সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

কেমন ছিলেন রসুল (সা.)

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

কেমন ছিলেন রসুল (সা.)

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সহিষ্ণুতার প্রতীক। শত অত্যাচার-নির্যাতনে স্বদেশভূমি ত্যাগ করেও তিনি রব্বুল আলামিনের মহান বাণী প্রচারে ক্ষান্ত হননি। তিনি জানতেন আজ যারা তাঁর দীন প্রচারে বিরোধিতা করছে, কিংবা বাধার সৃষ্টি করছে, কাল তারা ইসলামের আলো হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করবে। তাই তাঁর জীবদ্দশায় যারাই তাঁর শত্রু ছিল তাদের সবাইকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তঃকরণ ছিল সমবেদনায় পরিপূর্ণ। বিরোধীদের সব অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে তাঁর ধৈর্য ও সহ্য ছিল সীমাহীন। তাঁকে যারা কষ্ট দিত, তাদের তিনি খুশিমনে ক্ষমা করতেন। যারা তাঁর ক্ষতি করত, তাদের তিনি মহান ঔদার্যের মাধ্যমে প্রতিদান দিতেন! যারা তাঁকে বঞ্চিত করত, তাদের তিনি অকাতরে দান করতেন। যারা জুলুম করত, তাদের প্রতি তিনি ছিলেন উদার। তাঁর বৈপ্লবিক জীবনে শত্রুর প্রতি দয়া ও ক্ষমার ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত দেখা যায়। তিনি হিজরতের আগে তায়েফে ইসলাম প্রচার করতে যান, তখন সেখানকার মানুষ তাঁকে অকথ্য অত্যাচার করে তাড়িয়ে দেয়। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, হে আল্লাহ! এরা কী করেছে, তা এরা বুঝতে পারছে না। তুমি এদের অন্তঃকরণে জ্ঞানের আলো প্রজ্বলিত কর।

তিনি নিজে কখনো কারও ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। নিজ হাতে কোনো মানুষ এমনকি কোনো জীবজন্তুকে পর্যন্ত আঘাত করেননি। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি কখনো নিজের তরফ থেকে কারও জুলুমের বদলা নিতে দেখিনি। অবশ্য কেউ আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করলে তাঁর চেয়ে বেশি রাগান্বিত হতেও আমি কাউকে দেখিনি। বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে প্রচুরসংখ্যক শত্রু বন্দী হয়। এর অনেককেই রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্তিমূল্য, শিক্ষাদান আর যারা নিঃস্ব-গরিব তাদের এমনিতেই মুক্তি দিয়েছিলেন। শত্রুদের প্রতি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহানুভবতা ও আচরণের আর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া। ওহুদের যুদ্ধে এই নারী শহীদ হামজার কলিজা চিবিয়েছিলেন। হামজার হত্যাকারী ওহুশিকে দেখে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শোক সংবরণ করতে পারেননি। তাই ওহুশিকে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমাকে ক্ষমা করলাম, তবে তুমি আর আমার সামনে এসো না।’ শত্রুর প্রতি তাঁর ছিল এমন দয়া ও দাক্ষিণ্য। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবার প্রতি তাঁর অন্তর ছিল উদার ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। চরম শত্রুও তাঁর অপূর্ব ক্ষমা ও দয়ায় হয়ে যেত বিমুগ্ধ।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর