সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ধর্ষণ জঘন্যতম সামাজিক অভিশাপ

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

ধর্ষণ জঘন্যতম সামাজিক অভিশাপ

ইসলামী বিধান অনুযায়ী ধর্ষণ একটি মহাপাপ। সমাজবিধ্বংসী মারাত্মক অপকর্ম। মহান প্রভু কোরআনে কারিমে ধর্ষণকে হারাম ঘোষণা করেছেন। ঘোষণা করেছেন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি। হাদিসের আলোকে ধর্ষণ একটি সামাজিক অভিশাপ। ইহ ও পরকালে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.) ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে ইভ টিজিং, ধর্ষণ-ব্যভিচারের বিভীষিকা ও ভয়ঙ্কর পরিণতির চিত্র পনেরোশ বছর আগে তুলে ধরেছেন। সাহাবি ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত মহানবী (সা.) বলেন, ‘এমন কোনো জনগোষ্ঠী নেই যাদের মধ্যে ধর্ষণ ব্যভিচার বিস্তার করেছে আর তাদের মধ্যে মহামারী ও দুর্ভিক্ষ আসেনি। যা অতিবাহিত ইতিহাসে প্রতীয়মান হয়নি। (আহমদ সহিহ)। প্লেগ, করোনাভাইরাস ইত্যাদি নতুন নতুন প্রাণঘাতী মহামারী প্রচলিত পাপাচারেরই কুফল মাত্র। ধর্ষণ, ইভ টিজিং চলমান বিশ্বের জন্য ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ। নারী নির্যাতনের জঘন্যতম পদ্ধতি। ধর্ষণ-ব্যভিচার প্রসারের কারণে দীন ধর্ম লোপ পাচ্ছে। মানবতা বিপন্ন হচ্ছে। বিঘœ হচ্ছে সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা মতে, এইডস জাতীয় সংক্রমণ রোগ ও প্রাণঘাতী মহামারীর অন্যতম কারণ হচ্ছে ধর্ষণ ব্যভিচার। আমরা আজ আধুনিক উন্নত বিশ্বের অধিবাসী। সবাই উন্নয়নের পরিসংখ্যানে ব্যস্ত। এই উন্নয়নের বিপরীতে ঢেকে আছে কত অসহায় মানুষের বেদনা আর হৃদয়ভরা হাহাকার। কান্নার শব্দ চাপা দেওয়া গেলেও আড়াল করা যায় না চোখের জল। ধর্ষণ, ছোট একটি শব্দ। কিন্তু এর অপমানের জ্বালা সহ্য করা অনেক কঠিন। এই অসহ্য ভার বহন করছে আজকের উন্নত বিশ্ব। প্রতি বছর যেন পাল্লা দিয়ে  এগোচ্ছে এর বিড়ম্বনা। বাংলাদেশ আইন সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী এ দেশে ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়। আর ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২ জন। ধর্ষণের পর হত্যা ও আত্মহত্যা ইত্যাদি একই গতিতে বেড়ে চলেছে। ইদানীং যোগ হলো সিলেট এমসি কলেজে স্বামীকে বন্দী করে তার স্ত্রীকে গণধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক মর্মান্তিক ঘটনা। এই রোমহর্ষ আচরণের জন্য আমরা দুঃখিত, লজ্জিত ও আতঙ্কিত। আমি এই অপকর্মের  তীব্র ঘৃণা জানাচ্ছি।

এই ধর্ষকরা কারা? এরা তো ভিনগ্রহ থেকে আসেনি। চেহারায় ঠিকানায় তো এদেশের মানুষ। এদের শক্তি কোথায়? এর কি কোনো বাস্তব প্রতিকার নেই। নেই কি নারীদের নিষ্ঠুর আচরণ থেকে রক্ষা করার কোনো উপায়? বাস্তব সমাধানের জন্য আমরা ইসলামী আদর্শের প্রতি অনুপ্রাণিত হই। সচেতন হই। প্রতিরোধ গড়ে তুলি সবাই মিলে। বিশেষ করে ধর্ষকদের ব্যাপারে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে, যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ধর্ষকরা বেরিয়ে যেতে না পারে। মূলত ধর্ষকদের কোনো দল নেই। প্রতারণার ফাঁদ হিসেবে তারা রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে। তাই রাজনৈতিক পরিচয়ের ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, রাজনৈতিক ধর্ষকরা নানাভাবে ছাড় পেয়ে যায় । এর পর তারা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে থাকে। তাই আমাদের শান্তিশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সতর্ক হতে হবে। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও সোচ্চার হতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মা-বোন ও শিশুদের আত্মরক্ষায় যথাসাধ্য সচেতন থাকতে হবে।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর