রবিউল আউয়াল অর্থ প্রথম বসন্ত। হিজরি বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস। আরবি মাসগুলোর মধ্যে রবিউল আউয়াল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ মাসের সঙ্গে মানব ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় জড়িত। যার অন্যতম হচ্ছে, এ মাসেই হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ পৃথিবীর বুকে আগমন করেন। আবার এ মাসেই তিনি নিজ প্রভুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। সুতরাং জন্মের দিক তাকালে এ মাস বিশ্ববাসীকে পুলকিত করে, আর প্রস্থানের দিকে তাকালে এ মাস মুসলিম বিশ্বকে শোকাহত করে। এসব কিছু ছাপিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ একটা উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি আল্লাহ, যিনি পাঠিয়েছেন তাঁর প্রেরিত রসুলকে হিদায়াত (পথনির্দেশ) ও সত্য দীন (জীবনবিধান)-সহকারে; যাতে প্রকাশ্য বিজয়ীরূপে স্থাপন করতে পারেন দীন ইসলামকে অন্য সব দীনের (বিধান ও মতবাদ) ওপর; আর সাক্ষী ও সাহায্যকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ সুরা আল ফাতহ, আয়াত ২৮।
এ ছাড়া রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়ায় পাঠানোর উদ্দেশ্য স্পষ্ট করার জন্য কোরআনে বিভিন্ন সুরা ও আয়াত নাজিল হয়েছে। একটি আয়াতে আল্লাহ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সত্যসহ, সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবে।’ সুরা আল বাকারা, আয়াত ১২৯। অন্য আয়াতে আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! নিশ্চয় আমি আপনাকে সাক্ষী, শুভসংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ককারী হিসেবে পাঠিয়েছি।’ সুরা আল আহজাব, আয়াত ৪৫। এমনিভাবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত হননি। এমনকি তিনি কোনো বিশেষ দেশ বা অঞ্চলের জন্যও প্রেরিত হননি; বরং তিনি প্রেরিত হয়েছেন সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সমগ্র মানবতার জন্য সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবে; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই জানে না।’ সুরা আস সাবা, আয়াত ২৮।
এক হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই নিজের আসার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে স্বয়ং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি প্রেরিত হয়েছি মানবজাতির চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধনের নিমিত্ত।’ তিরমিজি।রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে আরও বলেন, ‘আমি আসলে শিক্ষকরূপেই প্রেরিত হয়েছি।’ মুসলিম। এমনিভাবে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ শুধু সাধারণ দু-একটি ছোটখাটো উদ্দেশ্য নিয়ে দুনিয়ায় পাঠাননি; বরং বিশ্বমানবতার পরিপূর্ণ কল্যাণের উদ্দেশ্যেই তাঁকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, ‘হে নবী! আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।’ সুরা আম্বিয়া, আয়াত ১০৭।
লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদ্রাসা ঢাকা।