শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বনরুই

বনরুই

বনরুই আঁশে ঢাকা, দন্তহীন স্তন্যপায়ী প্রাণী। পৃথিবীতে বনরুইয়ের প্রজাতি সাতটি, তার মধ্যে এশিয়ায় তিনটি। এশীয় বনরুইয়ের তিন প্রজাতিই বাংলাদেশে আছে। মাছের মতো আঁশযুক্ত পিপীলিকাভুক এ জন্তুটি বাংলাদেশে অতিবিপন্ন। এদের শরীর ও লেজ গাঢ় বাদামি রঙের। বুক ও পেটে সামান্য লোম; আঁশের ফাঁকে ফাঁকেও লোম দেখা যায়। নাক সরু ও চোখা। জিব লম্বা ও আঠালো। চোখ ও কান সরু। সামনের নখরগুলো পেছনের নখরের তুলনায় দ্বিগুণ লম্বা। মাথাসহ শরীরের দৈর্ঘ্য ৬০ থেকে ৭৫ সেমি, লেজ ৪৫ সেমি। শরীর নিচু ও প্রায় মাটিছোঁয়া। পিঠ, পাশ, হাত-পায়ের ওপর দিক ও গোটা লেজ বড় বড় ত্রিকোণ শক্ত আঁশে ঢাকা। নিচের চামড়া থেকে আঁশ গজায় এবং বুকের দিক ছাড়া গোটা শরীর রক্ষা করে। আঁশ একেকটি করে ঝরে পড়ে ও নতুন করে গজায়। ভয় পেয়ে বলের মতো শরীর গুটিয়ে ফেলে, আঁশগুলো খাড়া করলে বনরুইকে শজারুর মতো দেখায়। এরা দুর্গন্ধযুক্ত এক ধরনের তরল নিঃসরণ ঘটাতে পারে। বনরুই বড় ও মজবুত নখর দিয়ে কাঠের শক্ত গুঁড়ি ফেড়ে ফেলে এবং লম্বা ও আঠালো জিব দিয়ে পোকামাকড় চেটে খায়। বুকে অবস্থিত গ্রন্থি পর্যাপ্ত লালা জুগিয়ে জিব ভিজিয়ে রাখে। পিঁপড়া ও উইয়ের ঢিবি ভাঙার জন্য এরা সামনের পায়ের বাঁকা নখরগুলো কাজে লাগায়। নাকে ঢাকনি রয়েছে এবং পিঁপড়া খাওয়ার সময় পুরু চোখের পাতা পিঁপড়ার কামড় থেকে চোখগুলো বাঁচায়। নখরগুলো গুটিয়ে সামনের পায়ের ওপর ভর দিয়ে শরীর টেনে টেনে হাঁটে, কিন্তু শুধু পেছনের পায়ে ভর দিয়ে লেজের সাহায্যে ভারসাম্য রেখে দৌড়াতে পারে। এরা নিশাচর, দিনের বেলায় নিজের খোঁড়া ২০০-৫০০ সেমি গভীর গর্তে কিংবা পাথরের মাঝখানে শরীর গুটিয়ে লুকিয়ে থাকে। বছরে একটি বা দৈবাৎ দুটি বাচ্চা প্রসব করে।

দেশের পূর্ব ও উত্তরের জেলাগুলোর পত্রঝরা শালবন বা মিশ্র-চিরসবুজ বনে এদের বাস। অনেকে বনরুইয়ের মাংস খায়। বাসস্থান ধ্বংসের জন্যই এরা মূলত বিপন্ন। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়ও বনরুই আছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর