রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের সাফল্য

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

বাংলাদেশের সাফল্য

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মাথাপিছু জিডিপি হিসেবে এ বছর ভারতকে টপকে যাবে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের এ তথ্য দেখে বাংলাদেশ গর্ববোধ করতে পারে। বাংলার জনগণ কতটা খুশি তা ইতিমধ্যে বিশ্ব জেনে গেছে। এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর পরিশ্রম ও সুপরিকল্পিত অর্থনীতিতে। তাঁর উপদেষ্টামন্ডলীর মধ্যে এমন কয়েকজন জাঁদরেল অর্থনীতিবিদ আছেন যাদের কঠোর পরিশ্রম ও দূরদৃষ্টির ফল এ অর্জন।

স্বাধীনতার পর সোনার বাংলা গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু দেশ পুনর্গঠনে একটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা করেন। বঙ্গবন্ধু দেশ পুনর্গঠন ছাড়াও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের রূপরেখাও তৈরি করেন। নতুন পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান হন অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান। নতুন এ কমিশনের অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ইন্দিরা গান্ধী অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ অর্জুন সেনগুপ্তকে (ঢাকায় যার জন্ম) ভারতীয় হাইকমিশনের আর্থিক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ড. রেহমান সোবহান এবং অর্জুন সেনগুপ্ত মিলে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আধুনিক রূপরেখা দেওয়ার উদ্যোগ নেন।

তারপর তো লম্বা ইতিহাস। জিয়া-খন্দকার তথা স্বাধীনতাবিরোধীরা প্রায় ২১ বছর ধরে বাংলাদেশকে পদানত রাখে। জিয়ার বিধবা স্ত্রী খালেদাকে সামনে রেখে পাকিস্তান তাদের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইকে দিয়ে যথেচ্ছতার সুযোগ নিয়েছে। আইএসআইয়ের দোসর স্বাধীনতাবিরোধী আমেরিকা। এমনকি একবার আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট হিলারি ক্লিনটনও এ ষড়যন্ত্রের ভাগীদার ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুতনয়া ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন। এমনকি আমেরিকার তাঁবেদার বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতুর জন্য অর্থ দিতে অস্বীকার করে, তখন শেখ হাসিনা ৭ মার্চের পিতার ঐতিহাসিক ভাষণের মতো ঘোষণা করেন- পদ্মা সেতু হবে। আওয়ামী লীগ সরকারই তৈরি করবে। পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুতগতিতে চলছে, এও শেখ হাসিনার গর্ব।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, লিঙ্গসাম্য, পুষ্টি, মানব উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ ভারতের তুলনায় এগিয়ে আছে। শেখ হাসিনা সরকারের এ সাফল্যে অনেক দেশ ঈর্ষান্বিত। পরের অনিষ্ট করতে চাইলে নিজের অনিষ্ট আটকানো যায় না।

বাংলাদেশের এ সাফল্যে ভারতের উচিত ছিল হাসিনা সরকারকে অভিনন্দন জানানো। পরিবর্তে গেরুয়া বাহিনীর গোয়েবলসরা বলতে শুরু করছে, ভারতের অগ্রগতি বিশ্বের দরবারে পৌঁছেনি। ডাহা মিথ্যা গল্প বলে কথা। নিজেদের ঢাক পেটানোর ব্যাপারে মোদি সরকারের কোনো বিকল্প পাওয়া দুষ্কর।

ভারতে করোনাকালে কলকারখানা বন্ধ হওয়ায় ১২ কোটি শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার সময় মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বছরে ২ কোটি বেকারের কর্মসংস্থান হবে। মোদি জমানায় ২ লাখ লোকও কাজ পায়নি। এ তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। মোদির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে প্রত্যেক নাগরিককে ১৫ লাখ করে দেওয়া হবে। কেঁচো খুঁড়তে দেখা গেল সাপ! মোদির কিছু গুজরাটি বন্ধু যারা টাকা পাচার করে মোদির জমানায় সুইস ব্যাংকে জমিয়েছেন, যাদের মধ্যে আছেন মোদির বন্ধু নীরব মোদি। পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি।

২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসে মোদি ঘোষণা করেছিলেন- ভারত চলবে গুজরাট মডেলে। সে সময় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছিলেন গুজরাট মডেল ভুয়া। গুজরাটে মোদির আমলে (১০ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন)। অনাহারে-অর্ধাহারে বহুলোক মারা গেছে। সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল গেরুয়া বাহিনী। তারা বলে উঠল- অমর্ত্য সেন অর্থনীতি বোঝেন না।

আর্থিক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সাফল্যের জন্য টুইট করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মোদি সরকারের নির্দেশে গেরুয়া বাহিনীর চ্যানেল এক সেকেন্ডও এ খবর প্রচারে খরচ করেনি। কলকাতার মমতাপন্থি চ্যানেল বা কাগজও খুব একটা প্রচার করেনি। একমাত্র আনন্দবাজার ও টেলিগ্রাফ ছাড়া। আনন্দবাজারের সম্পাদকীয়তে শিরোনাম ছিল ‘প্রকৃত লজ্জা’...। এতে বলা হয়, ‘মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে এই বৎসর ভারতকে টপকাইয়া যাইবে বাংলাদেশ, এই সংবাদে কাহারও জাতীয়তাবাদী আবেগে আঘাত লাগিলে আশ্বস্ত করা যাইতে পারে, খুব সম্ভবত পরের বৎসরই ভারত ফের আগাইয়া যাইতে পারে। এই আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যদ্বাণীটির মধ্যে অবশ্য একটি পূর্বানুমান আছে- ভারতীয় অর্থনীতির কর্তারা সেই একটি বৎসর সামলাইয়া থাকিবেন, ডিমনিটাইজেশন গোত্রের কোনও আত্মঘাতী পথে হাঁটিবেন না; অথবা, অর্থব্যবস্থা পরিচালনায় এতদিন তাঁরা যতখানি অপারদর্শিতার প্রমাণ দিয়াছেন, তার অধিক অপারদর্শী হইয়া উঠিবেন না। পূর্বানুমানগুলো কতখানি সঙ্গত, সেই প্রশ্ন আপাতত মুলতুবি থাকুক। এই কথাটিও স্মরণ করাইয়া দেওয়া বিধেয় যে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আয়বৃদ্ধির পশ্চাতে একটিমাত্র ক্ষেত্রের ভূমিকা প্রবল- তার নাম বস্ত্র উৎপাদন। এই একটি শিল্পে বাংলাদেশ সত্যই আন্তর্জাতিক উৎপাদনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারিয়াছে। “মেক ইন ইন্ডিয়া”, “আত্মনির্ভর ভারত” ইত্যাদি হুঙ্কারও ভারতকে উৎপাদনের কোনও একটি ক্ষেত্রে এমন মহাশক্তি করে তুলিতে পারেনি, এই অনস্বীকার্য সত্যটিকে মাথায় রেখে বলতে হয়, একটিমাত্র ক্ষেত্রের ওপর নির্ভরশীল আর্থিক বৃদ্ধি বিপজ্জনক। মাথাপিছু জাতীয় আয়ের অঙ্কে, এক বৎসরের জন্য হইলেও, ভারতকে টপকাইয়া যাইবার সম্ভাবনা তৈরি করা বাংলাদেশের একটি বিশেষ কৃতিত্ব, তাহা সংশয়াতীত, কিন্তু ইহাই শেষ কথা নহে।’

একদিকে করোনা মহামারী অন্যদিকে আর্থিক শোচনীয় অবস্থার মধ্যে দেশের ১৩৫ কোটি লোক অতিষ্ঠ। কেন্দ্রের শাসক গেরুয়া বাহিনী ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে, উৎসব মৌসুমের পর এআরসি প্রসঙ্গে নতুন করে কাজ শুরু হবে। তাদের ভাষ্য, ভারতে বসবাসকারী কয়েক কোটি মানুষকে বের করে দেওয়া হবে।

 

                লেখক : ভারতীয় প্রবীণ সাংবাদিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর