শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা মহামারী ও আমাদের স্বাস্থ্য ভাবনা

মেজর জেনারেল ড. মো. সরোয়ার হোসেন (অব.)

করোনা মহামারী ও আমাদের স্বাস্থ্য ভাবনা

যখন লেখাটি লিখছি তখন করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশে মৃতের সংখ্যা অনেক আগেই চীনের মোট মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের ও আক্রান্তের তুলনামূলক সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান খারাপ নয়। আর প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি বেশ ভালোই বলা হয়। যখন ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনা প্রাদুর্ভাবের দ্বিতীয় আক্রমণ দরজায় কড়া নাড়ছে তখন বাংলাদেশ খানিকটা স্বস্তিবোধ করতেই পারে। দীর্ঘ ১০ মাস যুদ্ধের পরও করোনা ভ্যাকসিনের তেমন আশাব্যঞ্জক খবর নেই। স্থানীয় ভ্যাকসিনের সক্ষমতা আর আমলাতান্ত্রিকতা- কারও ওপরই ভরসা করা যায় না। যদিও ১৭০টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন আবিষ্কারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে, তার পরও ২০২১-এর আগে ভ্যাকসিন বাজারে আসছে না। সম্প্রতি আরও জানা গেল, ঢাকাবাসীর অর্ধেকই করোনা আক্রান্ত। এ অবস্থায় আমাদের জন্য করোনায় ঝুঁকি কমে আসুক আর সতর্কতা অটুট থাকুক। এ বিষয়ে আমরা করোনা মোকাবিলায় সফল দেশগুলোর অভিজ্ঞতা ভাগাভাগিসহ করোনাযুদ্ধের পুরো সময়টাকে ফিরে দেখতে পারি।

করোনা মোকাবিলায় পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। যখন বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৬৮১ তখন থাইল্যান্ডে ৫৯, মালয়েশিয়ায় ১৯০, তাইওয়ানে ৭, ভিয়েতনামে ৩৫ ও সিঙ্গাপুরে ২৮ জন মৃত্যুবরণ করে। এ দেশগুলো জাতিগত প্রকৃতি ও ভৌগোলিক দিক থেকে চীনের কাছাকাছি। এরা সবাই প্রথম থেকে অধিক সংখ্যায় পরীক্ষা, আক্রান্তদের আলাদা করা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের সামর্থ্য ও সক্ষমতার অভাব ছিল বলেই এ ব্যাপারে আমাদের বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার ছিল। বছরের প্রথম দিকে আগত প্রবাসীদের মাধ্যমেই দেশে করোনা সংক্রমিত হয়েছে। প্রথম দিকে দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের বিশাল জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা না করতে পারার জন্যই তা মহামারীর আকার ধারণ করেছে। আমরা অনেকটা চৌবাচ্চার মাছ পুকুরে ছেড়ে দিয়ে খুঁজে বেড়ানোর চেষ্টা করছি। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারলে করোনা সংক্রমণ আরও সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত। ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রহস্যজনক ঝঅজঝ ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়ার বিষয়টি জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সিঙ্গাপুর, হংকং ও তাইওয়ান তিন দিনের মধ্যে সীমান্ত চৌকিতে নজরদারি জোরদার করে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পরই উহানফেরত সব যাত্রীকে বিমান থেকে নামতে দেওয়া হয়। করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

যখন থেকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে, কোনো প্রকার উপসর্গ ছাড়াও যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তখন প্রচুর সংখ্যায় ও সহজলভ্যভাবে করোনা পরীক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রযুক্তি ও সক্ষমতা অর্জন জরুরি ছিল। আমরা গণস্বাস্থ্য আবিষ্কৃত কিটের সরকারি অনুমোদনের ব্যাপারে উল্টো চিত্রই দেখলাম। দায়িত্বশীল দফতরগুলোর অক্ষমতা ও সিদ্ধান্তহীনতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশে ব্যবহৃত টেস্টিং কিটের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল অপ্রতুল। তার ওপর পাশ্চাত্যের চেয়ে করোনার আঘাত আমাদের দেশে বেশ সহনীয় পর্যায়ে ছিল। যদিও এর জন্য সংশ্লিষ্টরা কারণ খুঁজে বেড়িয়েছেন যার মধ্যে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া, বিসিজি টিকা থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন, ম্যালেরিয়া আক্রান্তের ইতিহাস ও এ উপমহাদেশে ভাইরাসের দুর্বল জেনম উল্লেখযোগ্য। বলা বাহুল্য, ইনফেকশন ডিজিজ এক্সপার্টের পেছনে কোনো জোরালো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ প্রাদুর্ভাবের সময়ও স্বার্থান্বেষী মহল কিছু সরকারি কর্মকর্তার সহযোগিতায় অসাধু ব্যবসায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাস্ক, টেস্টিং কিট ও সার্টিফিকেট জালিয়াতির মতো অনেক ঘটনা আর বিভিন্ন চরিত্র পত্রিকার পাতা আর টেলিভিশনের পর্দা জীবন্ত করে তোলে। তবে সবচেয়ে অবাক করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের গাড়িচালক যে কিনা বিত্তবৈভবে ফুলে ফেঁপে নজির সৃষ্টি করেছেন। প্রশ্ন রয়ে যায়, এ অনিয়মগুলো তো এক দিনে জন্মায়নি। এমন কোনো ঘটনা প্রকাশ পেলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মিডিয়া এগুলো নিয়ে এতটাই বাড়াবাড়ি করে যে, অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই আড়াল পড়ে যায়। এমনকি বিভিন্ন হাসপাতালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান ও চিকিৎসককে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পেলাম। যেখানে করোনার প্রাদুর্ভাব আমাদের সর্বোচ্চসংখ্যক চিকিৎসকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, তখন এ বিষয়গুলো বেশ অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে।

২০০৭ সালে সরকারি কাজে আমি চট্টগ্রাম শহরে নিয়োজিত ছিলাম। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটার পর একটা খাদ্যগুদামে ঝটিকা সফর করে সেগুলো সিলগালা করে দিচ্ছিল। সাময়িকভাবে এ সংবাদগুলো বাহবা কুড়ালেও এর দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রভাব ছিল খুবই নেতিবাচক। সাপ্লাই চেইন ভেঙে গিয়ে খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছিল। হাসপাতালে পরিচালিত অভিযানগুলোকেও আমার ঠিক তেমনি মনে হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে এমনিতেই সব রোগী ছিল ঘরমুখী। এমনকি জটিল অসুখে আক্রান্ত অনেক রোগী হাসপাতালে যাওয়া থেকে নিজেদের নিবৃত্ত রাখে। অনুরূপ, অভিযান পরিচালনার আগে অপ্রতুল চিকিৎসা সুবিধা ও অসহায় রোগীদের দুর্ভোগের বিষয়গুলো বিবেচনা করা জরুরি।

চোখে আঙ্গুল দিয়ে না দেখিয়ে দেওয়া পর্যন্ত কেউ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে চায় না। এ প্রবণতা যেন আমাদের পিছু ছাড়ছে না। এমনকি পরিস্থিতি খানিকটা ভালো হওয়ার পর যখন বহির্দেশে বিমান গমনাগমন শুরু হলো, তখন বহু প্রবাসী ভুয়া করোনা সনদ নিয়ে বিদেশের মাটিতে দেশের মানসম্মান বিসর্জন দিল। তখনো দায়িত্বশীল মহল থেকে বলতে শোনা গেল, করোনা সার্টিফিকেট নিয়ে যাওয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়ে তাদের আগে জানানো হয়নি। এমন একটি যুক্তি মেনে নেওয়া যেতেই পারে কিন্তু দায়িত্ব ও সাধারণ জ্ঞান বলেও তো একটা বিষয় রয়েছে, এর কী হবে? অ্যান্টিজেন টেস্ট নিয়েও সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্তহীনতা ছিল হাস্যকর। এ পরীক্ষাটি যখন বেশ কতগুলো দেশে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে আসছিল তখন বাংলাদেশে এ পরীক্ষাটি প্রথমে নিষিদ্ধ করলেও চার-পাঁচ মাস পর অনুমোদন করল। এখন শোনা যাচ্ছে, শুধু সরকারি অফিস /স্থাপনা পূর্বানুমতি নিয়ে এগুলো আমদানি করতে পারবে। অ্যান্টিজেন টেস্ট কী তা বুঝতেই কি আমাদের এ সময় ক্ষেপণ? অভিযান করে নয়, আমাদের এমন একটা পদ্ধতি দরকার যাতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে কেউ দুর্নীতি বা জালিয়াতির সাহস না পায়। করোনা যে শুধু স্বাস্থ্য খাতসহ এ প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় আমাদের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে তা নয়, অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি করোনার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন। সরকার প্রকাশিত দৈনন্দিন স্বাস্থ্য বুলেটিনে উল্লেখের সংখ্যার বাইরেও অনেক মৃত্যু খবর শুনতে পেয়েছি। অন্যান্য জটিল রোগীসহ সন্তানসম্ভবা নারীরা এ প্রাদুর্ভাবের সময় কতটা জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন তা বর্ণনার ভাষা নেই। সুনির্দিষ্ট নির্দেশের অভাবে অসুস্থ রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও দেশের মানুষ তার চিকিৎসার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ খরচ নিজে বহন করে।  Bangladesh National Health Accounts-এর তথ্যানুযায়ী দেশে Out Of Pocket খরচের পরিমাণ ৬৭%, যা বিশ্ব মানদন্ড অনুযায়ী ৩২%। চিকিৎসা খরচ মেটাতে গিয়ে বহু মানুষ চরম আর্থিক বিপর্যয়ে পতিত হয়। জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালার সুপারিশ সত্ত্বেও Out Of Pocket খরচ কমিয়ে আনতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়েনি। করোনা-পরবর্তী বাজেটে চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ জিডিপির প্রায় ১.৩% হলেও সার্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে না। কোনো দেশের স্বাস্থ্য খাতে জনপ্রতি খরচকৃত অর্থ ওই দেশের স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতা প্রকাশ করে। বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে আমাদের জনপ্রতি ব্যয় ৩১ মার্কিন ডলার যা খুবই কম। তার ওপর ২০১২ সালে বাংলাদেশিরা বিদেশে চিকিৎসার জন্য ২.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে, যা জিডিপির ১.৯৪%। ভ্রমণ ভিসায় প্রেরিত জনবল যোগ করলে এ সংখ্যা দাফতরিক হিসাবের অঙ্ক ছাড়িয়ে যাবে। ভারতে গমনকৃত ৪ লাখ ৬০ হাজার রোগীর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ থেকেই ১ লাখ ৬৫ হাজার চিকিৎসা করতে গেছেন।

সময় এসেছে আমাদের স্বাস্থ্য খাত, সক্ষমতা ও অর্থনীতিকে সম্পৃক্ত করে একটা সামগ্রিক পরিকল্পনা তৈরির। স্বাস্থ্য খাতের উন্নতির জন্য এ ব্যাপারটি গুরুত্বে সঙ্গে বিবেচনা করা জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মোতাবেক বাংলাদেশে ৬০ হাজার ডাক্তার ও ২ লাখ ৮০ হাজার নার্সের ঘাটতি রয়েছে। ডাক্তার ও রোগীর বিশ্ব গড় অনুপাত ১:৬০০-এর বিপরীতে বাংলাদেশে ডাক্তার ও রোগীর অনুপাত ১:৩২৯৭ জন। এ বিষয়ে সক্ষমতা অর্জনের জন্য একটি সুষম পরিকল্পনাই যথেষ্ট। এর জন্য কোনো দেশের ওপর নির্ভরশীলতা বা প্রযুক্তি হস্তান্তরের মতো জটিল বিষয় নেই।

আমরা যদি হৃদরোগের কথা ভাবী তাহলে দেখতে পাই এ পরিসংখ্যান আরও ভয়ঙ্কর। পাবলিক, প্রাইভেট সেক্টরসহ দেশে মাত্র ৩৬টি কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট রয়েছে যার ২৬টি হৃদরোগ সার্জারির জন্য উপযুক্ত ১৫০ জন হৃদরোগ সার্জনের মধ্যে মাত্র ৩৬ জন স্বতন্ত্রভাবে সার্জারি করতে সক্ষম। আর এ ৩৬ সার্জনের ৩২ জনই ঢাকায় কাজ করেন। তাহলে দেশের হাজার হাজার হৃদরোগী কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনো একজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সরকারি অনুমোদন পেতে ১৩-১৪টি ধাপে কমবেশি দুই থেকে আড়াই বছর লাগে।

দেশে এখন মরণব্যাধি ক্যান্সার সংক্রমণের হার আগের চেয়ে অনেক বেশি। একজন ক্যান্সার রোগী তার আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সবাইকেই মানসিক ও আর্থিক দিক থেকে সর্বস্বান্ত করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রতি বছর দেশে ১.০৮ লাখ লোক ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে আর ১.৫ লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। সরকারি হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীর জন্য ৫০০ বেড ও ২০০ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। দেশে এক তৃতীয়াংশ ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ পায়। সাধারণত ধনীরা চিকিৎসার জন্য বিদেশে গমন করেন আর দরিদ্ররা সরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভর করেন। এ ছাড়া বিনা চিকিৎসায় মৃত্যবরণকারীর সংখ্যা কম নয়।

এসব চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলা জরুরি। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে শিল্পপতিরা ব্যাংক ঋণের সুবিধা পান। ব্যাংক ঋণের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। আদর্শিক চিন্তা-চেতনার পাশাপাশি প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা। পরিতাপের বিষয়, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য দেশে কোনো মানসম্মত হাসপাতালও গড়ে ওঠেনি। যদি করোনা সংকটের এ মুহূর্তে রাষ্ট্রের কোনো অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি চিকিৎসার অভাবে মারা যান- কে নেবে এ দায়? এ করোনাকালেও দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ছিলেন অনেকটা সাধারণ মানুষের মতোই অসহায়। এমনকি সামরিক হাসপাতালের ওপর নির্ভরতাও আমাদের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থার কথাই বলে।

একবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ যখন হৃদরোগে ভুগছিলেন, তখন চিকিৎসকরা তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু এই মহান রাজনৈতিক নেতা তাঁর চিকিৎসার জন্য অন্য দেশে গমনের বিষয়টি সহজে গ্রহণ করতে পারেননি। বরং তিনি নিজের দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। একই কারণে মালয়েশিয়ায় হৃদরোগের চিকিৎসাব্যবস্থা ব্যাপক সমৃদ্ধি লাভ করে। দেশ বিনির্মাণে আমরাও আমাদের নেতৃত্বের কাছে অনুরূপ অঙ্গীকারের প্রত্যাশা করি। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন গতিশীল নেতৃত্বের আর প্রয়োজন সনাতনী চিন্তা-চেতনা থেকে বেরিয়ে উদ্ভাবনী ভাবনার বাস্তবায়ন করা।

                লেখক : গবেষক, শিক্ষক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর