সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব

মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানুষের উপার্জনের ব্যাপারেও নির্দেশনা রয়েছে এ ধর্মে। ইসলাম ধর্ম নির্দেশিত মূলনীতি ও নীতিমালার আলোকে যে উপার্জন হবে তা হালাল বলে গণ্য হবে। ইসলাম হালাল রিজিক উপার্জন এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকার প্রতি উৎসাহিত করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবজাতি, পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে, তোমরা তা আহার কর এবং কোনোক্রমেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৬৮।

হালাল রিজিক উপার্জন করাকে ইসলাম ইবাদত হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ফরজ ইবাদতসমূহের (নামাজ, রোজা, জাকাত ইত্যাদি) পরে হালাল উপার্জন করাও একটি ফরজ এবং ইবাদতের গুরুত্ব রাখে।’ অন্য হাদিসে এসেছে, ‘কোনো মানুষ এর চেয়ে উত্তম উপার্জন খায়নি যা সে নিজ হাতে উপার্জন করে খায়। নবী দাউদ (আ.)ও নিজ হাতের উপার্জন খেতেন।’ সহিহ বুখারি। আরেক হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই গোশত (দেহ) জান্নাতে যাবে না, যা হারাম (খাবার) থেকে উৎপন্ন। জাহান্নামই এর উপযোগী।’ তিরমিজি।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানুষ নবী ও রসুলরা। তারাও কোনো না কোনো পেশা অবলম্বন করেছেন, শ্রম দিয়েছেন। আদিপিতা আদম (আ.) কৃষক ছিলেন। হজরত নূহ (আ.) কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। হজরত ইদ্রিস (আ.) দর্জি ছিলেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) রাজমিস্ত্রি ছিলেন। হজরত ইসমাঈল (আ.) রাজমিস্ত্রির জোগালি ছিলেন। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ছাগল চরিয়েছেন।

সাহাবায়ে কেরামও নবীজি (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। হজরত আবু বকর (রা.) ব্যবসা করেছেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজের জন্য বাধ্য হয়ে ব্যবসা ছেড়েছেন। হজরত ওমর (রা.)ও ব্যবসা করেছেন। তিনি মুসলমানদের হালাল রিজিক অনুসন্ধানের জন্য কাজ করতে খুব উৎসাহ দিতেন। হজরত ওসমান (রা.) জাহেলিয়াত ও ইসলাম উভয় সময়কালে কাপড়ের ব্যবসা করেছেন। আলী (রা.) তো বিনিময় হিসেবে কিছু খেজুর পাওয়ার জন্য কূপ থেকে পানি ওঠানোর কাজ করতেন। খাব্বাব (রা.) কর্মকার ছিলেন; এটা অনেকেই জানেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) মেষ-বকরি চরাতেন। সাহাবায়ে কেরাম মূলত বিভিন্ন পেশার ছিলেন। আনসাররা সাধারণত কৃষি কাজ করতেন। আর মুহাজিররা সাধারণত ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। নবীজি (সা.) সব কাজই সমানভাবে উৎসাহিত করতেন।  

পক্ষান্তরে অবৈধ উপায়ে উপার্জিত সম্পদ পুরাই ধ্বংস। কোনো কল্যাণ নেই এতে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে বান্দা হারাম সম্পদ অর্জন করে, যদি তা সদকা করে দেয় তবে তাও কবুল হবে না। আর যদি খরচ করে তাহলে তাতে বরকত নেই। মৃত্যুর পর রেখে গেলে তবে জাহান্নামে যাওয়ার উপকরণ।’ (মুসনাদে আহমদ) হারাম সম্পদ কম আর বেশি নয়, এর থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা একমাত্র হালাল খাবার দ্বারাই সমাজজীবন ঠিক থাকে। দোয়া কবুল হয়। সব কিছুতে বরকত হয়।

এ ছাড়াও হালাল খাবার মহান আল্লাহর ভালোবাসা এবং জান্নাত লাভের রাস্তা। দোয়া কবুলের হাতিয়ার। বয়সে বরকত হয় এবং ধনসম্পদ বৃদ্ধি পায় এতে। দুনিয়ার সৌভাগ্য এবং আখেরাতে জান্নাত লাভে সহায়ক হয়। কথায় মিষ্টতা আনে। আমল করার আগ্রহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। হালাল উপার্জনে বংশের মধ্যে বরকত হয়। নিজের পরিশ্রমে উপার্জন মানুষের ভদ্রতার পরিচায়ক। আল্লাহপাক আমাদের হারাম থেকে বাঁচার এবং হালালের কদর করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ।

 

সর্বশেষ খবর