শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা : স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের আবাসন

অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম

করোনা : স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের আবাসন

বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের সঙ্গে বিগত ৮ মার্চ থেকে করোনার সঙ্গে পাল্লøা দিয়ে চলছে। প্রথম ধাক্কায় স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা অনেকটা এলোমেলো হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু তৎক্ষণাৎ সে অবস্থা থেকে উত্তরণ লাভের জন্য সরকার-জনগণ-স্বাস্থ্যসেবা কর্মী-বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা-দাতাগোষ্ঠী সবাই মিলে কাজ করেছে। আমরা যেমন অনেক মূল্যবান জীবন হারিয়েছি, প্রচুর মানুষকে চিকিৎসাসেবাও দিতে পেরেছি সীমিত সম্পদের মধ্যে। এর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা করেছেন অবশ্যই তার সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রতিও আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। কারণ জীবন বাজি রেখে সংসারধর্ম ফেলে কোনোরকম প্রাক-প্রস্তুতি ছাড়াই তারা যে পরিমাণ কাজ করেছেন তা পৃথিবীর যে কোনো উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, তৃণমূল থেকে শুরু করে প্রত্যেকেই সমানতালে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে এমন অনেক জায়গা আছে- উপজেলা আছে যেখানে আমাদের চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যকর্মী করোনা রোগীদের শুধু Chest X-ray, Blood Report করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখে প্রটোকল মেনে চিকিৎসা দিয়েছেন এবং প্রচুর রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন। এসব কথা অনেকের কাছে গল্পের মতো মনে হবে কারণ তাদের কথা কখনই কেউ বলেন না এবং যারা ভালো হয়ে যান তারাও সেটাকে স্বাভাবিক মনে করেন।

বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোয় যারা কভিড রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন তারা সে সময়টি পরিবার থেকে দূরে থেকেছেন। তারা কিন্তু পাঁচতারকা খচিত কোনো হোটেল চাননি; চেয়েছেন ওই সময়টা পরিবার থেকে দূরে যে কোনো আবাসস্থল। কোনোরকম পরিকল্পনা ছাড়াই সে সময় ওই ধরনের হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের দ্রুত ওইসব আবাসস্থল ছেড়ে যেতে বলা হলো, কিন্তু কোনো একটি হাসপাতালও অন্য আবাস ঠিক করে রাখতে পারছে না। অনেক জেলার মধ্যে মানিকগঞ্জের ডেপুটি কমিশনার দ্রুতই নিকটস্থ প্রশিকা হাসপাতালে, সাতক্ষীরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গাজীপুরসহ নানা জেলায় স্থানীয় উদ্যোগে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে যেন কোনোভাবেই সেবাদানকারীরা পিছিয়ে না পড়েন এবং চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে না পড়ে। এটা একটা মহান উদ্যোগ, কিন্তু সব জায়গায় সে রকমভাবে করতে পারেছেন না। তাহলে তারা ওই সময়টা কোথায় কাটাবেন? আমাদের প্রত্যেকের জীবনে ওই বয়সটা পার করেছি। সেই বয়সে কোনোরকমে পরিবারকে নিয়ে মাথা গুঁজে চলা লাগত, এখন ওই অবস্থায় এ ধরনের রোগীদের সেবা দিয়ে তারা বাড়ি ফিরে সবাইকে আক্রান্ত করবেন। কারও কাছ থেকে কিছু ভালো আশা করলে তাকে অবশ্যই একটু ভালো ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বিষয়টি জটিল নয়, কিন্তু কেউই সমাধান করতে পারছেন না। শুনেছি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তাদের নিজস্ব আবাসন অথবা প্রণোদন নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সে আবাসন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোথায় কীভাবে ঠিক করবেন সে ব্যাপারে একটি কমিটি করে তাদের ব্যবস্থা করে দিতে হবে অথবা নতুন করে উচ্চ পর্যায়ে আবার আলোচনা করা যেতে পারে কীভাবে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। সবাই সাবধান করছেন সামনে এটি ভয়াবহভাবে আসছে। শীতে আবার বাড়তেও পারে। কাজেই আমরা স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের পরিবারসহ সবাইকে দ্রুত রক্ষা করতে চাই, ভালো চিকিৎসাব্যবস্থা চাই। জীবন জীবিকাও রক্ষা করতে চাই।

এ করোনাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আর্থিক কৃচ্ছ্রতার নির্দেশ দিলেও শুনেছি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কোনোরকম নির্দেশ দেননি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য পরিদফতর দয়া করে আর একবার আবাসনের ব্যবস্থাটি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসবেন বলে আশা রাখি। কারণ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের যদি সুরক্ষা না দিতে পারা যায় তা হলে আমরা যে অর্জন করোনাকালে করেছি তা ধুলোয় মিশে যাবে। উন্নত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের চিকিৎসকসহ নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা যেভাবে এখনো শ্রম দিচ্ছেন তা তুলনাহীন।

আমি একটি বেসরকারি হাসপাতালে সবচেয়ে নিবেদিত চিকিৎসকসহ সব কর্মীর কথা জানি, তারা পয়সা নিচ্ছেন কিন্তু ২৪ ঘণ্টা খাবার সরবরাহসহ যেভাবে সেবা দিচ্ছেন তা যে কোনো উন্নত দেশের চেয়েও শ্রেয়। এ করোনাভাইরাসের প্রতিটি ওষুধই দামি, প্রতিটি মানসম্পন্ন মাস্ক, পিপিই ও পরীক্ষা ব্যয়বহুল। সেখানে সরকারি হাসপাতালে যদি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা সেভাবে সেবা দিতে চান তবে তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি।

আশা করব পরবর্তী ধাক্কা আসার আগেই জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টিতে সরকারি পর্যায়ে দৃষ্টি দেওয়া হবে। আশায় থাকব স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা আবাসন চিন্তা থেকে মুক্ত হবেন।

লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান (প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ), হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সাবেক সভাপতি, ওজিএসবি।

 

সর্বশেষ খবর