পরনিন্দা বা অন্যের সমালোচনা আমাদের সমাজে-সংসারে, ঘরে-বাইরে একটা মহামারী আকার ধারণ করেছে। এ মহামারী করোনাভাইরাসের চেয়ে ভয়ঙ্কর। করোনায় যত মানুষ আক্রান্ত, তার চেয়ে বেশি আক্রান্ত পরনিন্দার মহামারীতে। নিজে কোনো ভালো কাজ করতে পারি বা না পারি, অন্যের সমালোচনায় আমরা বেশ পটু। মানুষের ভুল ধরতে খুব ভালো লাগে। পরনিন্দা যারা করে তারা কর্মজীবনে পিছিয়ে যায়। নিজের উন্নতি কীভাবে করা যায় সেদিকে তাদের দৃষ্টি থাকে না, তাদের চিন্তা থাকে কীভাবে অন্যের দোষ ধরা যায়। অন্যকে অসম্মান করা যায়। তাই সমাজে, সংসারে পরনিন্দাকারীরা ব্যাপক উন্নতি সাধন করতে পারে না। এ কারণেই ইসলাম এ অন্যায় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। সুরা হুজুরাতের ১২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বিরত থাকো। নিশ্চয় কতক ধারণা গুনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান কোরো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত, তোমরা একে ঘৃণাই কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ উল্লিখিত আয়াতে তিনটি বিষয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে- ১. কারও প্রতি খারাপ ধারণা রাখা যাবে না । ২. অন্যের দোষ তালাশ করা যাবে না। ৩. কারও দোষ থাকলেও তা প্রকাশ করা যাবে না। তাই এ তিনটি বিষয় পরিহার করতে হবে।
মনে রাখা দরকার, পরনিন্দা হলো কারও অনুপস্থিতিতে এমন কথা বলা যা তার সামনে বললে সে মনে কষ্ট পায়। এ বিষয়ে মুসলিমের দ্বিতীয় খন্ডের ৩২২ পৃষ্ঠায় হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার সাহাবিদের কাছে প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জান গিবত (পরনিন্দা) কাকে বলে? তাঁরা উত্তর দিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুলই ভালো জানেন। রসুল (সা.) তখন বললেন, গিবত (পরনিন্দা) হলো তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা যা শুনলে সে অপছন্দ করবে। তখন তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, আমি আমার ভাই সম্পর্কে যা বলছি তা যদি তার মধ্যে থাকে তবু কি আপনি একে গিবত (পরনিন্দা) মনে করেন? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি যা বললে (বাস্তবে) তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলে অবশ্যই তুমি তার গিবত (পরনিন্দা) করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে। (অপবাদ আরও ভয়ঙ্কর অপরাধ)। আর কেউ যদি পরনিন্দা থেকে বেঁচে থাকে তার জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার। হজরত সহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তুর ও দুই পায়ের মধ্যস্থিত বস্তুর (নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে) দায়িত্ব নেবে আমি তার জন্য বেহেশতে যাওয়ার দায়িত্ব নেব। বুখারি। অর্থাৎ জিব ও লজ্জাস্থান হেফাজত করতে পারলে প্রিয় নবী (সা.) নিজ দায়িত্বে জান্নাতে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহ আমাদের আমল করার তৌফিক দিন।
লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।