মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভবদহের জলাবদ্ধতা

শুভঙ্করের ফাঁকি বন্ধ হোক

যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের কি কোনো পথই নেই? বছরের পর বছর ধরে ওই এলাকার ৪০টি গ্রামের অধিবাসীদের জীবনে জলাবদ্ধতা নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো কখনো কর্তৃপক্ষীয় উদ্যোগে জলাবদ্ধতার অবসান হলেও তা যেন কিছুতেই স্থায়ী হওয়ার নয়। সর্বশেষ ভবদহের তিন উপজেলার ৪০টি গ্রাম তিন মাস ধরে পানি নিচে তলিয়ে আছে। ডুবে আছে বসতবাড়ি রাস্তাঘাট ফসলের মাঠ। এ এলাকার হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির সম্মুখীন। ভবদহের কোনো মানুষ মারা গেলে তার শেষকৃত্য করাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ভবদহে জোয়ারের পানি আসে ভৈরব নদ থেকে। যে পানি নামার ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। ভৈরব নদ খনন করে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ালে এবং পানি নিষ্কাশনের খালগুলো সংস্কার করলে জলাবদ্ধতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে টেকসই ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট বা টিআরএম প্রকল্প। বিশেষ করে ভবদহের পানি অপসারণে আমডাঙ্গা খাল সংস্কার করে গভীরতা বাড়ালে জোয়ারের পানি দ্রুত সরে যাবে। ওই এলাকার একটি বিলে টিআরএম কার্যক্রম চালু করায় পাঁচ বছর ধরে এলাকাবাসী জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত থেকেছে। ভবদহের মানুষ স্বপ্ন দেখছিল তাদের অভিশপ্ত জীবনের হয়তো অবসান ঘটল। কিন্তু ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই কমিটির সভায় রহস্যজনকভাবে টিআরএম কার্যক্রম বাদ দিয়ে ৮০৭ কোটি টাকার একটি সংশোধিত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। টিআরএমের বিকল্প হিসেবে প্রতি বছর নদীর পাইলট চ্যানেল খনন করে জলাবদ্ধতা কমার বদলে বেড়েছে। ভবদহ অতিক্রম করে জলাবদ্ধতা পাশের তেলিগাতি ও গ্যাংরাইল অববাহিকায়ও বিস্তৃত হচ্ছে। নদের পাইলট চ্যানেল খননের কাজে শুভঙ্করের ফাঁকি থাকায় জলাবদ্ধতার অভিশাপ কিছুতেই কমছে না। আমরা আশা করব অন্তত তিন যুগ ধরে অভিশাপ হিসেবে বিদ্যমান ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীর মতামতকে গুরুত্ব দেবেন। সরকারি অর্থের অপচয়ের বদলে সমস্যা সমাধানের দিকে নজর দিলে এলাকাবাসীও রক্ষা পাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর