বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সব ক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-কে অনুসরণ করতে হবে

এম এ মান্নান

সব ক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-কে অনুসরণ করতে হবে

সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের প্রতীক হিসেবে বিশ্বে আবির্ভূত হয়েছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। মানুষকে সুপথে পরিচালিত করতে আল্লাহ তাঁকে বেছে নেন। তাঁর ওপর নাজিল হয় ঐশীগ্রন্থ কোরআন। একেশ্বরবাদী ধর্মীয় চেতনার প্রবর্তক হজরত ইবরাহিম, মুসা ও ইসা (আ.)-এর যথার্থ উত্তরসূরি ছিলেন মহানবী (সা.)। ইহুদি, খ্রিস্টানসহ বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মমত একেশ্বরবাদী চেতনার ভিত্তিতে গড়ে উঠলেও কালের বিবর্তনে এসব ধর্মে অনেক অবান্তর বিষয় ঢুকে পড়েছে। ব্যাহত হয়েছে একেশ্বরবাদের চেতনা। ইসলামকে এ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও নিখাদ মতবাদ হিসেবে ধরা যায়। বিশ্বনন্দিত রুশ ঔপন্যাসিক লেভ তলস্তয়ের মতে, ‘কয়েক খোদার উপাসনা একই সময়ে সম্ভব নয়। এটি একাত্মবাদী ধর্মীয় চেতনারও পরিপন্থী। এদিক থেকে ইসলাম খ্রিস্টীয় মতবাদ থেকেও শ্রেষ্ঠ।’

মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাব ঘটেছিল মানব জাতিকে সত্যের পথে এগিয়ে নিতে। পরধর্মসহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। মহানবী (সা.) কুরাইশদের শত্রুতা এড়াতে আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। তিনি সেখানে সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে এক কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলেন। ইহুদিরা মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সহাবস্থানের চুক্তিতেও আবদ্ধ হয়। কিন্তু তারা তাদের বিশ্বাসঘাতকতার অভ্যাস ভুলতে পারেনি। ইহুদিরা ফন্দি আঁটছিল কীভাবে ইসলামের ওপর আঘাত হানা যায়। একদিন সন্ধ্যায় মহানবী (সা.) সাহাবিদের নিয়ে মসজিদে বসে আছেন। এমন সময় একদল ইহুদি এসে বলল, হে মুসলমানদের নবী, আমরা মদিনার অধিবাসী নই। বহু দূরের বাসিন্দা। নানা কারণে আজ আমরা সন্ধ্যার আগে মদিনা ছেড়ে চলে যেতে পারিনি। আমাদের এতগুলো লোকের রাত কাটানোর পরিচিত কোনো জায়গাও নেই। আপনি কি এ মসজিদে এক রাতের জন্য আমাদের আশ্রয় দেবেন? খুব সকালে আমরা ঘুম থেকে উঠেই নিজেদের এলাকার দিকে যাত্রা করব। মহানবী (সা.) বললেন, তোমরা সারা দিন ঘোরাঘুরি করে এখন খুবই ক্লান্ত। আজকের রাতটা এ মসজিদেই আমাদের মেহমান হিসেবে অবস্থান কর। আমার এবং সাহাবিদের খেজুরের ভাগও পাবে তোমরা। এ মসজিদেই তোমাদের রাত কাটানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। রাতে এশার নামাজ শেষে মহানবী (সা.) এবং সাহাবিরা মসজিদ থেকে চলে যাওয়ার আগে ইহুদিদের সেখানে থাকার সুব্যবস্থা করে গেলেন। কিন্তু ইহুদিদের মনে ছিল দুষ্টবুদ্ধি। তারা আশ্রয়লাভের জন্য নয়, এসেছিল মসজিদটির ক্ষতিসাধন করতে। শেষ রাতে মসজিদ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে তার ভিতরে তারা মলমূত্র ত্যাগ এবং নানা ক্ষতি করল। ভোরের আগে ফজরের নামাজের জন্য মসজিদে এসে মহানবী (সা.) এবং সাহাবিরা দেখেন ইহুদিরা নেই। মসজিদটি মলমূত্রে ভরা। তা দেখে সাহাবিরা ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। তারা ইহুদিদের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে বলে উঠলেন, আমরা এখনই তাদের ধাওয়া করব এবং তাদের শির ধুলায় লুটাব।

সাহাবিরা এ জন্য ছুটে যাচ্ছিলেন। রসুলুল্লাহ (সা.) তাদের নিবৃত্ত করলেন। নির্দেশ দিলেন, না তোমরা কোথাও যাবে না। এ মসজিদ তোমাদের কাছে পবিত্র, ইহুদিদের কাছে নয়। সে কারণেই তারা মসজিদকে এভাবে নোংরা করতে পেরেছে। তাদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া ঠিক হবে না। আল্লাহর ঘরের সম্মান ও পবিত্রতা আল্লাহই রক্ষা করবেন। তোমাদের উত্তেজিত হওয়া ঠিক হবে না। আজ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যখন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার শিকার, তখন মহানবী (সা.)-এর এ সহিষ্ণুতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে। প্রতিহিংসাপরায়ণতা নয়, সহনশীলতা হলো মানবধর্মের সত্যিকারের সৌন্দর্য। মহানবী (সা.) ছিলেন সে সৌন্দর্যেরই আধার।

সত্য সুন্দর কল্যাণের পথে চলতে হলে মহানবী (সা.)-এর দীনে বিশ্বাস রাখতে হবে। মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসতে হবে নিজের চেয়ে। স্বজনদের চেয়ে। নিঃশর্তভাবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! আপনি বলে দিন তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৩১।

মহান আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের জন্য রসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। বিশেষ করে ওই ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা পোষণ করে এবং আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে।’ সুরা আহজাব, আয়াত ২১।

আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রসুলের আনুগত্য করে সে আল্লাহর আনুগত্য করল, আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে আমি আপনাকে তাদের হেফাজতকারী রূপে প্রেরণ করিনি।’ সুরা নিসা, আয়াত ৮০।

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে ভালোবাসবে সে যেন আমাকে ভালোবাসল। আর যে আমাকে ভালোবাসবে সে জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকবে।’ তিরমিজি।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে তবে যে অস্বীকারকারী সে ছাড়া। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রসুলুল্লাহ! অস্বীকারকারী কে? রসুল (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্যতা করে সে অস্বীকারকারী।’ বুখারি।

মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসতে হলে জীবনের সব ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর