রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি

কুমিল্লায় অবস্থিত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি একটি যুদ্ধসমাধি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মায় (মিয়ানমার) সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫ হাজার কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হয়, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে বার্মা, আসাম ও বাংলাদেশে নয়টি সমাধি ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশে দুটি কমনওয়েলথ সমাধি ক্ষেত্র আছে, যার একটি কুমিল্লায়, অন্যটি চট্টগ্রামে। প্রতি বছর প্রচুর দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের প্রতি সম্মান জানাতে এ সমাধি ক্ষেত্রে আসে। ময়নামতি রণ সমাধি ক্ষেত্র মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) নিহত ভারতীয় ও ব্রিটিশ সৈন্যদের কবরস্থান। এটি ১৯৪৬ সালে তৈরি। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের খুব কাছেই এ সমাধির অবস্থান। এ সমাধি ক্ষেত্রটিতে প্রতি বছর নভেম্বরে সব ধর্মের গুরুর সমন্বয়ে একটি বার্ষিক প্রার্থনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সমাধি ক্ষেত্রটিতে ৭৩৬টি কবর আছে। এর অধিকাংশ সে সময়কার হাসপাতালের মৃত সৈনিকদের। তা ছাড়া যুদ্ধের পর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু লাশ স্থানান্তর করেও এখানে সমাহিত করা হয়। বাহিনী অনুযায়ী এখানে রয়েছে তিনজন নাবিক, ৫৬৭ জন সৈনিক ও ১৬৬ জন বৈমানিক। সর্বমোট ৭২৩ জন নিহতের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছিল।

সমাধি ক্ষেত্রটির প্রবেশমুখে একটি তোরণঘর, যার ভিতরের দেয়ালে এ সমাধি ক্ষেত্রের ইতিহাস ও বিবরণ ইংরেজি ও বাংলায় লিপিবদ্ধ করে একখানা দেয়ালফলক লাগানো হয়েছে। ভিতরে সরাসরি সামনে প্রশস্ত পথ, যার দুই পাশে সারি সারি কবরফলক। সৈন্যদের ধর্মানুযায়ী তাদের কবরফলকে নাম, মৃত্যু তারিখ, পদবির পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতীক লক্ষ্য করা যায়। খ্রিস্টানদের কবরফলকে ক্রুশ, মুসলমানদের কবরফলকে আরবি লেখা হুয়াল গাফুর উল্লেখযোগ্য। প্রশস্ত পথ ধরে সোজা সামনে রয়েছে সিঁড়ি দেওয়া বেদি, তার ওপর শোভা পাচ্ছে খ্রিস্টধর্মীয় পবিত্র প্রতীক ক্রুশ। বেদির দুই পাশে রয়েছে আরও দুটি তোরণঘর। এসব তোরণঘর দিয়ে সমাধি ক্ষেত্রের পেছন দিকের অংশে যাওয়া যায়। সেখানেও রয়েছে আরও বহু কবরফলক। প্রতি দুটি কবরফলকের মাঝখানে একটি করে ফুল গাছ শোভা পাচ্ছে। এ ছাড়া পুরো সমাধি ক্ষেত্রেই রয়েছে প্রচুর গাছ। সমাধি ক্ষেত্রের সম্মুখাংশের প্রশস্ত পথের পাশেই ব্যতিক্রমী একটি কবর রয়েছে, যেখানে একসঙ্গে ২৩টি কবরফলক দিয়ে একটা স্থানকে ঘিরে রাখা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর