শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

চির উন্নত থাকুক শিক্ষাগুরুর শির

মো. আবু তালহা তারীফ

চির উন্নত থাকুক শিক্ষাগুরুর শির

যে কোনো বিষয় চর্চা বা অনুশীলনের মাধ্যমে যে ধারণা ও জ্ঞান অর্জন করে এবং আচার-আচরণ, মন ও আত্মার ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন ঘটায়, মেজাজ ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের প্রভাব ফেলে এমন কর্মপ্রক্রিয়াকে শিক্ষা বলে। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড আর সেই মেরুদন্ডকে সুন্দর ও সোজা রাখার জন্য শিক্ষকের ভূমিকা অতুলনীয়। শিক্ষকরা মানুষ তৈরির কারিগর। শিক্ষকরা জাতির প্রধান চালিকাশক্তি। এক কথায় বলা যায়, শিক্ষক মানুষ চাষ করেন। যে চাষাবাদের মধ্য দিয়ে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে।

শিক্ষকরা আমাদের শিক্ষা দেন। তারা আমাদের গুরুজন। গুরুজনদের ইসলাম সম্মান করার আদেশ দিয়েছে। যারা গুরুজনদের সম্মান করবে না তারা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দলভুক্ত নয়। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একদিন একজন বয়স্ক ব্যক্তি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলে সাহাবায়ে কিরাম নিজ নিজ স্থান থেকে সরে জায়গা করে দিলেন, তখন রসুল (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ তিরমিজি।

সমাজে শিক্ষকমাত্রই বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। কিন্তু সেই শিক্ষক তার ছাত্রের হাতে অপমানিত হচ্ছেন, তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হচ্ছে, এমনকি তাদের ওপর অত্যাচার ও মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই শিক্ষক হচ্ছেন সভ্যতার অভিভাবক, সমাজের অভিভাবক ও সমাজের প্রতিনিধি। তারা শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রক্রিয়ায়, জ্ঞান অন্বেষণ ও আহরণ, মেধা বিকাশ ও উন্নয়নে এবং শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনে, নৈতিক ও মানসিক গুণাবলি বিকাশে এবং সমাজ বিবর্তনে অনুঘটক ও সুশীলসমাজ তৈরির সহায়তা দানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জ্ঞান অন্বেষণের গুরুত্ব ও শিক্ষকের মর্যাদা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ সুরা জুমার, আয়াত ৯। শিক্ষকরা সারা দেশের পাড়াগাঁয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার পরও তারা কীভাবে ছাত্রছাত্রীরা ভালো ফল করতে পারে এজন্য বিভিন্ন সময় আলাদাভাবে তাদের দিকনির্দেশনা দেন। তারা জাতিকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে নিজেরা মোমের মতো নিঃশেষিত হন। শিক্ষকরা নিজে শিক্ষা অর্জনের পরপরই অন্যকে সে শিক্ষায় শিক্ষিত ও চরিত্র গঠন করার দায়িত্ব নেন। শিক্ষকের মর্যাদা সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর পরে এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে ওই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মহানুভব যে বিদ্যার্জন করে ও পরে তা প্রচার করে।’ মিশকাত। শিক্ষকরা মহান পেশায় নিয়োজিত হলেও তাদের নেই কোনো অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা। শিক্ষকদের জীবন ধারণের জন্য যথেষ্ট অর্থের প্রয়োজন। সামাজিক মর্যাদা না থাকায় মেধাবীরা শিক্ষকতায় আকৃষ্ট হচ্ছে না। তাই শিক্ষকদের বেতন কাঠামো এমন হতে হবে, যাতে সমাজে শিক্ষকতা পেশার গুরুত্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, কোনো শিক্ষক যেন কোনো শিক্ষার্থীর হাতে অপমানিত না হন সেদিকে লক্ষ্য করতে হবে। কারণ শিক্ষক সম্মানের পাত্র, তারা আমাদের শিক্ষ দেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন কর এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব শিষ্টাচার শেখ, তোমরা তাকে সম্মান কর যার কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করেছ।’ আল মুজামুল আউসাত।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর