বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

গুজব প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

গুজব প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

আধুনিক বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান অত্যন্ত সহজলভ্য।

মুহূর্তেই হাজার মাইল দূরের মানুষটি হতে পারে গল্প বা আড্ডার সঙ্গী। তথ্যপ্রযুক্তির এ অবাধ প্রবাহ একদিকে মানুষের জীবন করেছে সহজ ও উপভোগ্য। অন্যদিকে একশ্রেণির অসাধু মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে সমাজে ছড়াচ্ছে মিথ্যা গুজব বা অপতথ্য; যা মানুষের মধ্যে তৈরি করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, পারস্পরিক বিভেদ, বিনষ্ট করে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা। এমনকি মানুষকে ধাবিত করে ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধে। ইসলামের দৃষ্টিতে তথ্য একটি পবিত্র আমানত। প্রতিটি আমানতের ব্যপারে মহান রব্বুল আলামিনের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে। যারা সমাজে গুজব রটিয়ে বা মিথ্যা তথ্য প্রচার করে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে প্রয়াসী হয়, তারা খেয়ানতকারী, ফাসিক ও মুনাফিক। মহান রব্বুল আলামিন তাদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হইও না। নিশ্চয় আল্লাহ ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।’ সুরা কাসাস, আয়াত ৭৭। মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করা যেমন অপরাধ তেমন কোনো তথ্য যাচাই না করে প্রকাশ করাও মিথ্যার শামিল। তাই প্রতিটি তথ্য বা সংবাদ প্রকাশের আগে ভালোভাবে যাচাই করা হলো ইসলামের শিক্ষা। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করছেন, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনে, তবে তোমরা তা যাচাই কর, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ সুরা হুজুরাত, আয়াত ৬। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে (সত্যতা যাচাই না করে) তাই বর্ণনা করে।’ মুসলিম।

প্রিয়নবী (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি : ১. কথা বললে মিথ্যা বলে ২. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে ৩. আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে।’ বুখারি।

সম্মানিত পাঠক! সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম তথা ফেসবুক টুইটার হোয়াটস-অ্যাপ ইমু মেসেঞ্জার বা এ ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান, প্রকাশ বা শেয়ার করার আগে তার সত্যতা ও প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করা একান্ত বাঞ্ছনীয়। অপতথ্য ছড়িয়ে অন্যের মানহানি করা, দোষচর্চা করা বা কাউকে অপবাদ দেওয়াকে ইসলাম পাপ বলে গণ্য করেছে। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজ ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।’ বুখারি, মুসলিম। তবে কারও অপরাধ যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যা সমাজ, মানবতা বা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে জনগণকে সচেতন করার জন্য তা প্রকাশে কোনো অসুবিধা নেই। এ সম্পর্কে মহান রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ মন্দ কথার প্রচার-প্রসার পছন্দ করেন না, তবে যার ওপর জুলুম করা হয়েছে (তার কথা ভিন্ন)।’ সুরা নিসা, আয়াত ১৪৮। এ আয়াতের তাফসিরে প্রখ্যাত তাফসিরবিদ মুজাহিদ (রহ.) বরেছেন, ‘নিপীড়িত জনগণের সপক্ষে অবস্থান নিয়ে জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা এবং জনসম্মুখে অপরাধসমূহ প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বৈধ।’

লেখক : মারকাযুল উলুম আজিজিয়া মাদ্রাসা. কাজলা (ভাঙা প্রেস) যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর