রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণে আল্লাহর সন্তুষ্টি মেলে

এস এম আরিফুল কাদের

দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণে আল্লাহর সন্তুষ্টি মেলে

মানুষের সুন্দর দেহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোখ। যা দ্বারা সে পৃথিবীর সুন্দর অবয়ব, নিয়ামতসহ

ভালো-মন্দ সবকিছু দেখতে পায়। ভালো দেখলে যেমন সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়, তেমনি খারাপ দেখলে দুনিয়া ও পরকালীন অশান্তি অনিবার্য। পরকালীন শাস্তি থেকে মুক্ত থাকতে প্রয়োজন দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করা। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করছেন, ‘হে রসুল! আপনি বলুন মোমিন পুরুষরা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে, এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।’ সুরা নুর, আয়াত ৩০। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে রসুল! আপনি মোমিন নারীদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে...। মোমিনরা তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ সুরা নুর, আয়াত ৩১। হাদিসেও দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে জোর তাগিদ রয়েছে। ‘বুরায়দা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, ‘রসুল (সা.) একবার হজরত আলী (রা.)-কে বললেন, হে আলী! তুমি দৃষ্টির পর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ অনিচ্ছাকৃত যে দৃষ্টি পড়ে তার জন্য তুমি ক্ষমা পাবে। কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য বৈধ নয়।’ তিরমিজি, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ।

দৃষ্টিসংযম বান্দার জন্য বড় পরীক্ষা। যে পরীক্ষা মহান প্রভু কর্তৃক হয়ে থাকে। যদি ধৈর্যের সঙ্গে দৃষ্টি সংযত করে উত্তীর্ণ হওয়া যায় তবেই বান্দা সফলকাম। হাদিসে এসেছে, ‘যখন আমি বান্দাকে তার দুটি প্রিয় বস্তুর (দুটি চোখের) মাধ্যমে পরীক্ষা করি এবং এর ওপর সে সবর করে তখন এর বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করব।’ বুখারি। মোমিনের জন্য ইমানি জ্যোতি পরকালীন মুক্তির পাথেয়; যা মেলে দৃষ্টিসংযমের মাধ্যমে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘দৃষ্টি হলো শয়তানের তীরগুলোর একটি। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে নিজের দৃষ্টি সংযত রাখে, আল্লাহ তার অন্তরে ইমানের এমন জ্যোতি সৃষ্টি করে দেন যে, সে তার মজা উপভোগ করে থাকে।’ তাবারানি।

ইবাদতে স্বাদ আসে নেক কাজে, আর বিস্বাদ আসে গুনাহের কারণে। যার অধিকাংশই চোখ দ্বারা সংঘটিত হয়। এ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে মুসলমানের দৃষ্টি কোনো মেয়ের সৌন্দর্যের ওপর পড়ে এবং দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, এ অবস্থায় আল্লাহ তার ইবাদতে বিশেষ স্বাদ সৃষ্টি করে দেন।’ মুসনাদে আহমাদ।

মারিফাতের ভাষ্যমতে খারাপ দৃশ্য দেখলে অন্তরচোখ মরে যায়, মানে নষ্ট হয়ে যায়। তাই দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ জরুরি। মহাকবি শেখ সাদি (রহ.) বলেছেন, ‘তোমার চোখকে অস্পৃশ্য দেখা আর জবানকে অহেতুক কথা বলা থেকে বিরত রাখ। তার পরও যদি তুমি মারিফাতের আলো দেখতে না পাও, তাহলে বলবে নাদান কি বলছে।’ গুলিস্তাঁ।

                              লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর