বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
শিক্ষাঙ্গন

জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়

আফতাব চৌধুরী

ছাত্রজীবন হচ্ছে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। বিদ্যার্থীর অর্থ হলো- বিদ্যা যে গ্রহণ করে। ছাত্রজীবন সুখের। আবার ছাত্রজীবনের গুরুত্ব ও দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি, কর্তব্য সর্বাপেক্ষা কঠোর। এটাই জীবন গড়ার সময়, কর্মজীবন গঠনের প্রস্তুতি পর্ব। সংযম, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার দ্বারা পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়সহকারে দেহ, মন ও মস্তিষ্কের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ করতে হয়, জীবন সংগ্রামে সৈনিক হয়ে কঠোর দুঃসময়েরও মোকাবিলা করতে হয়। বলিষ্ঠ মেধাবী জীবন, শ্রদ্ধাশীল, নিষ্ঠাবান, উন্নত চরিত্র, বহুজন হিতায় মহৎ কর্মপ্রয়াস- ছাত্রজীবনের মহত্তম আদর্শ। বাল্যকাল ও যুবাবস্থার প্রথম জীবনে অর্থাৎ ২৫ বছর ছাত্রজীবনের উৎকৃষ্ট সময়। এই সময়ে ছাত্ররা সব চিন্তা থেকে মুক্ত থাকে ও বিদ্যাভ্যাসের প্রতি নিজেকে সমর্পণ করে। সে সময় শিক্ষাগুরুর অধিক মহত্ত্ব। ছাত্রজীবন তপস্যার, সাধনার। এ অধ্যয়নই সর্বোত্তম তপস্যা, কিন্তু একমাত্র নয়। ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যৎ, দেশের নায়ক। পরিবার, সমাজ ও দেশের প্রতিও তাদের কর্তব্যবোধ থাকা জরুরি। সেজন্য ছাত্রদের সুস্বাস্থ্য, মনে অদম্য উৎসাহ ও সাহস, বুদ্ধি সজাগ, সহিষ্ণু ও অনুশাসনময় হতে হবে। অনুশাসনের অর্থ হলো, নিয়মের মধ্যে থেকে কাজ সম্পন্ন করা। অনুশাসন কেবল ছাত্রদের নয়, প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনের তাৎপর্য আছে। বিনা অনুশাসনে কোনো ব্যক্তি সুসম্পন্নভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারে না। অনুশাসনবদ্ধ ছাত্ররাই দেশকে উন্নত থেকে উন্নততর করতে পারে। ছাত্রজীবনে অনুশাসনের বিশেষ গুরুত্ব আছে। ছাত্রজীবনে ব্যায়াম চর্চার দ্বারা শারীরিক স্বাস্থ্য ও শক্তি অর্জন করা, পাঠ্যগ্রন্থবহির্ভূত বিবিধ উৎকৃষ্ট গ্রন্থ পাঠ দ্বারা জীবনে জ্ঞান ও আনন্দ লাভ করা, সাংসারিক বা কোনো বৃত্তিবিষয়ক কাজ করা, আত্মিক জীবন সমৃদ্ধ করা, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা ছাত্রছাত্রীদের অবশ্য কর্তব্য। শিক্ষা লাভ বা জ্ঞানার্জন আমাদের জীবনব্যাপী সাধনা হতে পারে। কিন্তু তার সঙ্গে আমাদের জীবনের ভিত্তি এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যার দৃঢ়তা ও স্থিরতার ওপর ভবিষ্যতের জীবনসৌধের উন্নতি ও উৎকর্ষ নির্ভর করে। তাই এ মূল্যবান দিনগুলো কাজে লাগাতে হবে। অবহেলায়, গল্পগুজবে না কাটিয়ে নিজেকে বিদ্যাচর্চায় সমর্পিত করতে হয়।

বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, স্বাস্থ্যে, শক্তিতে, সংযমে, সেবায়, শ্রদ্ধায়, ত্যাগে পরিপূর্ণভাবে নিজেকে যোগ্য হতে হয়। আদর্শ বিদ্যার্থীকে সব সময় উচ্চ বিচারে বিশ্বাসী হতে হয়। বিদ্যার্থীকে বিনম্্র অনুশাসনপ্রিয়, জিজ্ঞাসু, সংযমী আদি গুণসম্পন্ন হতে হয়। বিদ্যা সব সময় আমাদের বিনম্রতার পাঠ পড়ায়।

সংযম, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতায় ছাত্রাবস্থায় জীবনকে সুগঠিত করার পক্ষে অপরিহার্য। ভবিষ্যতে সুযোগ্য নাগরিকরূপে দায়িত্বপূর্ণ কার্যভার গ্রহণ করার যোগ্যতা তাদের দ্বারা সম্পন্ন হবে। ভবিষ্যতে যারা দেশের কর্ণধার হবে, তাদের পক্ষে এ তিনটি গুণ একান্ত প্রয়োজনীয়। ছাত্রাবস্থায় জীবনের আদর্শ স্থির করে জীবনপথে অগ্রসর হতে হবে। বিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রসমাজের অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ছাত্রদের চিন্তাশক্তি, যুক্তি, বিচার-বিবেচনা, দূরদৃষ্টি, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সবকিছুই দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করতে হবে। তাহলে দেশ উন্নত থেকে উন্নততর হবে। ছাত্রজীবনে শিক্ষার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। শিক্ষাই তো ছাত্রজীবন গড়ার মূল চাবিকাঠি। শিক্ষা ও ছাত্রজীবন একে-অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর