শিরোনাম
বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্ষণের শাস্তি

নূর মুহাম্মদ রাহমানী

নিজ স্ত্রী ছাড়া কারও সঙ্গে কোনোরূপ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাকে ইসলাম কঠিনভাবে নিষিদ্ধ এবং একে একটি জঘন্য পাপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। শুধু ইসলাম নয়; কোনো ধর্মেই ব্যভিচারের সুযোগ নেই। ইসলাম ব্যভিচারকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ ও হারাম আখ্যায়িত করেছে। বহু অন্যায় কাজের দ্বার খুলে দেয় এটি। এজন্য এর কাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। আল কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেও না, নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল ও মন্দ কাজ, যা আরও অন্যায় কাজের পথপ্রদর্শক।’ সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৩২। বাইবেলে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচার করবে না।’

ব্যভিচারের শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে ১০০ কশাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকরে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো। মুসলমানের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ সুরা নুর, আয়াত ২। এ তো হলো অবিবাহিতদের ব্যভিচারের শাস্তি। আর বিবাহিতদের ব্যভিচারের শাস্তি প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, ‘অবিবাহিতের ক্ষেত্রে শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে ১০০ বেত্রাঘাত ও রজম বা পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড।’ মুসলিম।

জিনা-ব্যভিচার সুস্পষ্ট হারাম ও নিন্দনীয় অপরাধ। ধর্ষণ আরও মারাত্মক অপরাধ। এ কেবল যৌন নির্যাতনই নয়; বৃহত্তর সামাজিক অন্যায়ের বহিঃপ্রকাশ। দেশ ও জাতির জন্য কলঙ্ক। অনৈতিকতা ও পাশবিকতার চূড়ান্ত। যদি ধর্ষণের কারণে হত্যাজনিত অপরাধ সংঘটিত হয় কিংবা ধর্ষণের শিকার কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তবে ঘাতকের একমাত্র শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড।

যদি ধর্ষণ করা হয় তাহলে যার ওপর জোর করা হবে তার ওপর কোনো শাস্তি আসবে না, শাস্তি আসবে শুধু জোরকারীর ওপর। রসুল (সা.)-এর যুগে এক নারীর সঙ্গে জোরপূর্বক জিনা করা হয়। রসুল (সা.) ওই মহিলার ওপর হদ তথা জিনার শাস্তি প্রয়োগ করেননি। যে জোরপূর্বক জিনা করেছে তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করেছেন। তিরমিজি। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘সরকারি মালিকানাধীন এক গোলাম গনিমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসীর সঙ্গে জোর করে ব্যভিচার (ধর্ষণ) করে। এতে তার কুমারিত্ব নষ্ট হয়। হজরত ওমর (রা.) ওই গোলামকে কশাঘাত করেন এবং নির্বাসন দেন। কিন্তু দাসীটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে তাকে কশাঘাত করেননি।’ বুখারি। তা ছাড়া নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতের ভুলবশত করা অপরাধ, ভুলে যাওয়া কাজ ও বল প্রয়োগকৃত বিষয় ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ ইবনে মাজাহ।

আর অবশ্যই ধর্ষিতা নারীকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ভয় পেলে চলবে না। প্রতিরোধ করতে গিয়ে ধর্ষিতা নারী মারা গেলে শহীদের মর্যাদা পাবে। সাইদ ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে যে ব্যক্তি নিহত হয়েছে, সে শহীদ। জীবন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সে-ও শহীদ। আর সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সে-ও শহীদ।’ আবু দাউদ।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

ইমেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর