মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

‘খয়রাতি’র পর আনন্দবাজারের ‘উইপোকা’ সাংবাদিকতা

প্রভাষ আমিন

‘খয়রাতি’র পর আনন্দবাজারের ‘উইপোকা’ সাংবাদিকতা

এক পাগল ঘুরে ঘুরে ঢিল ছুড়ে বা গুলতি দিয়ে শহরের বিভিন্ন ভবনের কাচ ভাঙত। বেশ কিছুদিন পাগলা গারদে থাকার পর ডাক্তাররা ভাবলেন তিনি সুস্থ হয়ে গেছেন। তাই ছেড়ে দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে কথা বলতে গেলেন। আপনাকে আমরা ছেড়ে দেব। ছাড়া পেয়ে আপনি কী করবেন? জবাবে সেই পাগল বললেন, তিনি তার গার্লফ্রেন্ডের বাসায় যাবেন। তারপর একে একে তার পোশাক খুলবেন। শুনে ডাক্তাররা নিশ্চিন্ত হলেন, যাক আসলেই তিনি সুস্থ হয়েছেন। স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াই দেখাচ্ছেন। ডাক্তারের শেষ প্রশ্ন, এরপর কী করবেন? সেই পাগলের ভাবলেশহীন উত্তর, ব্রার ইলাস্টিক দিয়ে গুলতি বানিয়ে কাচ ভাঙব। গত ৩ নভেম্বর ভারতের ঐতিহ্যবাহী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় সমর বিশ্বাসের লেখা নিবন্ধ ‘উইপোকা’ বাংলাদেশ অর্থনীতিতে টপকাচ্ছে ভারতকে! বিশেষজ্ঞরা বলছেন ‘ক্ষণস্থায়ী’ পড়ে আমার সেই পাগলের গল্পটাই মনে হলো। মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে আইএমএফের এক পূর্বাভাস নিয়ে তার লেখা। আইএমএফ বলছে, এ বছর মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। আইএমএফের এ রিপোর্ট যেন ভারতে আণবিক বোমা ফেলেছে। ভারতীয়দের মনোজগতে রীতিমতো তোলপাড়। বাংলাদেশে এত বড় সাফল্য নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। কিন্তু ভারতের কারও কারও মনোবেদনা থামছেই না। ‘পুঁচকে’ বাংলাদেশ ভারতকে অর্থনীতির একটা বড় সূচকে টপকে যাচ্ছে, এটা ভারতের অনেকে মানতেই পারছেন না। সেই অনেকের একজন সমর বিশ্বাস। নিবন্ধের বেশির ভাগ জুড়েই তিনি বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া এবং ভারতের পিছিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু সমর বিশ্বাস তার লেখাটি শেষ করেছেন সেই চিরন্তন বাংলাদেশ-বিদ্বেষ দিয়েই, অর্থাৎ, ‘হাতি এবং উইপোকা থাকবে তাদের নিজের নিজের জায়গাতেই।’ এত এগোনোর পরও বাংলাদেশ তার বিবেচনায় উইপোকাই। সেই পাগলের মতো। বাড়ির কাচ তিনি ভাঙবেনই। বাংলাদেশকে আনন্দবাজার হেয় করবেই।

সমর বিশ্বাসের লেখাটির পরতে পরতে বাংলাদেশ-বিদ্বেষ, বাংলাদেশকে ছোট করা, হেয় করা। সমর বিশ্বাস একজন ব্যক্তি, তিনি হয়তো লিখতেই পারেন। কিন্তু আনন্দবাজার তো একটি প্রতিষ্ঠান, তারা কীভাবে এমন বিদ্বেষমূলক লেখা ছাপতে পারে, এটা অবিশ্বাস্য। তিনি লেখাটি শুরুই করেছেন, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৬ ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ টেনে। এটা ঠিক, এ দুই বিশ্বকাপ ভারত আর শ্রীলঙ্কা জিতবে, অতিকল্পনাপ্রবণ ক্রিকেট-বিশারদরাও তা ভাবেননি। কিন্তু বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া তো তেমন কোনো চমক নয়। এটা দীর্ঘদিনের অর্জন। আর বাংলাদেশের এ অর্জন তো গোপন কিছু নয়। সমর বিশ্বাস তার লেখায়ও বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। ২০১৬ সালের পর থেকে ভারতের উন্নয়ন মন্থর ছিল, আর বাংলাদেশের গতি ছিল দ্রুত। তাই মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশের ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া যদি সমর বিশ্বাসের কাছে ভারত-শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়ের মতো অবিশ্বাস্য মনে হয়, বলতেই হবে তিনি আসলে খরগোশের মতো নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিলেন, কচ্ছপ বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াটা তিনি দেখেনইনি। এখন জেগে উঠে নিজেদের পরাজয় মানতে পারছেন না। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এর পরই সমর বিশ্বাস উগলে দিয়েছেন বিদ্বেষের গরল, ‘সেই বাংলাদেশ, যাকে ১৯৭১ সালে পাক-শাসনমুক্ত করে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছিল ভারত। সেই বাংলাদেশ, যার আয়তন পশ্চিমবঙ্গের দেড় গুণের মতো, রাজস্থানের অর্ধেকেরও কম। যে দেশে শিল্প বলতে পোশাক, পুঁজি বলতে কম দামি শ্রমিক। এমন “উইপোকা”ই কিনা টপকে যাবে ভারত নামক “হস্তী”কে? ৫৬ ইঞ্চির ছাতিকে হারিয়ে দিতে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা? চাণক্যের পরাজয় হতে চলেছে “লেডি অব ঢাকা”র কাছে?’ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে নিছক কূটনৈতিক মাত্রায় মাপা যাবে না। ভারত বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রতিবেশী। দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর বাদ দিলে বাংলাদেশ প্রায় ভারতের পেটের ভিতরে। ভারতের কেউ নিজের দেশের মানচিত্র আঁকতে গেলে তাকে বাংলাদেশের মানচিত্রও আঁকতে হয়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কটা নিছক দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক নয়, এ সম্পর্কের বহুমাত্রিক দিক আছে; আছে বিশাল ঐতিহাসিক, কূটনৈতিক, ইমোশনাল, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে শিল্প-সাহিত্য-সিনেমা-টিভি সিরিয়াল-গানে বাংলাদেশের একটা নিবিড় যোগাযোগ আছে। কিন্তু সমর বিশ্বাসের মতো কিছু লোক, যাদের অন্তরভরা বিষ; তাদের জন্য দুই দেশের জনগণের সম্পর্কটা নিবিড় হতে পারেনি। রাজস্থানের অর্ধেক না পশ্চিমবঙ্গের দেড় গুণ, তা দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বা অর্জন বিবেচ্য হবে না। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। ভারতকে বিবেচনা করতে হবে সেভাবেই। দেশ ছোট না বড়, সেটা নয়; পারস্পরিক সম্পর্কটা হতে হবে মর্যাদার, সমতার। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যদি ভারত বাংলাদেশের গুরুত্বটা ঠিক বুঝতে না পারে, তবে সেটা ভারতের সমস্যা, বাংলাদেশের নয়। সবচেয়ে বড় আপত্তির জায়গাটা হলো, ‘১৯৭১ সালে পাক-শাসনমুক্ত করে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছিল ভারত’ এ ভাবনাটা। ’৭১ প্রসঙ্গে কোনো কোনো ভারতীয়র এ ন্যারেটিভ বস্তুনিষ্ঠ নয়। ’৭১-এ পাকিস্তানের সঙ্গে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাক হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর আক্রমণের পর মধ্যরাতেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, যার শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর রমনার রেসকোর্সে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানিদের প্রকাশ্য আত্মসমর্পণে। এ নয় মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে, ২ লাখ মা-বোন নির্যাতিত হয়েছে। কোটি মানুষ উদ্বাস্তু-জীবন যাপন করেছে। এটা ঠিক, মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিল। শুধু সহায়তা করেছে বললে ভুল হবে, ভারতের সহায়তা না পেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়তো আরও অনেক সময় লাগত। ভারত তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছিল। কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল। প্রবাসী সরকারের কার্যক্রম চলেছে কলকাতা থেকে। শুরুর দিকে অর্থ দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পাশে থেকেছে ভারত। ডিসেম্ব^রে সরাসরি অংশ নিয়েছে যুদ্ধে। এ সহায়তার কথা আমরা কোনো দিন ভুলিনি, ভুলবও না। কিন্তু ‘ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছিল’, এ ভাবনাটা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, শহীদদের অপমান করে, হেয় করে। এ ভাবনাটা মাথা থেকে দূর না করলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কটা কখনই বন্ধুসুলভ হবে না। আইএমএফের যে রিপোর্ট সমর বিশ্বাসের মতো বাংলাদেশ-বিদ্বেষী ভারতীয়র মাথায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছে তা নিয়ে কিন্তু আমাদের অত মাথাব্যথা নেই। আমরা ভুল করেও ভাবিনি বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের চেয়ে ১০ গুণ বড় ভারতের অর্থনীতি। বিশ্বের পঞ্চম অর্থনৈতিক শক্তি ভারতকে হারিয়ে দেওয়ার কাজটা সহজ নয়, বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের জন্য তা প্রায় অসম্ভবই। মাথাপিছু জিডিপিতে ছাড়িয়ে যাওয়ার ঘটনাও অবশ্যই আমাদের গর্বিত করে। কিন্তু তাতে আমরা আত্মতুষ্টির বেলুন ফোলাইনি। তবে সমর বিশ্বাসদের কথা শুনলে মনে হয় বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে দিয়েছে। আসলে ব্যাপারটা এমনও নয় যে, মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে কোনো প্রতিযোগিতা হয়েছে, যেখানে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। আইএমএফের রিপোর্টটিও বৈশ্বিক, শুধু বাংলাদেশ-ভারতের মাথাপিছু জিডিপির তুলনামূলক বিশ্লেষণ নয়। সমর বিশ্বাসরাই এটিকে পরাজয় ধরে নিয়ে ঝাল ঝাড়ছেন বাংলাদেশের ওপর। তবে সমর বিশ্বাসদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। আইএমএফই বলছে, আগামী বছরই মাথাপিছু জিডিপিতে ভারত আবার এগিয়ে যাবে। আশা করি তখন তাদের অন্তর্জ্বালা কমবে। আপাতত একটা বছর একটু কষ্ট করে আপনাদের ইগো চাপা দিয়ে রাখুন। কথা দিচ্ছি, আপনারা যখন এগিয়ে যাবেন, আমরা আপনাদের তেলাপোকা বলে হেয় করব না বরং দিলখোলা অভিনন্দন জানাব।

আনন্দবাজার একটি শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা। কিন্তু বরাবরই বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের একটা তাচ্ছিল্যের ভাব আছে। সেটা প্রকাশ করতে তারা সাংবাদিকতার প্রচলিত নিয়ম-কানুনও সব সময় মানতে চায় না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, শিল্পী, সাহিত্যিক, কবিদের নাম তারা বারবার ভুল ছাপে। আমার ধারণা এটা তারা ইচ্ছা করেই করে। ইচ্ছা করেই করে, এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ আনন্দবাজারে চাইলেই যে কেউ যা ইচ্ছা লিখতে পারবেন না। তাদের নিজস্ব বানানরীতি আছে। বানানের ব্যাপারে যারা এত সচেতন, তারা সম্মানিত মানুষদের নাম দিনের পর দিন ভুল ছাপবে, এ হতে পারে না। তারা ইচ্ছা করেই, বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের মানুষকে হেয় করার জন্য, অপমান করার জন্য বিকৃতি ঘটায়। সাধারণত বাংলাদেশের অনেক মানুষের নামের সঙ্গে ‘রহমান’ থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান কবির নাম শামসুর রাহমান, একজন সম্পাদকের নাম শফিক রেহমান। এখন আমার ইচ্ছা হলেই তাদের শামসুর রহমান এবং শফিক রহমান বানাতে পারব না। আনন্দবাজার এটা যখন-তখন করে। গণতন্ত্রের মানসপুত্র হিসেবে খ্যাত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নাম আনন্দবাজার দিনের পর দিন সুরাবর্দী লিখে গেছে। ইদানীং কলকাতায় জনপ্রিয় বাংলাদেশের জয়া আহসানের নাম তারা লেখে জয়া এহসান। আমি নিশ্চিত তার নাম যদি সত্যি জয়া এহসান হতো তাহলে আনন্দবাজার জয়া আহসান লিখত। বাংলাদেশের ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহকে তারা লেখে মামুদুল্লা। এগুলো ভুল নয়, নিজস্বতা নয়; স্রেফ বিকৃতি। বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের মানুষকে হেয় করার চেষ্টা। আমরা ভারতকে যতটা গুরুত্ব দিই, তারা ততটা দেয় না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মারা গেলে বাংলাদেশের সব গণমাধ্যম লিড করে। আর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পর বাংলা কথাসাহিত্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুসংবাদ আনন্দবাজার পত্রিকার ভিতরের পাতার টুকরো খবর! বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে হৃদয়ের যে উষ্ণতা, তাতে শীতল জল ঢেলে দেয় আনন্দবাজারের মতো পত্রিকা আর সমর বিশ্বাসের মতো সাংবাদিকরাই।

ভারতের যেমন সমর বিশ্বাসরা আছেন, বাংলাদেশেও তেমনি অনেক ভারত-বিদ্বেষী লোক আছেন। বলা ভালো, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ভারত-বিদ্বেষ’ একটা বড় ফ্যাক্টর। মূলধারার গণমাধ্যমের দায়িত্ব হলো দুই দেশের সম্পর্ককে যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা আমজনতার আবেগ বা উত্তেজনাকে উসকে না দেওয়া। কিন্তু শতবর্ষের ঐতিহ্যের ধারক আনন্দবাজার পত্রিকা বারবার ফেসবুকীয় আবেগেই গা ভাসায়। গত জুনে ‘বাণিজ্যিক লগ্নি আর খয়রাতির টাকা ছড়িয়ে বাংলাদেশকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা নতুন নয় চিনের’ লিখে আবার দুই দিন পর ক্ষমাও চেয়েছে। সেবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবল সমালোচনার মুখেই ‘অনেক পাঠক আহত’ হয়েছিলেন বলেই তারা খুব অনিচ্ছায় ‘ভ্রম সংশোধন’টি ছেপেছিল। কিন্তু বাংলাদেশকে ‘উইপোকা’ ভাবাটা তাদের মজ্জাগত।

আগেই লিখেছি, বাংলাদেশে যেমন অনেক ভারত-বিদ্বেষী মানুষ আছেন, ভারতেও নিশ্চয়ই প্রচুর বাংলাদেশ-বিদ্বেষী মানুষ আছেন। কিন্তু আমি খুবই সৌভাগ্যবান, ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের এক কর্মচারী ছাড়া আর কোনো বাংলাদেশ-বিদ্বেষী ভারতীয়র সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। অবশ্য ২০১৭ সালের আগে আমি ভারত যা-ইনি। তবে ২০১৭ সালের পর নানা কারণে পাঁচবার যেতে হয়েছে। দিল্লি প্রেস ক্লাব, সি আর পার্ক, কলকাতা প্রেস ক্লাব, কলকাতার পথেঘাটে, বোলপুরে আমি অসংখ্য মানুষের দেখা পেয়েছি; যাদের হৃদয়ে বাংলাদেশের জন্য, বাংলা ভাষার জন্য গভীর মমতা। তারা বারবার আমার ভুল ভেঙে দিয়েছেন। কলকাতা নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো মিল পাইনি। যে উষ্ণতায় তারা বরণ করে নেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা, রাতের পর রাত কেটে যায় আড্ডায়; তাদের হৃদয়ে বিদ্বেষের জায়গা বড্ড কম। মান্না, লতা, হেমন্ত, ভূপেন যখন আমাদের আড্ডায় ঢুকে পড়েন; সীমানা মুছে যায়। সমর বিশ্বাসরা এখানে বড্ড বেমানান। বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতকে আমাদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগটা খুবই জরুরি। গণমাধ্যমের দায়িত্ব হলো, সে উষ্ণতাকে আরও একটু ওম দেওয়া, উত্তেজনার আগুন জ্বালানো নয়। আশা করি আনন্দবাজার ভবিষ্যতে বিষয়টি মাথায় রাখবে এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করবে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।

সর্বশেষ খবর