শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

এতিমদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে

মুহম্মদ আশরাফ আলী

ইসলামী পরিভাষায় যে শিশু  সন্তানের পিতা ইন্তেকাল করে তাকে এতিম বলা হয়। রসুল (সা.) নিজেই ছিলেন এতিম। এতিমের সঙ্গে সর্বোত্তম ব্যবহারের তাগিদ দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা জিজ্ঞাসা করছে এতিমের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে? বলে দিন, যে কর্মপদ্ধতি তাদের জন্য কল্যাণকর তা-ই অবলম্বন করা ভালো। তোমরা যদি তোমাদের নিজেদের ও তাদের খরচপাতি ও থাকা-খাওয়া যৌথ ব্যবস্থাপনায় রাখ তাহলে তাতে কোনো ক্ষতি নেই। তারা তো তোমাদের ভাই। অনিষ্টকারী ও হিতকারী, উভয়ের অবস্থা আল্লাহ ভালো করেই জানেন। আল্লাহ চাইলে এ ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কঠোর ব্যবহার করতেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতা ও পরাক্রমের অধিকারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান ও হিকমতের অধিকারী।’ সুরা বাকারা, আয়াত ২২০। এতিমের সম্পদ সুসংরক্ষণ এবং তাদের হক বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইসলামে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এতিমদের তাদের ধন-সম্পদ বুঝিয়ে দাও। ভালো সম্পদের সঙ্গে মন্দ সম্পদ বদল কোরো না। আর তাদের সম্পদ তোমাদের সম্পদের সঙ্গে মিশিয়ে গ্রাস কোরো না। এটা মহাপাপ।’ সুরা নিসা, আয়াত ২। এতিমের সম্পত্তি গ্রাস ইসলামের দৃষ্টিতে অমার্জনীয় অপরাধ। এ  অপরাধের কঠোর পরিণতির কথা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যারা এতিমের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা মূলত আগুন দ্বারাই নিজেদের পেট বোঝাই করে। তারা নিশ্চয়ই জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে।’ সুরা নিসা, আয়াত ১০। এতিমের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘এতিমের প্রতি কঠোর হইও না। সাহায্য প্রার্থীকে তিরস্কার কোরো না। আর নিজের রবের নিয়ামত প্রকাশ কর।’ সুরা দোহা, আয়াত ৯-১১। এতিমকে যে আশ্রয় দেবে, কাছে টেনে নেবে তার পুরস্কার ঘোষণা করে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি আর এতিমের দায়িত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তি জান্নাতে এভাবে থাকব। এই বলে তিনি নিজ হাতের তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের মধ্যে সামান্য ফাঁক রেখে ইশারা করে দেখালেন।’ বুখারি, মুসলিম। অর্থাৎ হাতের দুই আঙ্গুল যেমন পাশাপাশি, তেমনি এতিমের অভিভাবক ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একসঙ্গে জান্নাতে থাকবেন।

এতিমদের অধিকার বা হক সুসংরক্ষণে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে দূরে থাক। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসুল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, সেগুলো হলো- ১. আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করা ২. জাদু করা ৩. অহেতুক আল্লাহর নিষিদ্ধ জীবজন্তু হত্যা করা ৪. সুদ খাওয়া ৫. এতিমের মাল ভক্ষণ করা ৬. জিহাদের মাঠ থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং ৭. সতী-সাধ্বী মুসলিম নারীর ওপর ব্যভিচারের মিথ্যা দোষারোপ করা।’ বুখারি, মুসলিম।

আল্লাহ এতিমদের প্রতি আমাদের সদয় হওয়ার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর