোমাঞ্চিত বোধ করছিলাম। ইতিহাসের কি অভিনব পুনরাবৃত্তি!!! বেশ কিছু রোমান ইতিহাসবিদ লিখেছেন মধ্যযুগে রোমান সাম্রাজ্যে পিঁয়াজের বহুমুখী ব্যবহারের কথা। বিশেষ করে সে সময় পিঁয়াজ ব্যবহৃত হতো মাথা ধরা, সাপের কামড় ও মাথার চুল গজানোর ওষুধ হিসেবে। রোমান সাম্রাজ্যের অধিবাসীরা বিভিন্ন ধরনের কর ও ভাড়া পরিশোধ করতে পারত মুদ্রার পরিবর্তে পিঁয়াজ দিয়ে। এ ছাড়া বিয়েতে উপহার দেওয়া হতো পিঁয়াজ। ২৩ খ্রিস্টাব্দের দিকে ইতালির পম্পেই নগরীতে একজন ইতিহাসবিদ জন্মেছিলেন তার নাম প্লিনি দ্য এলডার। তিনিও লিখেছেন- শক্তি বাড়াতে, মুখের ঘা শুকাতে, দাঁতের ব্যথা উপশমে কিংবা কুকুরের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হতো পিঁয়াজ আর রোমানদের হাত ধরেই পিঁয়াজ ছড়িয়ে পড়েছিল ইউরোপজুড়ে। রোমানদের রোজকার খাবারের সঙ্গে পিঁয়াজ থাকতই। শাসনের উদ্দেশ্যে যখন তারা স্পেন, ফ্রান্স, ব্রিটানিয়া, রোমানিয়া কিংবা জার্মানি যেখানেই গেছে সঙ্গে করে নিয়ে গেছে পিঁয়াজ।

খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে লেখা হয় ইতিহাসে প্রথম রান্নার বই ‘এপিসিয়াস’, যার সূত্র ধরে জানা যায়, সে মধ্যযুগেই সাধারণ মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যে চিরকালের জন্য ঢুকে পড়েছিল তিনটি সবজি- বিনস, বাঁধাকপি আর পিঁয়াজ। তবে রোমানদের মধ্যে পিঁয়াজপ্রেমী হিসেবে সম্রাট নিরোকে বোধকরি কেউ টেক্কা দিতে পারেনি। সম্রাট নিরো শরীর ঠান্ডা রাখতে প্রায়ই পিঁয়াজের মন্ড সমস্ত শরীরে মেখে শুয়ে থাকতেন।

গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই ট্রল করেছেন পিঁয়াজ নিয়ে। সেসব ট্রলের মধ্যে একটিতে দেখা যায়- একজন ভদ্রমহিলা পিঁয়াজ দিয়ে নেকলেস বানিয়ে সেটা সযত্নে তুলে রাখছেন আলমারিতে। ট্রলটি দেখার পর আমার মনে পড়ে গিয়েছিল মিসরের রাজা চতুর্থ রামেসিসের কথা, যিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন ১১৬০ খ্রিস্টপূর্বে। উনিশ শতকে যখন তার সমাধিস্থল আবিষ্কৃৃত হয় তখন দেখা যায় কবর দেওয়ার সময় পিঁয়াজ দিয়ে নেকলেস বানিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার গলায়। তার চোখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে সাঁটা আছে পিঁয়াজ। মিসরীয় সভ্যতায় অন্য অনেক বস্তুর মতো পিঁয়াজকেও উপাসনা করা হতো। ফারাওদের কবর দেওয়ার সময় সঙ্গে দেওয়া হতো প্রচুর পিঁয়াজ। ইতিহাসবিদদের মতে সে সময় মিসরীয়রা বিশ্বাস করত পিঁয়াজের তীব্র গন্ধ ও জাদুকরী ক্ষমতা মৃতদের পুনরায় নিঃশ্বাস নিতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া তারা পিঁয়াজের অসংখ্য পরতের মধ্যে চিরন্তন জীবন চক্রের মিল খুঁজে পেত। তাই পিরামিডের ভিতরের দেয়ালে পিঁয়াজের ছবি আঁকা থাকত। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় বিখ্যাত জার্মান লেখক গুন্টার গ্রাসের আত্মজীবনীর কথা। গুন্টার গ্রাসের আত্মজীবনীর নাম ‘পিলিং দ্য অনিয়ন’ অর্থাৎ ‘খোসা ছাড়ানো পিঁয়াজ’। পবিত্র বাইবেলেও পিঁয়াজ খাওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়- ইসরায়েলের সন্তানসন্ততির ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করে ইহুদিরা মিসর থেকে বিতাড়িত হওয়ার আগে উন্মুক্ত পরিবেশে মাছ খেতে পারত। তারা আরও খেত শসা, তরমুজ, পিঁয়াজপাতা, পিঁয়াজ ও রসুন। প্রাচীন মিসরীয় ও রোমানরা যখন পিঁয়াজের গুণকীর্তনে মশগুল তখন গ্রিকরাও কিন্তু এর মাহাত্ম্য বিচারে পিছিয়ে ছিল না। গ্রিকরাও পিঁয়াজের গুণাগুণ সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত ছিল। এর প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় ইতিহাসখ্যাত দিগ্গজ বীর আলেকজান্ডারের পোলাওপ্রীতি বিষয়ে। পোলাও ছিল আলেকজান্ডারের প্রিয় অন্ন। পোলাও শব্দটির উদ্ভব কিন্তু হয়েছে পলান্ডু শব্দ থেকে আর পলান্ডু অর্থ হচ্ছে পিঁয়াজ। আলেকজান্ডারের জীবনকাহিনিতে শ্বশুরবাড়ির খাতিরদারির কথা লেখা আছে। তিনি যখন ব্যাকট্রিয়ায় (বর্তমানে ইরান, স্ত্রী রোক্সানার জন্মস্থান) যান, পোলাও খাইয়ে তাকে আপ্যায়ন করা হয়। অন্য গল্প বলে, আলেকজান্ডার মারকান্দা (বর্তমান সমরকন্দ) জিতে নেওয়ার পর তাঁর জন্য যে রাজভোজের আয়োজন করা হয়, সেখানে পোলাও পরিবেশন করা হয়। সৈন্যদলের লোকেরা সেখান থেকে পোলাও রান্নার আদবকায়দা শিখে দেশে ফিরে ম্যাসিডোনিয়ায় পোলাও খাবারটি চালু করেছিল। তবে পোলাও রান্নার কলাকৌশল প্রথম লিপিবদ্ধ করেন পারস্যের বিখ্যাত চিকিৎসক, গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও দার্শনিক ইবনে সিনা।

তবে গ্রিকদের পিঁয়াজপ্রীতি বহুগুণ বেড়ে যেত অলিম্পিকের সময়। প্রতিযোগীরা সের সের পিঁয়াজ খেত, লিটার লিটার পিঁয়াজের রস গলায় ঢালত, সারা শরীরে পিঁয়াজের রস মাখত। তাদের ধারণা ছিল, পিঁয়াজ শরীরের গাঁট শক্তপোক্ত করে আর ব্যথা-বেদনা তাড়ায়। পিঁয়াজ যে সত্যি সত্যি পিপাসা নিবারণে ভূমিকা রাখে তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ আমরা পাই পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত লেখক অবধূতের লেখা বাংলা সাহিত্যে অসামান্য জনপ্রিয় একটি উপন্যাস ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’-এ। উপন্যাসটি একদল তীর্থযাত্রীর করাচি থেকে বেলুচিস্তানের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত মহাপীঠ হিংলাজে যাওয়ার বিবরণ। দুর্গম মরুভূমির পথে এদের যাত্রার সময় দেখা যায় মরুভূমিতে চলার পথে যাতে তেষ্টা না লাগে সেজন্য দলের প্রতিটি সদস্য চিবিয়ে খাচ্ছে হালি হালি পিঁয়াজ।

প্রাচীন গ্রিক, রোমান কিংবা মিসরীয়দের মধ্যে পিঁয়াজ যথেষ্ট জনপ্রিয় হলেও ভারতবর্ষের চিত্রটি ছিল একেবারে উল্টো। বেদ, উপনিষদ কোথাও পিঁয়াজের উল্লেখ নেই। কারণ পিঁয়াজ ছিল ‘যবন ও ম্লেচ্ছদের খাবার’। লোকে বিশ্বাস করত পিঁয়াজ আর রসুনে জৈবিক উত্তেজনা বাড়ে। সেজন্য ছাত্র ও বিধবাদের কাছে পিঁয়াজ ছিল একেবারে নিষিদ্ধ। ভারতবর্ষে পিঁয়াজের চল একেবারে ছিল না বললেই চলে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৬০০ অব্দে চরকসংহিতা ভেষজ ওষুধ হিসেবে প্রথম পিঁয়াজের গুণকীর্তন করেন। চরক তাঁর আয়ুর্বেদ বইয়ে পিঁয়াজের গুণের কথা লেখেন। চরকসংহিতা পিঁয়াজের গুণগান করলেও সে সময় ভারতবর্ষে পিঁয়াজ ততটা জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। আর তার পরিচয় পাওয়া যায় চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়েনের ভ্রমণবৃত্তান্তে। তাঁর ভারত ভ্রমণের সময় সারা দেশে কোথাও পিঁয়াজের ব্যবহার দেখেননি। আর আরেক চৈনিক পর্যটক হিউয়েন-সাঙ যদিও বা পিঁয়াজের ব্যবহার দেখেছিলেন, সঙ্গে এও লক্ষ্য করেছিলেন, যারা পিঁয়াজ খেত তাদের শহরের পাঁচিলের বাইরে নির্বাসন দেওয়া হতো।

ভারতে পিঁয়াজ জাতে উঠেছিল সুলতানি ও মোগল আমলে। বিশেষ করে মুসলমানদের হাত ধরে। যদিও ইসলামে পিঁয়াজের সুখ্যাতি নেই বরং কিছুটা নেতিবাচক ইঙ্গিতই পাওয়া যায়। তবে বলাই বাহুল্য, তা কাঁচা পিঁয়াজ খাওয়ার ক্ষেত্রে। রান্না করা পিঁয়াজে নয়। যেমন হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রসুন কিংবা পিঁয়াজ খাবে, সে যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে। অথবা তিনি বলেছেন, সে যেন আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং নিজ বাড়িতে বসে থাকে।’ হজরত ওমর (রা.) একদা জুমার খুতবায় বলেছিলেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা দুটি গাছ খেয়ে থাকো। আমি ওই দুটিকে কদর্য ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। সে দুটি হচ্ছে পিঁয়াজ ও রসুন। কেননা আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখেছি, কারও মুখ থেকে তিনি এ দুটির গন্ধ পেলে তাকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিতেন।’ সুলতান ও মোগলদের হাতেই পিঁয়াজের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছিল ভারতবর্ষে। ইবনে বতুতার লেখায় আছে, ত্রয়োদশ শতকে দিল্লির সুলতানের দরবারে ভাজা পিঁয়াজের পুর দেওয়া সমুচা খুব জনপ্রিয় ছিল। আর ‘আইন-ই আকবরি’-তে লেখা সব পদেই পিঁয়াজের ছড়াছড়ি। এখান থেকেই ধাপে ধাপে পিঁয়াজ এ দেশের সাধারণ মানুষের হেঁশেলে ঢুকে পড়ল। কিংবদন্তি বলে, সমুচা ভারতবর্ষে প্রথম আসে ত্রয়োদশ কি চতুর্দশ শতাব্দীতে ইরানি ব্যবসায়ীদের হাত ধরে। তারা দেশের চারদিকে ব্যবসার জন্য ঘুরে বেড়াত। সারা দিন পথ চলে সন্ধ্যাবেলায় কোনো সরাইখানায় থামত রাত কাটানোর জন্য। আর সে রাতের বেলায়ই পিঁয়াজ ও মাংসের পুর দেওয়া, কড়া করে ভাজা সমুচা সাবধানে থলেতে মুড়ে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে ঝুলিয়ে রাখত। পরদিন পথের মধ্যাহ্নভোজনটা হয়ে যেত এ খাবারে। দিল্লির সুলতানদের রাজকবি আমির খসরু লিখেছেন ১৩০০ সালের আশপাশে, মাংস, ঘি আর পিঁয়াজ দিয়ে তৈরি সমুচা রাজকুমার ও তাদের পর্ষদরা কি ভীষণ উপভোগ করে খেতেন। সুনির্দিষ্ট করে আমি একজনকেই জানি যিনি পিঁয়াজ-রসুন এসব খান না। তাও আবার তিনি বাংলাদেশের মানুষ নন। পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় সম্পূর্ণভাবে শাকাহারি একজন মানুষ। মাছ, মাংস, ডিম এমনকি পিঁয়াজ-রসুনও তার হেঁশেলে স্থান পায় না। তাঁর সঙ্গে আমার বেশ সখ্য রয়েছে। তিনিই একদিন আলাপচারিতায় আমাকে বলেছিলেন ৩০ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণরূপে শাকাহারি হয়ে যান। শীর্ষেন্দুদার কাছে আমি কৃতজ্ঞ এজন্য যে, তিনি আমার গল্প সংকলন ‘মরিচপোড়া’র জন্য সুন্দর একটি ভূমিকা লিখে দিয়েছেন। সে যাই হোক। বিগত কয়েকদিন ধরেই পিঁয়াজের দাম ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি কেজি পিঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। পত্রিকাগুলো থেকে জানা যাচ্ছে ‘পিঁয়াজ নিয়ে কঠোর অবস্থানে সরকার’। পাঠকদের মনে একটি প্রশ্ন স্বভাবতই জাগতে পারে- সত্যি কি বাংলাদেশে পিঁয়াজের সংকট রয়েছে? নাকি একশ্রেণির ফড়িয়া, দালাল ও সিন্ডিকেট কারসাজি করে পিঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে দেশে বছরে ২২ লাখ টন পিঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে গত মৌসুমে পিঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বিদেশ থেকে আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার টন পিঁয়াজ। গত মৌসুম থেকে এখন পর্যন্ত পিঁয়াজের জোগান এসেছে ২৪ লাখ ২২ হাজার টন। এ পরিমাণ পিঁয়াজ আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত খাওয়ার পরও ২ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকার কথা।

বাংলাদেশ প্রতি বছর ভারত থেকে পিঁয়াজ আমদানি করে। ভারতেও মাঝেমধ্যে পিঁয়াজ সংকট হয় এবং সে সংকট কাটাতে তারা ইরান, ওমান, আবুধাবি প্রভৃতি দেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানি করে। গত মৌসুমে ভারতের সর্ববৃহৎ পিঁয়াজ উৎপাদিত অঞ্চল মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশ ও উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা প্রভৃতি অঞ্চলে আশানুরূপ পিঁয়াজ উৎপাদিত হয়নি। আর সেসব সংবাদ ভারতের পত্রপত্রিকাগুলো কিন্তু ঠিকই ফলাও করে প্রচার করেছে। আমাদের দেশের পিঁয়াজ আমদানিকারক ও সিন্ডিকেট চক্রের সেসব সংবাদ নিশ্চয়ই অজানা থাকার কথা নয়। তারা অনেক আগে থেকেই জানতেন, ভারতে পিঁয়াজ সংকটের নেতিবাচক প্রভাব ঠিকই পড়বে বাংলাদেশের বাজারে এবং সেটাই হয়েছে। ২ লাখ টন পিঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকার পরও ভোক্তাদের গত বছর প্রতি কেজি পিঁয়াজ কিনতে গুনতে হয়েছে ১০০ টাকার বেশি। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে পিঁয়াজ সংকট গত বছরের মতোই হতে যাচ্ছে। অতীতে একাধিকবার পিঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভারতের রাজনীতিতে কপাল পুড়েছে বিভিন্ন সরকারের। ১৯৯৮ সালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর তখতে সুষমা স্বরাজের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফিরতে না পারার অন্যতম কারণ ছিল পিঁয়াজ। ২০১০ সালেও পিঁয়াজের চড়া দর নিয়ে দেশজুড়ে ক্ষোভের মুখে পড়েছিল মনমোহন সিংহের সরকার। তখনো রপ্তানি বন্ধ করতে হয়েছিল। কিন্তু পরে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, দাম বৃদ্ধির মূল কারণ ছিল মজুদদারি, কালোবাজারি। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০১৪ সালের মে মাসে বিজেপি যখন প্রথম ক্ষমতায় আসে তখন সে মাসেই মোদি সরকার জনরোষ এড়াতে পিঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা পিঁয়াজ রপ্তানি সীমিত করে দেয় এবং প্রয়োজনে বিদেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানির প্রস্তাব পাস করে।

লেখক : গল্পকার ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।

ই-মেইল :  [email protected]

সর্বশেষ খবর