মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

আয়াতুল কুরসির মর্যাদা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আয়াতুল কুরসির মর্যাদা

পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে দামি ও মর্যাদাপূর্ণ আয়াতগুলোর অন্যতম সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতটি। হাদিসে এ আয়াতকে আয়াতুল কুরসি বলা হয়েছে। এ আয়াতের মধ্যে মহান আল্লাহর পরিচয় ও অকুণ্ঠ ক্ষমতার কথা এত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, কোরআনের আর কোনো আয়াতে এত সংক্ষেপে এমন অর্থবহ করে তাঁর পরিচয় ও ক্ষমতার কথা বলা হয়নি। একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসুল! আপনার ওপর নাজিল হওয়া সবচেয়ে মর্যাদাবান আয়াত কোনটি? রসুল (সা.) বললেন, সেটি হলো আয়াতুল কুরসি।

আয়াতুল কুরসির মর্যাদা সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফিরিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলার আগে আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার আর জান্নাতের মধ্যে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না। প্রিয় নবী (সা.) যখন ওফাতের বিছানায় শুয়ে আছেন, এমন সময় হজরত আজরাইল (আ.) এসে বললেন, আপনার কোনো উম্মত যদি প্রতি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে তাহলে আমি অতি সহজে তার জান কবজ করব। শুধু তাই নয়, প্রতি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিকের সমস্যার সমাধান হয়ে যায় এবং গায়েবি রিজিক প্রাপ্তি ঘটে। আয়াতুল কুরসির আরেকটি বিশেষ মর্যাদা হলো, যে ঘরে এ আয়াত পড়া হয়, সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, আয়াতুল কুরসি হলো কোরআনের সব আয়াতের নেতা। এ আয়াত যে ঘরে পড়া হবে সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যাবে। যে ব্যক্তি রাতে এ আয়াত তিলাওয়াত করে ঘুমাবে, সে ও তার সম্পদ বিশেষ ফেরেশতারা পাহারা দেবে। শুধু তাই নয়, কোনো ব্যক্তি যদি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আয়াতুল কুরসি পড়ে নেয়, তাহলে একদল ফেরেশতা তার সম্পদ পাহারা দেবে এবং আরেকদল ফেরেশতা রাস্তাঘাটে তাকে পাহারা দেবে। আসুন আমরা আয়াতুল কুরসি ও তার অর্থটুকু জেনে নিই।

আয়াতুল কুরসি : আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম। লা তাখুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস্ সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইন্দাহু ইল্লা বিইজনিহ। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাইইম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআ। ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদি, ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুওয়াল আলিইয়্যুল আজিম।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি শাশ্বত চিরঞ্জীব। বিশ্বপ্রকৃতির সর্বসত্তার ধারক। তিনি তন্দ্রা-নিদ্রাহীন সদাসজাগ। মহাকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুর মালিক। তাঁর সদয় অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করার সাধ্য কারও নেই। দৃশ্যমান বা অদৃশ্য, অতীত বা ভবিষ্যৎ- সৃষ্টির সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু জানাবেন, এর বাইরে তাঁর জ্ঞানের সীমানা সম্পর্কে ধারণা করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তাঁর আসন, তাঁর কর্তৃত্ব পৃথিবী ও নভোমন্ডলের সর্বত্র বিস্তৃত। আর তা সংরক্ষণে তিনি অক্লান্ত। তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান। সুরা বাকারাহ-২৫৫।

বাংলা উচ্চারণে কোরআন পড়া যাবে কিনা এ বিষয়ে অধিকাংশ আলেম বলেন, বাংলা উচ্চারণে কোরআন পড়লে ভুল হয়ে যায়, অর্থের বিকৃতি ঘটে। তাই বাংলা উচ্চারণে কোরআন পড়া না চাই। তবে কেউ যদি আরবি না পারেন এবং তিনি যদি বাংলা উচ্চারণ দেখে মুখস্থ করে নেন আর কোনো অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে সঠিক উচ্চারণ শিখে নেন তাহলে আশা করি ভুল উচ্চারণ ও অর্থের বিকৃতি থেকে আল্লাহতায়ালা হেফাজত করবেন।

লেখক : মুফাস্সিরে কোরআন।

www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর