বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পবিত্র মক্কা নগরীর মর্যাদা

নূর মুহাম্মদ রাহমানী

মক্কা-মদিনা বললেই যেন হৃদয়ে শিহরণ জেগে ওঠে। মনে এক স্পন্দন দোলা দেয়। কী যেন মধুর আমেজ সৃষ্টি হয়। এক অদৃশ্য আকর্ষণ যেন মক্কা-মদিনার দিকে নিয়ে যায়। পৃথিবীতে যত স্থান আছে তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম স্থান হলো মক্কা-মদিনা। এ শহরে অবস্থিত পবিত্র মাসজিদুল হারাম। এটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম নির্মিত মসজিদ। হজরত আবু জর গিফারি (রা.)-এর বর্ণনা- ‘আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসুল! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে? তিনি বললেন মাসজিদুল হারাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন মাসজিদুল আকসা।’ বুখারি। এ মসজিদে এক রাকাত নামাজের সওয়াব এক লাখ রাকাতের সমপরিমাণ। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার এ মসজিদে (মসজিদে নববী) এক রাকাত নামাজ আদায় করা মাসজিদুল হারাম ছাড়া অন্য যে কোনো মসজিদে এক হাজার রাকাত নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম, আর মাসজিদুল হারামে এক রাকাত নামাজ আদায় করা মসজিদে নববী ছাড়া অন্য যে কোনো মসজিদে এক লাখ রাকাত নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম।’ মুসনাদে আহমদ।

এ শহর অন্যান্য শহরের মতো নয় যে, সেখানে যা ইচ্ছা তাই করা যাবে। এর রয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদা। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা এ শহরের জন্য হারাম করে দিয়েছেন (সম্মানিত করেছেন) না এ হারামের পাতা কাটা যাবে, না শিকারি দেখানো যাবে, না পড়ে যাওয়া বস্তু কুড়ানো যাবে, তবে যে হারানো বস্তুর ঘোষণা দেবে সে ছাড়া।’ বুখারি। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা এ শহরকে হারাম করে দিয়েছেন যখন থেকে তিনি আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন। এ নগরী হারাম থাকবে আল্লাহর হারাম করার দ্বারা কিয়ামত পর্যন্ত। আমার আগে কারও জন্য এখানে যুদ্ধ করা বৈধ ছিল না। আমার জন্যও বৈধ নয়, তবে দিনের কিছু সময় বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। এখন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত তা হারাম হিসেবে থাকবে।’ মুসলিম। উল্লিখিত হাদিসে হারাম অর্থ সম্মান, অর্থাৎ মক্কা হারামের সীমানা সৃষ্টির প্রথম থেকে সম্মানিত। তাতে কোনো ধরনের পাপের কাজ করা যাবে না।

পবিত্র মক্কা জ্ঞানের শহর। এটা এমন এক বরকতময় শহরের নাম যেখান থেকে ইসলামের আলো প্রজ্বালিত হয়েছিল এবং সেখানেই এসে শেষ হবে। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘স্বল্পসংখ্যক ও অপরিচিত অবস্থায় ইসলামের সূচনা হয়েছিল, অচিরেই তা আবার সূচনালগ্নের মতো গরিবি অবস্থায় ফিরে আসবে এবং তা উভয় মসজিদের (মক্কা ও মদিনার) মধ্যবর্তী এলাকায় গুটিয়ে আসবে যেমন সাপ তার গর্তের দিকে গুটিয়ে আসে।’ মুসলিম। আরেক হাদিসে তো ইমান মদিনার দিকে ফিরে আসবে বলা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই (কিয়ামতের পূর্বক্ষণে) ইমান মদিনার দিকে এমনভাবে প্রত্যাবর্তন করবে, যেমন সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে।’ বুখারি।

পবিত্র এ শহরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী দাজ্জাল ঢুকতে পারবে না। তার নৈরাজ্য ও অরাজকতা থেকে মক্কা নগরী নিরাপদ থাকবে। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘এমন কোনো শহর নেই, যেখানে দাজ্জাল প্রবেশ করবে না, তবে মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারা ছাড়া।’

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ।

সর্বশেষ খবর