শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

প্যারিসে ইউরোপের বৃহত্তম নগরকৃষি

শাইখ সিরাজ

প্যারিসে ইউরোপের বৃহত্তম নগরকৃষি

২০১৮ সালের আগস্ট। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে সামার শেষের পথে। বাতাসে আসন্ন শরতের আমেজ। শিল্পের শহর প্যারিসে খুঁজে ফিরছিলাম ভার্টিক্যাল ফার্মিং। অনুসন্ধান করছিলাম আরবান ফার্মিংয়ের অস্তিত্ব। বিশেষ করে ছাদকৃষি। খবর পেয়েছি, ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ত ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরে আরবান ফার্মিংয়ের প্রস্তুতি চলছে, কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে তাজা সবজির রেস্তোরাঁ। ছাদে উৎপাদিত তাজা ফলফসল দিয়ে খাদ্য পরিবেশন করা রেস্তোরাঁগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্যারিস শুধু শিল্প আর বিপ্লবের শহরই নয়; কৃষির প্রশ্নে প্যারিসের রয়েছে পুরনো এক গর্ব। আঠারো শতকে সে শহরের সিংহভাগ ছিল কৃষি খেত। আর এখন তা ৪০ লাখের বেশি নাগরিকের শহর। নাগরিক সুবিধা, শিল্পের জৌলুস, বিনোদনের প্রসার সবই দিনের পর দিন বাড়ছে। কিন্তু কৃষি যেন উধাও হয়ে গেছে। তবে বিশ্বজুড়েই মানুষ এখন বুঝতে শুরু করেছে শহর মূলত পৃথিবীর পরিবেশে ক্ষতই তৈরি করে যাচ্ছে। আর তা থেকে কিছুটা নিরাময় দিতে পারে নগরকৃষি। ফলে পৃথিবীর বড় বড় শহরে নগরকৃষির গুরুত্ব অনুধাবন করে নতুনভাবে শহরকে সাজানোর তাগিদ অনুভব করছে। প্যারিস শহরে বেশ ঘুরেছি। সার্জি পুংতোয়াজে গিয়েছি, গিয়েছি লুকুলয়ে দো সারজিতে। পারিবারিক কৃষি দেখতে। তাও শহর থেকে বেশ দূরে। জেনেছি প্যারিস শহরের ৪০ লাখ মানুষের খাদ্য আসে দূরের পথ পাড়ি দিয়ে। ফলে তরতাজা ও শতভাগ বিষমুক্ত খাদ্যফসল কারও ভাগ্যেই আসলে জোটে না। তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের মুখোমুখি হতে হচ্ছে সব রাষ্ট্রের। যে কোনো কাজেই কার্বন নিঃসরণ ঘটছে। গাড়িযোগে বা উড়োজাহাজে দূরের পথ বেয়ে যে কৃষি ফসল আসছে সেখানেও কার্বন নিঃসরণের প্রশ্ন। সেখানেও প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আমি সে বছর যে খবরটি শুনে প্যারিসে গিয়েছিলাম তা হলো, সেখানকার বিশাল এগজিবিশন সেন্টার প্যারিস এক্সপো পোরতে দ্য ভার্সাইলেসের ছাদে হবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত আরবান ফার্ম। এ বছর, অর্থাৎ ২০২০-এর এই করোনাকালে বিশ্বের গণমাধ্যমে নগরকৃষি নিয়ে চাউর হওয়া খবর এটিই। জুলাইয়ে ফসল উঠতে শুরু করেছে প্যারিসে প্রতিষ্ঠিত ইউরোপের সবচেয়ে বড় আরবান ফার্মে। অবশ্য যারা খবর রাখেন না তাদের কাছে এ খবর হয়তো এখনো পৌঁছেনি। এর আগে নিউইয়র্কের ‘ব্রুকলিন গ্রাঞ্জ’ই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আরবান ফার্ম। তাও ছিল দুটি ফুটবল মাঠের সমান। এরপর সে কৃতিত্ব নিয়ে নেয় কানাডার একটি নগরকৃষি উদ্যোগ। যা হোক, ফ্রান্সের ‘ন্যাচার আরবান’কে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত নগরকৃষি তথা ছাদকৃষি উদ্যোগ বলা যায়। এর কৃষি আবাদি এলাকার আয়তন ১৪ হাজার বর্গমিটার। পুরো অংশে এখনো কৃষি অবকাঠামো স্থাপন করা হয়নি। তবে যেটুকুতে হয়েছে তাতেই প্রতিদিন ২০ ধরনের ফলফসল উঠছে ১ হাজার কেজি। এত বড় উদ্যোগ নিয়েছেন একজন স্বপ্নচারী সাধারণ মানুষ। নাম তার পেসক্যাল হার্ডি। তিনি একজন কৃষি প্রকৌশলী। তাই উন্নত বিশ্বের কৃষি উৎপাদনের ভবিষ্যৎ ভাবনাটি তার মাথায় খেলেছিল সময়মতোই। ২০১৬ সালে পেসক্যাল গড়ে তুললেন এগ্রিপলিস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে বানানো হতো এক ধরনের হালকা ওজনের টাওয়ার। যে টাওয়ারের গায়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে ফোটক। ভার্টিক্যাল ফার্মিংয়ের একটি টেকসই ও সহজ উদ্যোগ। তিনি ভাবলেন, মাটি ছাড়াই যে কেউ এ টাওয়ারে ফসল ফলাতে পারবে।

‘ন্যাচার আরবান’-এ শুধু মাটিবিহীন কৃষিরই আয়োজন নয়; আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির সবকিছুই প্রয়োগ করা হয়েছে। সেখানে মাটির বিকল্প হিসেবে যে মিডিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে জৈব পুষ্টি সমৃদ্ধ করা হয়েছে বিভিন্ন খনিজ পদার্থের মাধ্যমে। পুরো কৃষি আয়োজনে কোনোভাবেই কীট ও ছত্রাক নাশক ব্যবহার করা হয় না। কম্পিউটারাইজড সেচ পদ্ধতির কারণে এতে সাধারণ কৃষির তুলনায় ৯০ ভাগ পানি কম লাগে। পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি সহায়তায়। সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয় একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে। কৃষির এ ব্যবস্থাপনাটি অ্যারোপনিক ফার্মিং নামে পরিচিত। এর ব্যয় ইউরোপের বিবেচনায় খুবই কম। গ্রিনহাউস বা নেট হাউসে নিয়ন্ত্রিত কৃষির ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে খুব সামান্যই।

এ কৃষি উদ্যোগের উদ্যোক্তা পেসক্যাল হার্ডির জীবনের গল্পের সঙ্গে এ উদ্যোগটি যেন গেঁথে আছে। সে গল্প আপনাদের জানাতে চাই। পৃথিবী চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। ফলে এখন চাইলেই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে থাকা মানুষের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলা যায়। সম্প্রতি পেসক্যাল হার্ডির সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলাপ হয়েছে। পেসক্যালের কাছে তার ফার্মটি শুরুর গল্প শুনতে চেয়েছিলাম। কখন, কীভাবে শুরু হলো তার এ অভিযান। তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালের কথা! ঝড়ে একটা গাছ ভেঙে আমার ওপর পড়ে যায়। কী হয়েছে? আমি আমার স্বাভাবিকতা হারিয়েছি। আমার জীবনের গল্পটাও পৃথিবীর গল্পের মতোই, ক্রমে স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলছে এ পৃথিবী। ছিলাম কৃষিতত্ত্বের প্রকৌশলী, পেশা হিসেবে আমি পরিবেশ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার পরামর্শক হিসেবে কাজ করতাম। হয়ে গেলাম উদ্যোক্তা। যে পরামর্শগুলো আমি অন্যদের দিচ্ছিলাম, সেগুলো এখন নিজে বাস্তবায়ন করছি।’

জলবায়ু পরিবর্তন গোটা বিশ্বের জন্য বড় একটি সমস্যা। খাদ্য ব্যবস্থাপনার এ সমস্যা অনেক বড় হয়ে আমাদের সামনে আসছে। পেসক্যালও তাই জানালেন, ‘আমরা যে জটিল ও প্রতিকূল সময়ের মুখোমুখি হয়েছি, তার জন্য আমাদের খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। নতুন করে সাজাতে হবে শহরকেও। সুস্বাস্থ্যের জন্য আমরা বলি সতেজ খাবার খেতে। অথচ শহরের মানুষের খাদ্য সাধারণত দূরের কোনো গ্রাম থেকে আসে। কখনো কখনো অনেক দূরের কোনো অঞ্চল থেকে খাদ্যদ্রব্য বা ফলফসল শহরে আনা হয়। এবং সেসব খাদ্যদ্রব্য আর তখন সতেজ থাকে না। খাদ্য যেমন তার সতেজতা হারায় খাদ্য নষ্টও হয় প্রচুর। তাই আমি মনে করি শহরের খাদ্য ব্যবস্থাপনাকে নতুনভাবে সাজানোটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

পেসক্যাল ইতিমধ্যে ১১টি ফার্ম শুরু করেছেন প্যারিস শহরে। ইউরোপের বৃহত্তম এ ফার্মটি কানাডায় অবস্থিত বৃহত্তম নগরকৃষি উদ্যোগের চেয়ে আঙ্গিকগতভাবে পৃথক বলে জানালেন পেসক্যাল। কানাডায় গ্রিনহাউসে করা হয়েছে, ফলে তারা পরিবেশ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ ফার্মে ভিন্ন ভিন্ন ২০ প্রজাতির গাছ আছে। টমেটো, স্ট্রবেরি, বেগুন, পুদিনা, ধনেপাতা ইত্যাদি। হার্ডি আক্ষরিকভাবে বলতে না পারলেও জানিয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি গাছ আছে তার ফার্মে। পেসক্যাল হার্ডি বলছিলেন ভার্টিক্যাল কৃষির সুবিধা নিয়ে, ‘বাগানটি ভার্টিক্যাল হওয়ায় একেকটি টাওয়ারে ৫২টি করে গাছের চারা। যদি এ ভার্টিক্যালি না করতাম, তাহলে এ জায়গাটিতে মাত্র ৯টি চারা লাগানো যেত। এ কৌশল অবলম্বন করে আমরা কিন্তু ফলন বাড়াতে পারছি, কোনোরকম রাসায়নিক ব্যবহার না করেই। আমরা রাসায়নিক সার দিচ্ছি না, কীটনাশক ব্যবহার করছি না।’

আগেই বলেছি, ফার্মটির সেচ পদ্ধতি সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড। পানিতে পরিমাণমতো পুষ্টি যোগ করে ট্যাংক থেকে পানির একটি প্রবাহ নির্দিষ্ট সময় অন্তর টাওয়ারের পাইপগুলোয় দেওয়া হয়। ফলে মাটিহীন গাছগুলোর মূল সব সময় ভেজা থাকে, খাবারও পায় ঠিকঠাক, পানিরও অপচয় হয় না।

নেদারল্যান্ডসের গ্রিনকিউতে এ রকম ভার্টিক্যাল, মাটিবিহীন, ডিপওয়াটার ইরিগেশন টমেটো চাষ দেখেছিলাম একবার। আর এখন তো বাংলাদেশেও মাটিবিহীন চাষব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে ডিপওয়াটার ইরিগেশন আছে। মনে পড়ছে গাজীপুরের প্যারামাউন্ট গ্রুপের কৃষি উদ্যোগটির কথা। পাঠক নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে দোহারে মাটিবিহীন টমেটো চাষের একটি কৃষি উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করেছিলাম। পেসক্যাল হার্ডিও মনে করেন বাংলাদেশের জন্য এ রকম ফার্ম করাটা সহজ হবে। এখানেও টমেটোর চাষ হতে পারে, হতে পারে নানারকম সবজির চাষ। ফার্ম ব্যবস্থাপনার অর্থনৈতিক দিকটা উনিশ-বিশ হলেও এ রকম ফার্ম গড়ে তোলা লাভজনকভাবেই সম্ভব হবে।

যা হোক, এ মৌসুমে এই আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পেসক্যাল প্রতিদিন ৫০০ কেজি করে টমেটো হার্ভেস্ট করেছেন। যেহেতু সেপ্টেম্বর মূলত টমেটো হার্ভেস্টের মৌসুম। ধীরে ধীরে টমেটোর উৎপাদন যখন কমে আসবে, তখন তারা পুদিনা ও শাকজাতীয় সবজি চাষ করবেন। এভাবেই এক ফসল শেষে অন্য ফসলের চাষ চলবে।

পেসক্যাল বলেন, ‘আমি এ ধরনের একটি প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রধান কারণ হলো আমার উদ্দেশ্য পরিবেশের ক্ষতি না করে সতেজ খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি নগরের সবুজায়ন নিশ্চিত করা। আমি দেখাতে চেয়েছি, পরিবেশের ক্ষতি না করেও প্রাকৃতিক স্বচ্ছতা বজায় রেখে ঠিকই অল্প জায়গায় বেশি খাদ্য উৎপাদন সম্ভব। প্রকৃতির যে ক্ষতিগুলো করেছি আমরা, যার কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, আমি চাই সবাই মিলে প্রকৃতির সে ক্ষতগুলো সারিয়ে তুলি।’

বাংলাদেশে আমি ছাদকৃষি নিয়ে কাজ শুরু করেছি সেই আশির দশকে। এখন এর ফল ভালোই পাচ্ছি, নগরের মানুষও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে দিন দিন। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, নগরকৃষক হিসেবে আপনি কি সরকারের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাচ্ছেন? তিনি বললেন, ‘সরকার আমাকে বেশ সাহায্য করেছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়েছি বিপিই নামের পাবলিক ব্যাংকের মাধ্যমে। তারপর ধরুন, প্যারিস শহরের কঠিন নীতিমালা রয়েছে। প্যারিস শহর কর্তৃপক্ষও নানাভাবে নগরকৃষকদের সহায়তা করেন। তারাই নগরকৃষির জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। তাদের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব হতো না।’

পেসক্যাল হার্ডির এ কৃষি উদ্যোগ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি এক স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থাপনা। তারা মূলত একটা সিস্টেম ডেভেলপ করেছে। যে সিস্টেম নগরের পরিবেশকে কোনোভাবেই দূষিত করবে না। এ কৃষি উদ্যোগের কাজগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য একটা কম্পিউটার সিস্টেমও ডেভেলপ করে নিয়েছে। সেচের বিষয়টি তো আগেই বলেছি। দুটি ট্যাংকে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংরক্ষিত আছে যা পানির সঙ্গে পরিমাণমতো মিশিয়ে দেওয়া হয়। এ কম্পিউটার সিস্টেমে বাগানের সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। কোনো সমস্যা হলে আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার স্মার্ট ফোনে তথ্য চলে যাবে। যেহেতু এটা মাটিহীন কৃষি, মাটিতে যেমন এক সপ্তাহ বৃষ্টি না হলে পানি শুকিয়ে যায়, সেখানেও তাই, এক সপ্তাহ সেচ বন্ধ থাকলে সব গাছ মরে যাবে। তাই সব সময় সব ধরনের তথ্য জানা রাখতে হয়। আর তা এই সিস্টেম জানিয়ে দেবে অটোমেটিক। শুধু যে সমস্যার কথা বলবে তা নয়, সমস্যা সমাধানে কী করতে হবে, তাও বলে দেবে।

পেসক্যাল হার্ডি প্যারিসের মতো শহরে হুইল চেয়ারে বসে নিজের খামারে বিচরণ করতে করতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘এটি যুগ পরিবর্তনের এক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত হতে পারে। এটি দেখে সারা পৃথিবীই বিশুদ্ধ খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।’ পেসক্যাল হার্ডির স্বপ্নের প্রাথমিক স্তরটি তো বাস্তবায়ন হয়েই গেছে। পৃথিবীব্যাপী শহরের মানুষের খাদ্য যে শহর থেকেই মেটানো সম্ভব, এ বিশ্বাস আমারও। এ উদ্যোগ দেখে প্যারিস সিটি কর্তৃপক্ষ ভবনের ওপরে ১০০ হেক্টরে আরবান ফার্মিংয়ের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। ২০২২ সালের মধ্যে তারা সম্প্রসারণ করবেন অন্তত ৩০ হেক্টরে। প্যারিসের মানুষ এখন ভবনের ছাদ ভাড়া দেওয়া শুরু করছে আরবান ফার্মিংয়ের জন্য। সেখানে নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে ছাদে উৎপাদিত ফসল নাগরিক বসতি, গাড়ির ধোঁয়া ও অন্যান্য অদৃশ্য বর্জ্য ও বিষবাষ্পের স্পর্শ পায় না। বিষয়টি এখন প্যারিস শহরের সচেতন মানুষ বুঝতে শুরু করেছে। আমাদের কৃষিনির্ভর বাংলাদেশেও নাগরিক কৃষিকে আমরা মানুষের কাছে অপরিহার্য করে তোলার বহুমুখী উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে সরকারও ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে প্রকল্প। সিটি করপোরেশনও ছাদকৃষি উদ্যোক্তাদের কিছু ট্যাক্স মওকুফের উদ্যোগ নিয়েছে। সব মিলিয়ে আমরাও নাগরিক কৃষির কল্যাণে বিষমুক্ত ও সতেজ ফলফসলে নিজেদের চাহিদা পূরণের স্বপ্ন দেখতে পারি। আমরাও মডেল হিসেবে নিতে পারি প্যারিসের বিশাল ছাদকৃষি, ‘ন্যাচার আরবান’কে। আর ধন্যবাদ জানাতে পারি পেসক্যাল হার্ডিকে।

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।  

[email protected]

সর্বশেষ খবর