শিরোনাম
শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ছুটির দিনে বই

হোসেন আবদুল মান্নান

জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০১২। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সব সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই সম্পন্ন হয়। দিনের সূচির একপর্যায়ে বিশেষ সাক্ষাৎপর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের কর্ণধার এসব কর্মকর্তার সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের মতো কথা বলেন। অনুষ্ঠান শেষে সম্মেলন কক্ষ ত্যাগকালে সবার উদ্দেশে তিনি খুব ছোট্ট করে বললেন, ‘বইটি আপনারা পড়বেন, অনেক তথ্য আছে, আশা করি ভালো লাগবে।’ একটু পরে একে একে সবাই বই গ্রহণ করি। তিন দিনের সম্মেলন সমাপনীতে যথারীতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফিরে আসি। সেই থেকে আমার পড়া শুরু হয়। শুধু কি পাঠ, বইয়ের ওপর সেমিনারের আয়োজন করি। এতে অনেক পাঠক অংশ নেন। তারা কে কীভাবে, কতটুকু পড়েছেন তারও প্রতিযোগিতা করি। তখন থেকে সুযোগ পেলেই কয়েক পৃষ্ঠা করে পড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ার কারণেই বোধ করি বইয়ের এ অনন্যসাধারণ বিবরণ আমাকে টেনেছে অনেকের চেয়ে বেশি। ব্রিটিশ ভারতের রাজনীতি, যুক্তবাংলা, পাকিস্তান আন্দোলন, দেশভাগ, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, ভাষার দাবি, সন, তারিখ, ঘটনাপ্রবাহের এ যেন এক ঐন্দ্রজালিক ধারাভাষ্য। মোহাচ্ছন্ন হয়ে পাঠ না করে উপায় থাকে না নিবিষ্ট পাঠকের।

তথ্যানুযায়ী ১৯৬৬-৬৭ সালেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকাবস্থায় বঙ্গবন্ধু এ আত্মজীবনী লেখা শুরু করেন। মূল বই ২৮৮ পৃষ্ঠার, সঙ্গে টীকা ৩ পৃষ্ঠা, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ১১ পৃষ্ঠা, জীবনবৃত্তান্তমূলক টীকা ১৪ পৃষ্ঠা, নির্ঘণ্ট ১১ পৃষ্ঠা।

বইয়ের মাঝামাঝিতে ১৬ পৃষ্ঠাব্যাপী বঙ্গবন্ধুর নিজের এবং পারিবারিক কিছু বিরল ও মূল্যবান ফটোগ্রাফস ব্যবহার করা হয়। এর একাধিক স্থানে বঙ্গবন্ধুর স্বহস্তে লেখা পা-ুলিপির চিত্রলিপি তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে মোট ৯০টি এপিসোডে ঘটনাগুলোর বিন্যাস করা হয়েছে। মনে হবে, পেছনে ফেলে যাওয়া রাজনৈতিক দিনলিপিতে একটি অবিচ্ছেদ্য পরম্পরার মালা গাঁথা হয়েছে। একে পাঠক আটকে রাখার অন্যতম প্রধান রহস্য হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। বইটির প্রথম প্রকাশ জুন, ২০১২। প্রকাশক দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) স্বত্বাধিকারী বিখ্যাত মহিউদ্দিন আহমেদ।

লেখার সৃষ্টির মধ্যেই নাকি একজন লেখকের মনোজগতের আসল সন্ধান পাওয়া যায়। জীবন-মৃত্যু, বিশ্বপ্রকৃতি, মানুষের জীবনাচার, মানবধর্ম, কল্যাণ ভাবনা, জীবনের জন্য জীবনের প্রয়োজনীয়তা, সর্বোপরি একজন মানুষ মুজিবের নিজস্ব দর্শনই প্রতিভাত হয়ে  উঠেছে তাঁর লেখনীতে। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধর্মী এ অনন্য জবানিতে মূর্ত হয়ে উঠেছে নিপীড়ন, নির্যাতন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়সংগত প্রতিবাদের কৌশলী ভাষা। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর শুরুতে বঙ্গবন্ধুর এ অসাধারণ উক্তিটি ইংরেজি এবং বাংলায় সংযোজন করে দিয়ে তাঁর সমগ্র সত্তাকে আরও প্রগাঢ়ভাবে আলোকোজ্জ্বল করা হয়েছে। ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানব জাতি নিয়েই আমি ভাবী। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এ নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’

এ কথা সত্য যে, বইটি বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রখর স্মৃতি থেকে সাজিয়ে লিখেছেন। তাঁর হাতের লেখায় ছিল জাদুর স্পর্শ। একটু মন লাগিয়ে দেখতে গেলে সহজেই বোঝা যায়, এ লেখা ঝরঝরে ও স্বতঃস্ফূর্ত এবং এক অসংকোচ সত্য প্রকাশ। লেখায় তাঁর সমসাময়িক, জ্যেষ্ঠ বা অনুজ নেতা-কর্মী সম্পর্কে কি বিস্ময়কর মাধুর্যভরা সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সম্বোধন করা হয়েছে যা অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। বলা বাহুল্য, আমাদের অন্য কোনো রাজনীতিকের আত্মজীবনীতে সচরাচর এটি চোখে পড়ে না। বর্ণনায় পাওয়া যায়, রাজনীতির অলিগলিতে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে হাঁটতে গিয়ে অসংখ্য বন্ধু ও শুভাকাক্সক্ষীর সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি। আপন হয়েও সম্পূর্ণ বিনা কারণে তাঁর ক্ষতি করেছে অথচ বঙ্গবন্ধু তাকে অতি সম্মানের সঙ্গে সাহেব বলে সম্বোধন করেছেন। বিশ্বরাজনীতির পাঠশালায় এ সংস্কৃতির প্রভাব যে কত শক্তিশালী এবং অপরিহার্য তা সহজেই অনুমেয়। সবাইকে এমন আন্তরিকভাবে প্রাণ খুলে, হৃদয় উজাড় করা অট্টহাসিতে বুকে টানার ক্ষমতা কজনার হয়? এক অভূতপূর্ব সংবেদনশীল ও সম্মোহনী শক্তির অদৃশ্য জাদু ছিল বঙ্গবন্ধুর আকাশস্পর্শী ব্যক্তিত্বে। বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল ফজল তাঁর ‘শেখ মুজিব তাঁকে যেমন দেখেছি’ (প্রথম প্রকাশ নভেম্বর, ১৯৭৮) বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘শালপ্রাংশু দেহ শেখ মুজিবের মুখের দিকে চেয়ে থাকা যায় অনেকক্ষণ ধরে। ওই মুখে কোনো রুক্ষতা কী কর্কশতার চিহ্ন ছিল না। তাঁর হাসি ছিল অপূর্ব, অনুকরণীয়। এমন হাসি অন্য কারও মুখে দেখেছি বলে মনে পড়ে না।’ বইয়ে যেসব বিষয় সাবলীলভাবে তুলে ধরা হয়েছে : লেখকের বংশবৃত্তান্ত, শিক্ষাজীবন, কলকাতাকেন্দ্রিক রাজনীতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হওয়া, দেশবরেণ্য রাজনীতিকদের সান্নিধ্যে যাওয়ার প্রয়াস, স্বেচ্ছাসেবক হওয়া, ভাষা আন্দোলনের পটভূমি রচনা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, দাবি আদায়ের সংগ্রাম, মুসলিম লীগ তথা মুসলিম ঐতিহ্য ধারণ ও লালন করা, পাকিস্তান ও যুক্তবাংলার দাবি, শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও আস্থাশীল হওয়া, ছাত্রলীগ গঠন, আওয়ামী লীগের পেছনে বিরামহীন শ্রম ও ত্যাগ স্বীকার, বারবার কারাগারে নিক্ষিপ্ত হওয়া, আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তিলাভ, মন্ত্রিত্ব গ্রহণ, পদত্যাগ, চাকরি, সাংবাদিকতাসহ বিচিত্র শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন থেকে বাস্তব শিক্ষা নেওয়ার এক ধ্রুব মহাকাব্য এটি।

অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লেখক শেখ মুজিবুর রহমান বাবা শেখ লুৎফর রহমান, মা সায়েরা খাতুন, স্ত্রী রেণু (শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব) কন্যা হাচু (শেখ হাসিনা) ও পুত্র কামাল (শেখ কামাল) পরিবারের এ পাঁচজন সদস্যের নাম বারবার উচ্চারণ করেছেন। তবে সর্বাধিক স্মরণ করেছেন এমন নেতৃবৃন্দ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (শহীদ সাহেব), মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শামসুল হক (হক সাহেব), খাজা নাজিমুদ্দিন, আতাউর রহমান খান, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আবদুস সালাম খান, ইয়ার মোহাম্মদ খান, আবুল হাশিম, মহিউদ্দিন আহমেদ, কামরুদ্দিন আহমদ, নূরুল আমীন, নূরদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ আলী (বগুড়া), মোল্লা জালালউদ্দিন, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মওলানা আকরম খাঁ, আইয়ুব খান, চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস, মিয়া ইখতিখার উদ্দিন প্রমুখ।

প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে- আওয়ামী লীগ, কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, যুক্তফ্রন্ট, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, ইত্তেফাক, রাষ্ট্রভাষা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি। বইটি পড়তে গিয়ে এর কিছু কিছু বাক্য, তথ্য এবং ঘটনা আমাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে তোলে।

* শরৎ বসুকে সরদার বল্লভভাই প্যাটেল ধমকের ভাষায় কথা বলেন, ‘শরৎ বাবু পাগলামি ছাড়েন, কলকাতা আমাদের চাই’। এ সময় মহাত্মা গান্ধী ও পন্ডিত নেহরু নির্বাক থাকলেন।

* মহাত্মা গান্ধী রবিবারে কারও সঙ্গে কথা বলতেন না।

* বঙ্গবন্ধুর কঠিন প্রতিবাদ, তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে বলেছিলেন, I will prove that I am somebody. Thank you sir I will never come to you again.

* ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের কৃষ্ণনগর থেকে একই নৌকায় বঙ্গবন্ধুর সহযাত্রী শিল্পী আব্বাস উদ্দিন, সোহরাব হোসেন ও বেদারউদ্দিনকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে ভাটিয়ালি গান শুনতে শুনতে আশুগঞ্জ রেলস্টেশনে পৌঁছাই।

* জেলে একজন কুখ্যাত ডাকাতের সঙ্গে পরিচয় ও কথোপকথন। ডাকাতের নাম রহিম মিয়া। সে মূলত চোর ছিল, বাধা দিলে নাকি ডাকাতি করত। সে একসময় বঙ্গবন্ধুর বাড়িতেও চুরি করে পূর্বপুরুষদের অনেক সোনাদানা নিয়ে যায়। কিন্তু জেলে পরিচয় হলে তিনি তার সঙ্গেও আপনি সম্বোধন করে নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

* ১৯৫১ সালের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। তাঁর শরীর ভালো যাচ্ছে না। শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাঁকে জেলে দেখতে আসেন। তাঁর মুক্তির বিষয় ও সার্বিক অবস্থার খোঁজখবর নিলেন। একপর্যায়ে তিনি তাঁর জেলের সঙ্গী মহিউদ্দিন আহমেদের মুক্তির বিষয়টিও শহীদ সাহেবকে বললেন, এতে শহীদ সাহেব বিস্মিত হলেন এবং বললেন, মুজিব তুমি জান ও আমার কত ক্ষতি করেছে? বঙ্গবন্ধু বললেন, ওকে ক্ষমা করে দিন। এখন তো সে জেলে আছে। ও বের হয়ে আমাদের দল করবে। স্যার, মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসে। ও কর্মী তো ভালো। আমরা উদার হলে তো কোনো ক্ষতি নাই।

* বইয়ের শেষাংশে এসে লেখক বঙ্গবন্ধু বেশ হতাশা ব্যক্ত করেছেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো এত বড় কিংবদন্তি কীভাবে চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর কেবিনেটের একজন আইনমন্ত্রী হলেন। যুক্তবাংলার প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, উপমহাদেশের সবচেয়ে উচ্চশিক্ষিত বনেদি পরিবারের সন্তান অক্সফোর্ডের গ্র্যাজুয়েট, একাধিক এমএ ডিগ্রি এবং বিসিএল আইনমন্ত্রী হয়ে যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু তা প্রমাণ করেছিলেন। এমন অসংখ্য তথ্য ছড়িয়ে আছে বইটির পৃষ্ঠাজুড়ে।

পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণামূলক লেখা নিয়ে আরও দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৭ সালের মার্চে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে ‘কারাগারের রোজনামচা’। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমি থেকেই প্রকাশিত হয় ‘আমার দেখা নয়াচীন’। অবশ্য বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের সামান্য কিছু বর্ণনা আত্মজীবনীতেও রয়েছে। তবে এ দুটো বইয়ের অভিজ্ঞতার বিবরণও তথ্যে ভরপুর এবং অসাধারণ সুখপাঠ্য।

স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপতি বঙ্গবন্ধু একজন সাহিত্যানুরাগী মানুষ ছিলেন। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গে তাঁর ছায়া পড়েছে ব্যাপকভাবে। তাঁকে ঘিরে রচিত হয়েছে অগণিত গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র। উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমিতে যে সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু মুজিব ছিলেন এর প্রধান অতিথি। তিনি কবি নজরুল ও রবিঠাকুরের গান ও কবিতার মুগ্ধ পাঠক ছিলেন। ’৭২ সালের ২৪ মে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে তিনিই ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং দেশের নাগরিকত্ব দেন। সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি তাঁর দরদি মন ও একাগ্রতা ছিল সর্বজনবিদিত। আজ মুজিববর্ষে বাঙালির সন্তান হিসেবে বিনম্র শ্রদ্ধায় তাঁকে স্মরণ করছি।

                লেখক : গবেষক ও গল্পকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর