শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

সালাম শান্তির বাণী

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

মানুষ পরস্পর মিলিত হলে অভিবাদন ও সম্ভাষণ করে। কুশল বিনিময় করে। আদিকাল থেকেই অভিবাদন ও সম্ভাষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি এ বিশ্বে প্রচলিত। কেউ আদাব, নমস্কার বলে; কেউ গুড মর্নিং, গুড ইভিনিং, হাই ইত্যাদি বলে। এ ক্ষেত্রে নবী (সা.) অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও অর্থবহ একটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন। তা হলো আসসালামু আলাইকুম। এর অর্থ হলো আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটি শুধু একটি অভিবাদন পদ্ধতিই নয়, গুরুত্বপূর্ণ অর্থবহ দোয়াও। আল্লাহ-প্রদত্ত শান্তির বাণী। বেহেশতবাসী পরস্পর অভিবাদন করবে এ সালামের মাধ্যমে। আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম ‘সালাম’। এর মাধ্যমে পরস্পর ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। সালাম প্রদানে রয়েছে অফুরন্ত বিনিময়। জনৈক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন আসসালামু আলাইকুম। রসুলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিয়ে বললেন ১০। অন্য একজন এসে বললেন আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ। উত্তর দিয়ে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ২০। আরেকজন এসে বললেন আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ। উত্তর দিয়ে নবীজি (সা.) বললেন ৩০। নবীজির (সা.) পদ্ধতিতে একজন সালাম দিয়ে ১০টি বিনিময় অর্জন করলেন। অন্যজন আরও উত্তমভাবে সালাম দিয়ে ২০টি বিনিময় অর্জন করলেন। শেষ ব্যক্তি আরও উত্তমভাবে সালাম দিয়ে ৩০টি বিনিময় অর্জন করলেন।

এভাবে আমরা যারাই উত্তমভাবে সালাম দেব এ সালামের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা আমাদের উত্তম বিনিময় প্রদান করবেন। প্রচলিত কোনো অভিবাদন পদ্ধতি দোয়া হিসেবে গণ্য হয় না এবং এতে কোনো বিনিময়ও অর্জন করা যায় না বিধায় আসসালামু আলাইকুম বলে অভিবাদন করা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম অভিবাদন পদ্ধতি। এমনকি নবীজি (সা.)-এর ভাষায় সালাম হলো ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘জনৈক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, ইসলামের কোন আমল শ্রেষ্ঠতম? উত্তরে তিনি বলেন, ক্ষুধার্তকে আহার করাও এবং পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দাও।’ বুখারি। অন্য হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সালামের প্রচার-প্রসার কর, ক্ষুধার্তকে আহার করাও, মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় তুমি নামাজ আদায় কর, তাহলে নিরাপদে বেহেশতে প্রবেশ করবে।’ মুসলিম। সাহাবিরা আগে আগে সালাম দিয়ে বিনিময় লাভের জন্য প্রতিযোগিতা করতেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর দৃষ্টিতে সর্বোত্তম মানুষ সে, যে আগে সালাম প্রদান করে।’ আবু দাউদ। সালাম সুস্পষ্ট ও বিশুদ্ধভাবে আদায় করতে হবে। সালাম বিকৃত করে প্রদান করা, তা নিয়ে ব্যঙ্গ, উপহাস করা মারাত্মক ও জঘন্যতম অপরাধ। এ পরিসরে কয়েকটি বিষয় জানা একন্ত জরুরি। ক. ‘সালাম’ শব্দটি আরবি। প্রতিটি ভাষায় শব্দ পরিবর্তন ও বিকৃতি সাধন হলে অর্থের পরিবর্তন হয়। তাই ‘সালাম’ শব্দটি শুদ্ধভাবে উচ্চারণ না হলে এরও অর্থ পরিবর্তন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা  আছে। খ. ‘সালাম’ একটি  দোয়াবিশেষ। শব্দ পরিবর্তন অথবা বিকৃতির মাধ্যমে দোয়া অভিশাপে অথবা তা ধ্বংসের দোয়ায় পরিণত হতে পারে; সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

লেখক : গবেষক, মুহাদ্দিস

ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার

বসুন্ধরা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর