শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

রসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা

প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতা, ভক্তি-শ্রদ্ধা আছে বলেই টিকে আছে এ নশ্বর পৃথিবী। মুসলমান হিসেবে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ভালোবাসতে হবে হৃদয়ের গভীর থেকে। যার অন্তরে রসুলপ্রেম নেই সে মুমিন নয়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিন হতে পারবে না যে পর্যন্ত সে আমাকে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সব লোক অপেক্ষা অধিক মুহব্বত না করে।’ বুখারি, মুসলিম।

ভালোবাসা লাভের জন্য একজন মানুষের যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, তার সবই ছিল রসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাঝে বিদ্যমান। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তির মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে ইমানের মিষ্টতা অনুভব করতে পারবে। যথা- যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহ ও তাঁর রসুল সর্বাধিক প্রিয় হয়। যে ব্যক্তি একান্তভাবে আল্লাহর জন্য কোনো মানুষকে ভালোবাসে। যাকে আল্লাহ কুফুর থেকে ফিরিয়ে নিলেন। এরপর সে কুফুরে ফিরে আসাকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো মনে করে।’ বুখারি, মুসলিম।

উপরোক্ত হাদিস দুটি নবীপ্রেম সম্পর্কে পরিষ্কার ইঙ্গিত বহন করে। সুতরাং যে ইমানদার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তাকে অবশ্যই নবীপ্রেমে সিক্ত হতে হবে। সাহাবায়ে কিরাম ছিলেন নবীপ্রেমের সর্বোচ্চ উদাহরণ। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসায় তারা যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে সর্বদা প্রস্তুত ছিলেন। এমনকি নিজের অস্তিত্ব বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর নক্ষত্রতুল্য সাহাবি হজরত জায়েদ ইবনে আবদে রাব্বি (রা.) একদিন মদিনার নিকটবর্তী একটি বাগানে কাজ করছিলেন। এমন সময় সংবাদ পেলেন হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইন্তেকাল করেছেন। শোনামাত্রই তিনি থমকে গেলেন। যেন তার মাথায় আসমান ভেঙে পড়ল। তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন। দুই হাত আসমানের দিকে প্রসারিত করে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ! যে চোখ দিয়ে তোমার বন্ধুকে দেখেছি, ওই চোখ দিয়ে তাঁকে যদি আর না দেখতে পারি তাহলে দুনিয়ার জীবনে আর আমার চোখের প্রয়োজন নেই। হে আল্লাহ! তুমি আমার দৃষ্টিশক্তি উঠিয়ে নাও। মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করলেন। ফলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি অন্ধ হয়ে গেলেন। দীর্ঘ ২১ বছর দৃষ্টিহীন অবস্থায় জীবনযাপন করে ৩২ হিজরিতে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। কিন্তু আর কোনো দিন দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। হজরত জায়েদ ইবনে আবদে রাব্বি (রা.) স্বেচ্ছায় অন্ধত্বের জীবন গ্রহণ করে, নবীপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। নবীপ্রেম শুধু সাহাবিদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং গাছপালা, নদ-নদী, মরুর উট, বনের হরিণ, হিংস্র বাঘ এমনকি জড় পদার্থ পর্যন্ত নবীপ্রেমের অনন্য নজির স্থাপন করেছে। যা আজও ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো দৃশ্যমান। উফায়র নামে রসুল (সা.)-এর একটি গাধা ছিল। যার ওপর তিনি আরোহণ করতেন। রসুল (সা.) ইন্তেকালের পর তাঁর বিয়োগব্যথা সহ্য করতে না পেরে গাধাটি দৌড়ে একটি কূপের মাঝে ঝাঁপ দিয়ে আত্মবিসর্জন করল। দালায়েলুন্নবুওয়াহ।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর