বন্যা ও নদী ভাঙনের কারণে প্রায় প্রতি বছর বিপুল সম্পদের ক্ষতি হয়। সাম্প্রতিক বন্যায় পাঁচ বিভাগের প্রায় ৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত এবং অন্তত ৫০টি স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার খবর মিলেছে। নদী বা চরাঞ্চলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ অপেক্ষাকৃত দরিদ্র বা অনগ্রসর বলে বিবেচিত। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীগুলো ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। চার দিন আগে নয়টি নদীর পানির উচ্চতা বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও মঙ্গলবার দুটি নদী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে সামনে এসেছে নদী ভাঙন। বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। বদলে যাচ্ছে অনেক জেলার মানচিত্র। পদ্মা, ধরলা, যমুনা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন তীব্র হয়েছে। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠছে জমির পচে যাওয়া ফসল, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট। সড়কের ভাঙন রোধে আপাতত বালুর বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে। বন্যা ও নদী ভাঙনকে কর্তাব্যক্তিরা ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্বাভাবিক পরিণতি’ হিসেবে চিত্রিত করে চলেছেন। এর ফলে তাদের জবাবদিহি করতে হয় না। প্রচলিত নিয়ম হলো ভাঙন ধেয়ে এলে অবকাঠামো নিলাম করে হলেও কিছু অর্থ বাঁচানো। কিন্তু সেই নিলামের নিয়মও যথাসময়ে পালন করা হচ্ছে না। এ মুহূর্তের করণীয় হচ্ছে, ভাঙনের মুখে বিপর্যস্ত মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। জীবিকা হারিয়ে যাদের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে উঠেছে, তাদের আর্থিক সহযোগিতা বা সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তা বিবেচনায় নিতে হবে। ভাঙনের তীব্রতা লাঘবের জন্য বালুর বস্তা ব্যবহারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা যেন যথাযথভাবে করা হয় তাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নদী ভাঙন রোধ ও নদী খনন প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন তদারকি করতে হবে।