বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজনীতির কাছে টানা দূরে ঠেলা

মহিউদ্দিন খান মোহন

রাজনীতির কাছে টানা দূরে ঠেলা

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি ‘শ্রীকান্ত’। চার পর্বের এ উপন্যাসের প্রথম পর্বের একেবারে শেষ পর্যায়ে রাজলক্ষ্মীর কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় শ্রীকান্তের স্বগতোক্তি - ‘বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, তাহা দূরেও ঠেলিয়া ফেলে।’ বুঝতে অসুবিধার কথা নয়, প্রেম সম্পর্কে নিজের উপলব্ধিকেই শরৎচন্দ্র তাঁর উপন্যাসের নায়ক শ্রীকান্তের মুখে উচ্চারণ করিয়েছেন। প্রেম নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা হয়েছে কিনা জানি না। তাই কোনটা বড় প্রেম আর কোনটা ছোট তার কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে প্রেমের কারণে দুজন মানুষের কাছে আসা, আবার দূরে সরে যাওয়ার ঘটনা হামেশাই আমরা ঘটতে দেখি। এ সরে যাওয়াকে বলে বিচ্ছেদ। আর এ বিচ্ছেদ অনেক সময় মর্মন্তুদ ঘটনারও জন্ম দেয়। আজকালকার ছেলেমেয়েরা অবশ্য বিচ্ছেদকে বলে ‘ব্রেকআপ’। গল্প-উপন্যাসে পড়া লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ কিংবা চ-ীদাস-রজকিনির প্রেম আর এখন নেই। এখন শুক্রবারে প্রেম হয়, শনিবারে মান-অভিমান আর রবিবারে সম্পর্ক শেষ। এ ধরনের প্রেমকে ছেলেপিলেরা বলে ডিজিটাল প্রেম। ডিজিট টিপে সম্পর্ক, ডিজিট টিপেই তার ইতি।

না, সহৃদয় পাঠক! প্রেম নিয়ে গবেষণার জন্য এ নিবন্ধ নয়। আমার লেখার বিষয়বস্তু রাজনীতি। প্রেমের মতো রাজনীতিতেও কাছে টানা আর দূরে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। রাজনীতি একটি অদ্ভুত ক্রিয়া। এখানে কে যে কখন কার বন্ধু কিংবা শত্রুতে পরিণত হবে তার নিশ্চয়তা একেবারেই নেই। আর সম্ভবত এ কারণেই ওই আপ্তবাক্যটির প্রচলন- ‘রাজনীতিতে চিরবন্ধু চিরশত্রু নেই’। রাজনীতির একসময়ের মাঠকর্মী হিসেবে এ ক্রিয়াটিকে আমার রাসায়নিক বিক্রিয়ার মতো মনে হয়। দুটি রাসায়নিক দ্রব্য যেমন নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করে নতুন একটি যৌগ পদার্থের সৃষ্টি করে বা বিভাজনের মাধ্যমে একাধিক মৌলিক পদার্থের জন্ম দেয়, তেমন রাজনীতিতেও দুই বা ততোধিক শক্তি একত্রিত হয়ে নতুন একটি শক্তির জন্ম দিতে পারে, আবার বিভেদও সৃষ্টি করতে পারে। যেমন সোডিয়াম কার্বনেট ও হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় সোডিয়াম ক্লোরাইড ও হাইড্রোজেন। আবার পানিকে যদি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথক করা হয়, তাহলে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন নামের সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুটি গ্যাসের উৎপত্তি হয়। অক্সিজেনের ধর্ম নিজে জ্বলা নয়, অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করা। আর হাইড্রোজেনের কাউকে পোড়ানোর ক্ষমতা নেই, সে নিজেই পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর মতের মিল হলে নতুন শক্তির উদ্ভব ঘটতে পারে, আবার অন্যরকম বিক্রিয়ায় তারা বিভক্ত হতে পারে।

রাজনীতি একজন মানুষকে খুব সহজেই অন্য মানুষের একেবারে নিঃশ্বাসের দূরত্বের কাছে নিয়ে যেতে পারে। আবার সহজেই ঠেলে নিয়ে যেতে পারে যোজন যোজন দূরে। মতাদর্শগত সাজুয্য কিংবা স্বার্থগত মিলের কারণে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী হয়ে উঠতে পারে একে অন্যের বন্ধু। এক চিন্তা, এক ভাবনা, এক লক্ষ্য একসময়ের দূরের লোকটিকেও একান্ত কাছের করে তোলে। তেমনি মতাদর্শগত বৈপরীত্য ও গোষ্ঠীগত স্বার্থের দ্বন্দ্ব কাছের মানুষের সঙ্গেও তৈরি করতে পারে বিস্তর ব্যবধান। রাজনৈতিক কারণে পর যেমন আপন হয়, তেমন আপনও পর হয়ে যায়। একই পরিবারের দুই ভাই দুই আদর্শের সমর্থক হওয়ায় বৈরী সম্পর্কের নজির তো আমাদের দেশে কম নেই। রংপুরের ভরসা পরিবারের দুই ভাই করিমউদ্দিন ভরসা ও রহিমউদ্দিন ভরসা আজীবন রাজনীতির বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেছেন। তবে রাজনৈতিক বৈরিতা তাদের পারিবারিক বন্ধনে চিড় ধরাতে পেরেছিল কিনা আমার জানা নেই।

রাজনীতির একটি অমোঘ নিয়ম হলো, বিশেষ একটি ইস্যুতে সমমনা দলগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা। বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের দেশের নিকট অতীতের দিকে তাকালেই এর দৃষ্টান্ত মিলবে। ১৯৮২ সালে সেনাপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পর তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ প্রথম দিকে উল্লসিত হয়ে উঠেছিল। সে সময় তারা হয়তো ‘শত্রুর শত্রু বন্ধু’- এ তত্ত্ব মাথায় রেখেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত তাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য করে। তাই তো আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে দেখা গেছে এরশাদ পতনের এক দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দেলনে। সে আন্দোলনে সফলতা এলো। স্বৈরশাসক বিদায় নিল। দেশে গণতন্ত্র ফিরে এলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপির বন্ধুত্ব বেশিদিন টিকল না। দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থের নিগড়ে বন্দী হয়ে তারা পরস্পর থেকে দূরে সরে গেল। সবচেয়ে অবাক কান্ড, যে স্বৈরশাসককে হটাতে দুই দল একে অন্যের হাতে হাত রেখে আন্দোলন করেছিল, সেই স্বৈরশাসকের দলকে কাছে পেতে তাদের প্রতিযোগিতা। শুধু তাই নয়, ১৯৮২ থেকে ’৯০ পর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথচলা বিএনপি-আওয়ামী লীগ অবতীর্ণ হলো পরস্পরের শত্রুর ভূমিকায়। নব্বইয়ে যে স্বৈরাচারকে হটাতে আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করেছিল, ১৯৯৬ ও ২০০৬-এ এসে বিএনপি পতনের আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সারথি হলো সেই স্বৈরশাসকের দল জাতীয় পার্টি। বিএনপিও এরশাদকে কাছে পাওয়ার জন্য যারপরনাই চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি। রাজনৈতিক স্বার্থে একসময়ের বন্ধুকে দূরে ঠেলে দিয়ে শত্রুকে আলিঙ্গন করার এই যে মানসিকতা তাকে রাজনীতির কোন সংজ্ঞায় ফেলা যায়? অনেকেই বলবেন রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। হয়তো তাই ঠিক। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থ নির্ধারিত হয়। ফলে সময়ে সময়ে তাদের শত্রু-মিত্র পরিবর্তিত হবে এটাই স্বাভাবিক!

রাজনীতি মানুষকে আপনজনের কাছ থেকেও দূরে সরিয়ে দেয়। আবার দূরের মানুষকেও আপন করে নিতে সাহায্য করে। রাজনীতির কারণে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়, আবার অনাত্মীয়রা হয়ে ওঠে পরমাত্মীয়। রাজনৈতিক কারণে ব্যক্তিগত সম্পর্কেও প্রভাব পড়ে। আজকাল বিপরীতমুখী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক বিরল হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, একই দলের প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের মধ্যেও সুসম্পর্ক খুঁজে পাওয়া কঠিন। দলীয় কিংবা ব্যক্তি স্বার্থে তারা একে অন্যকে ঘায়েল করতে নিকৃষ্টতম পন্থা অবলম্বনেও পিছপা হয় না। আগে কিন্তু এমনটি ছিল না। আমাদের রাজনীতির যাঁরা পূর্বপুরুষ, তাঁরা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস করলেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক কখনো খারাপ হতে দেননি। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তাঁদের দুজনের সম্পর্ক ছিল পিতা-পুত্রের মতো। মওলানা ভাসানী বঙ্গবন্ধুকে যেমন অকৃত্রিম স্নেহে বুকে টেনে নিতেন, তেমন বঙ্গবন্ধুও মওলানা ভাসানীকে পিতার মতো শ্রদ্ধা করতেন। তাঁদের মধ্যেও রাজনৈতিক মতপার্থক্য ছিল। কোনো কোনো ইস্যুতে তাঁরা এতটাই কঠোর অবস্থানে যেতেন যে, পরস্পরকে কঠিন ভাষায় আক্রমণেও দ্বিধা করতেন না। ১৯৭৪ সালে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মজলুম জননেতা ঢাকায় গণভবন অভিমুখে ভুখামিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান লোক পাঠিয়ে পিতৃতুল্য মওলানাকে গণভবনে নিয়ে সযতেœ স্যান্ডউইচ খাইয়ে দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। সে সময়ের পত্রিকাগুলোয় সেই সচিত্র খবর প্রকাশিত হয়েছিল। আবার একই সময়ে সরকারের নীতির প্রতিবাদ করায় মওলানা ভাসানীকে তাঁর টাঙ্গাইলের সন্তোষস্থ বাড়িতে নজরবন্দিও থাকতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের সরকার আমলে গৃহবন্দী থাকার পরও মওলানা ভাসানী ব্যক্তিগতভাবে রুষ্ট হননি তাঁর ওপর। শুধু তাই নয়, আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতাকারী মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর খান ও শাহ আজিজুর রহমানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সুসম্পর্কের কথা কার অজানা? উল্লেখ্য, শাহ অজিজুর রহমানও একসময় আওয়ামী লীগ করতেন। সেখান থেকেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বিপরীত রাজনৈতিক মেরুর লোকদের বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এখন আর সে রকম দেখা যায় না। রাজনীতি এখন যেন একটি বিভাজন রেখায় পরিণত হয়েছে। সমাজকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। বিএনপির দাওয়াতে আওয়ামী লীগ যায় না, আবার আওয়ামী লীগের দাওয়াত বিএনপি নেতারা এড়িয়ে চলেন। সামাজিক সম্পর্কও এখন রাজনীতির ব্যারোমিটারের নিরিখে নির্ণীত হয়। সমদলীয় না হলে নেতারা পুত্র-কন্যার বিয়ে দিতেও অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। এ বিভাজন যে আমাদের সমাজজীবনে কতটা মারাত্মক বিষবৃক্ষের জন্ম দিচ্ছে আমরা কিন্তু তা একবারও ভেবে দেখছি না।

এবার আসা যাক নেতা ও জনগণের সম্পর্কের আলোচনায়। এ দুয়ের মধ্যকার সম্পর্ক কি প্রেম-ভালোবাসার? বলা যায় হ্যাঁ। নেতা জনগণকে ভালোবাসবেন, জনগণও নেতাকে ভালোবাসবে। নেতা ও জনগণের মধ্যে এই যে প্রেম, তা কিন্তু স্বার্থবিবর্জিত নয়। নেতার স্বার্থ জনসমর্থন তাকে ক্ষমতা পেতে সাহায্য করবে, আর জনগণের স্বার্থ নেতা তাদের ভালোমন্দের দেখভাল করবেন। অনেকটা ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ ধরনের। জনগণ নেতার কাছ থেকে যা প্রত্যাশা করে তা যদি পূরণ না হয় তাহলে নেতার সঙ্গে জনগণের সম্পর্কে ফাটল ধরবেই। যে নেতা তার কথাবার্তায় গণমানুষের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরতে পারেন, তাদের মনে আশার আলো জ্বালাতে পারেন, তিনিই পরিণত হন গণমানুষের নেতায়। আবার যখন তিনি ক্ষমতায় আসেন, কিন্তু জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেন না বা তাদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হন, তখনই জনগণের সঙ্গে তার দূরত্বের দেয়াল সৃষ্টি হয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, একসময় যে নেতা জনগণ কর্তৃক বিপুলভাবে সমর্থিত হয়েছেন, শ্রদ্ধা-ভালোবাসার বারিধারায় সিক্ত হয়েছেন, পরে ভুল রাজনীতি অথবা কোনো পক্ষের রাজনৈতিক কূটচালের কারণে জনগণের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন। তবে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখার ক্ষেত্রে নেতার দায়ই বেশি। তাকে সব সময় জনচাহিদার দিকে খেয়াল রাখতে হয়। জনগণের ভালোবাসার মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ রাজনীতিকরা সময়ের স্রোতের টানে হারিয়ে যেতে বাধ্য। রাজনীতির এই কাছে টানা দূরে ঠেলার বিষয়টি সম্পর্কে যেসব রাজনীতিক সচেতন ও সতর্ক থাকেন তারা চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও টিকে থাকেন। কেননা তাদের কর্মগুণ জনসাধারণের কাছে তাদের নিকটজন হিসেবে চিহ্নিত করে। আর জনসাধারণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো, তারা তাদের আপনজনকে কখনই দূরে ঠেলে দেয় না।

আমাদের রাজনীতিতে বর্তমানে অবক্ষয়ের ধারা চলছে বা পচন ধরেছে- এমন অভিযোগ অনেকেরই। কেউ কেউ রসিকতা করেন, ‘রাজনীতি আর রাজনীতি নাই। এর মধ্যে পলিটিক্স ঢুকে গেছে’। রাজনীতিতে পলিটিক্স ঢুকেছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক করে লাভ নেই। লক্ষণীয় হলো, এখানে পলিটিক্সকে নেতিবাচক অর্থে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ দুটো শব্দ একই অর্থবোধক। তবে অস্বীকার করা যাবে না, আমাদের রাজনীতি তার অতীত ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। খুব স্বল্পসংখ্যক মানুষই এখন জনসেবার উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতিতে আসেন। বেশির ভাগ মানুষ রাজনীতিকে নিজের ভাগ্য গড়ার অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করেন। রাজনীতির মাঠে কোনোমতে দাঁড়ানোর একটু সুযোগ করে নিতে পারলে তাদের বিত্ত-বৈভব গড়ার পথ খুঁজে পেতে আর কষ্ট হয় না।

এসব কারণে রাজনীতি ও রাজনীতির মানুষের সঙ্গে সাধারণের দূরত্ব ক্রমে বেড়ে চলেছে। এ প্রবণতাকে অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। জনগণের এ রাজনীতিবিমুখতা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয় মোটেও। তাদের নিষ্ক্রিয়তা-নির্লিপ্ততা রাজনীতির মাঠকে অসৎ লোকদের পুরোপুরি কব্জায় নিয়ে যেতে পারে। আর তখন সমাজ হয়ে উঠতে পারে বসবাসের অযোগ্য। আর সেজন্যই সচেতন ব্যক্তিরা সৎ ও নিষ্ঠাবানদের রাজনীতিতে আসার ও থাকার ওপর গুরুত্ব দেন; যারা জনগণের সঙ্গে সম্পর্ককে মজবুত করবে, একাত্ম হবে, কখনই দূরে ঠেলে দেবে না।

রাজনীতি ও জনগণ একে অন্যের পরিপূরক। একটি ছাড়া আরেকটি অর্থহীন। এ দুটোর সম্পর্ক দেহ ও আত্মার মতো। আত্মা ছাড়া দেহ নির্জীব খাঁচা, আর দেহ ছাড়া আত্মা বায়বীয় পদার্থ, যার কোনো কার্যকারিতা নেই। সেজন্যই এ দুয়ের সম্পর্কে যেন দূরত্ব সৃষ্টি না হয়, সেদিকে যত্নবান হওয়া জরুরি। আর তা রাজনীতিকদেরই দায়িত্ব।

                লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।     

 

 

সর্বশেষ খবর