শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

দেনমোহর নারীর অধিকার

মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী

দেনমোহর নারীর অধিকার

ইসলাম নারীকে দিয়েছে যথাযোগ্য অধিকার ও সম্মানজনক মর্যাদা। প্রতিহত করেছে জুলুম-অত্যাচার। মানুষ হিসেবে পুরুষের মতোই সম্মানের আসনে আসীন করেছে বংশের আধার ও গর্ভের ধারক নারীকে। সম্মান-মর্যাদার খাতিরে বানিয়েছে পরিত্যক্ত সম্পত্তির অধিকারী। নারীর ইজ্জত-সম্মান, মর্যাদা বৃদ্ধি এবং মানব রক্ষার সম্মান প্রকাশ করার জন্যই বিয়ের সময় ইসলাম পুরুষের ওপর দেনমোহর আবশ্যক করেছে। স্বামীরা সন্তুষ্টচিত্তে পরিশোধ করে দেবে এ দেনমোহর। এটা ইসলামের অনুপম সৌন্দর্য।

ইসলামে দেনমোহরের গুরুত্ব অপরিসীম। এ ছাড়া নারীর সতীত্বই বৈধ হয় না। দেনমোহর না দেওয়ার নিয়তে বিয়ে ব্যভিচার-সমতুল্য। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদের, যাদের দেনমোহর তুমি প্রদান করেছ।’ সুরা আহজাব, আয়াত ৫০। মোহরানা বিয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রায় সব আলেম একমত, বিয়েতে ইজাব-কবুলের সময় দেনমোহরের আলোচনা না হলেও স্ত্রী দেনমোহরের অধিকার রাখে। অন্তরে পরিশোধের নিয়ত না থাকলে তার ব্যাপারে হাদিসে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে দেনমোহর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিয়ে করেছে, কিন্তু দেনমোহর পরিশোধের ইচ্ছা নেই, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে ব্যভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।’ মুসনাদে আহমাদ। বিয়ের পর নির্জনবাসে যাওয়ার আগেই স্ত্রীকে দেনমোহরের কিছু হলেও দেওয়া মুস্তাহাব। রসুলে আকরাম (সা.) হজরত আলী (রা.)-কে নির্দেশ দিয়েছেন, কিছু দেওয়ার আগে বিবির কাছে যেও না। হজরত আলী (রা.) ওজর দেখালেন, আমার কাছে তো কিছুই নেই। রসুলে করিম (সা.) বললেন, তোমার কাছে যে লোহার বর্মটি ছিল সেটি কোথায়? ওটাই ফাতিমাকে (রা.) দিয়ে দাও। হজরত আলী (রা.) নির্জনবাসে যাওয়ার আগেই বর্মটি ফাতিমাকে (রা.) দিয়ে দেন।’ আবু দাউদ।

বিয়েতে দেনমোহর অত্যাবশ্যকীয়। তবে তা নির্ধারণে ভারসাম্য কাম্য। অত্যধিক দেনমোহর নির্ধারণ ভালো নয়। খুব সহজে স্বামী পরিশোধ করতে পারে এতটুকু দেনমোহর ধার্য করা উত্তম। এ প্রসঙ্গে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সে নারী বরকতের মধ্যে আছে যাকে প্রস্তাব দেওয়া সহজ ও যার দেনমোহর অল্প-স্বল্প।’ মুসনাদে আহমাদ। দেনমোহর বেশি হওয়া যদি কাম্য হতো এবং বিষয়টি পছন্দনীয় হতো তাহলে মহানবী (সা.)-এর বিবিগণ এবং তার কন্যাদের দেনমোহর বেশি হতো নিঃসন্দেহে। অথচ নবীর স্ত্রীদের দেনমোহরও ১২ উকিয়া (৫০০ দিরহাম) তথা ১৫০ তোলা রুপার অধিক ছিল না। একমাত্র হজরত উম্মে হাবিবা (রা.)-এর মোহরানা ৪ হাজার দিরহাম ছিল। আবিসিনিয়া সম্রাট নাজ্জাশি তা পরিশোধ করে দিয়েছিলেন। নবীকন্যা হজরত ফাতিমা (রা.)-এর মোহরানাও ৫০০ দিরহামই ছিল। দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর জমানায় লোকেরা অত্যধিক দেনমোহরের প্রতিযোগিতা শুরু করলে তিনি শুনে অনেক কঠিন সতর্কবাণী শোনানোর কথা হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। ফাতিমা (রা.)-এর দেনমোহর হিসেবে মোহরে ফাতিমি ধার্য করার যে রীতি সমাজে চলমান তা কিন্তু সুন্নত নয়। সুন্নত হলো স্বামীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে মহিলার সম্মানও যাতে ঠিক থাকে এ পরিমাণ দেনমোহর ধার্য করা। মোট কথা দেনমোহর স্ত্রীর প্রাপ্য। তবে সামর্থ্য অনুযায়ী মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি এবং অহংকার প্রদর্শন একেবারেই অনুচিত। এ দেনমোহর বিয়ের সময় বা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুশিমনে পরিশোধ করা একান্ত কর্তব্য। টালবাহানা করা বা একেবারেই না দেওয়া স্ত্রীর ওপর এক ধরনের জুলুম; যা কোনোভাবেই জায়েজ নয়।

লেখক : মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর