বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মীয়তার সম্পর্ক

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মীয়তার সম্পর্ক

ইসলামের দৃষ্টিতে মানব জাতির সবাই প্রথম মানব ও মানবী হজরত আদম ও হাওয়া (আ.)-এর উত্তরসূরি। এ অর্থে এক মানুষ অন্য মানুষের আত্মীয়। সার্বিক বিবেচনায় আত্মার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মীয় বলা হয়। এটি রক্তের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেমন হতে পারে, তেমন বৈবাহিক সম্পর্কের কারণেও হতে পারে। ইসলামে আত্মীয়তা বিশেষত রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানব জাতি! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে। আর সে একই প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া। তারপর তাদের দুজনার থেকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। সেই আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের কাছ থেকে নিজেদের হক আদায় করে থাকো এবং আত্মীয়তা ও নিকট সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থেকো। নিশ্চিতভাবে জেনে রেখ, আল্লাহ তোমাদের সব কর্মকান্ড সূক্ষ্মভাবে প্রত্যক্ষ করছেন।’ সুরা নিসা, আয়াত ১। আল কোরআনের আরও কিছু আয়াতে আত্মীয়তার বিষয়টি আলোকপাত করা হয়েছে। ‘আল্লাহ ন্যায়নীতি, পরোপকার ও আত্মীয়স্বজনদের দান করার হুকুম দেন এবং অশ্লøীলতা, দুষ্কৃতি ও অত্যাচার-বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা লাভ করতে পার।’ সুরা নাহল, আয়াত ৯০। মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘কাজেই (হে মুমিনগণ!) তোমরা আত্মীয়দের তাদের অধিকার দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকে (দাও তাদের অধিকার)। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে তাদের জন্য এটা উত্তম এবং তারাই সফলকাম হবে।’ সুরা রুম, আয়াত ৩৮। হাদিসেও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের রিজিক প্রশস্ত ও নিজের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি হওয়া পছন্দ করে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।’ বুখারি, মুসলিম। তিনি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ইমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ইমান রাখে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের জীবনে বিশ্বাসী সে যেন ভালো কথা বলে, অন্যথায় চুপ থাকে।’ বুখারি, মুসলিম। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে জাহান্নাম থেকে দূরে থাকা যাবে। এ বিষয়ে বিশিষ্ট সাহাবি আবু আইউব খালেদ (রা.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসুল! আমাকে এমন একটি কাজ সম্পর্কে অবহিত করুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে ও জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর ইবাদত করতে থাকো, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুর শরিক কোরো না। নামাজ কায়েম কর, জাকাত আদায় কর ও আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখ।’ বুখারি, মুসলিম। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ বুখারি, মুসলিম।

আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা অন্যায়ের শামিল। সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রবণতাও ইসলামের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনকারী নয়, যে আত্মীয় তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেও ছিন্ন করে। বরং আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনকারী ওই ব্যক্তি, যার সঙ্গে তার আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার পরও সে পুনরায় তা স্থাপন করে।’ বুখারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর