বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ব্যভিচারের পরিণতি ভয়াবহ

মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ

আল্লাহতায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। দিয়েছেন তার মাঝে কিছু জৈবিক চাহিদা। সঙ্গে সঙ্গে সেসব চাহিদা পূরণ কিংবা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। আল্লাহতে বিশ্বাসী একজন মুসলিম মহান আল্লাহ ও তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-প্রদত্ত এসব নিয়ম-নীতি মেনেই তার প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটায়। এতে তার চাহিদাও পূর্ণ হয়, পুণ্যের অধিকারীও হয়। তবে যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.)-প্রদত্ত বিধানাবলির তোয়াক্কা না করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে, কোরআনের ভাষায় তাদের চতুষ্পদ জন্তুর চেয়ে নিকৃষ্ট বলা হয়েছে।

মানুষের এসব জৈবিক চাহিদার মধ্যে যৌন চাহিদা অন্যতম। মানুষ এখানেই হোঁচট খায় প্রায়শই। দুনিয়াব্যাপী যৌন চাহিদা পূরণের অবারিত সুযোগ, উৎসাহ প্রদান, কামোদ্দীপক উপায় ও উপকরণ সহজলব্ধ হওয়ায় মানুষ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এ নিকৃষ্টতম অপকর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। মানব অন্তরের প্রতি লালায়িত হয়ে পড়ে। মানবীয় এ দুর্বলতার কারণে আল্লাহ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল ও নিকৃষ্টতম কাজ।’ সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৩২।

রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ইহকালীন শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী ওদের প্রত্যেককে ১০০ বেত্রাঘাত করবে। তোমরা যদি আল্লাহ ও পরকালের ওপর বিশ্বাস করে থাক তবে আল্লাহর বিধান কার্যকরে দয়াপরবশ হবে না। আর তাদের এ শাস্তি যেন একদল মুমিন প্রত্যক্ষ করে।’ সুরা নুর, আয়াত ২।

অন্যদিকে পরকালে যে এত ভয়ংকর শাস্তি হবে তার যৎসামান্য বর্ণনা পাওয়া যায় এ হাদিস থেকে। বুখারিতে সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) সূত্রে নবী কারিম (সা.)-এর মিরাজ সম্পর্কে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তাতে উল্লেখ আছে, ‘জিবরাইল ও মিকাইল (আ.) তাঁর কাছে এলেন। নবী কারিম (সা.) বললেন, আমরা পথ চলতে শুরু করলাম। একপর্যায়ে আমরা তন্দুরের মতো একটি বস্তু দেখতে পেলাম। যার ওপরের অংশ ছিল সংকীর্ণ এবং নিচের অংশ প্রশস্ত। ভিতর থেকে শোরগোল ও চিৎকারের শব্দ বের হচ্ছিল। আমরা এর ভিতরের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম অনেক উলঙ্গ নারী-পুরুষ। হঠাৎ দেখলাম আগুনের একটি শিখা তাদের নিম্নভাগ থেকে এসে তাদের গ্রাস করল। আর তারা তখন প্রচন্ড উত্তাপের কারণে চিৎকার শুরু করল। আমি বললাম, ভাই জিবরাইল! এরা কারা? জিবাইল বললেন, এরা ব্যভিচারী পুরুষ ও নারী। তাদের এ শাস্তি বিচার দিবস তথা অনন্তকাল চলতে থাকবে।’

অন্য এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তিন ধরনের ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না। তাদের প্রতি দৃষ্টিপাতও করবেন না। তাদের পবিত্র করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। তাদের জন্য কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। তারা হলো- ১. বৃদ্ধ ব্যভিচারী  ২. মিথ্যুক শাসক  ৩. অহংকারী গরিব।’ মুসলিম ও নাসায়ি।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি এমন মহিলার দেহে কামনাবেগের সঙ্গে হাত দেবে যে তার জন্য হালাল নয়, কিয়ামতের দিন তার হাত তার কাঁধের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় উঠবে। যদি সে ওই মহিলাকে চুমু দেয়, তবে জাহান্নামে তার ঠোঁট আগুনের কাঁচি দিয়ে কাটা হবে।’ সেদিন পাপীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তাদের দ্বারা কৃত পাপের সাক্ষ্য দিয়ে দেবে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিব, হাত ও পা তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে।’ সুরা নুর, আয়াত ২৪। এটা যে কত ভয়ানক হবে তা বলার ভাষা কারও নেই। অতএব, পরকালে আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেন আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে না পারে সেভাবে চলতে হবে। প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে সব ধরনের পাপ থেকে সর্বদা নিজেকে বিরত রাখতে হবে। আল্লাহ তৌফিক দান করুন।

লেখক : মুহাদ্দিস, খতিব ও গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর