বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র সংরক্ষণ

আদালতের নির্দেশ আশাজাগানিয়া

মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় স্মারকচিহ্ন। এসব অস্ত্র ব্যবহার করেই তারা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে পরাজিত করেছে। শত্রুমুক্ত করেছে স্বদেশকে। স্বাধীনতাকে করেছে নিষ্কণ্টক। কালের বিবর্তনে অস্ত্রগুলো হয়তো অনেকটাই এখন ব্যবহারের অনুপযোগী। এর ব্যবহারিক গুরুত্ব হয়তো হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এ অস্ত্রগুলো যেহেতু বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের স্মারকচিহ্ন, সেহেতু এগুলোর মূল্য আর্থিক বিচারে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তা এমনই এক অমূল্য ধন যার কোনো তুলনাই নেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, অমূল্য এ স্মারকগুলো সুসংরক্ষণ করে রাখার বদলে এগুলো বিক্রি করে অর্থ আয়ের কথা ভেবেছিলেন কোনো কোনো মোটা বুদ্ধির মানুষ। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভও দেখা দেয়। আশার কথা, এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে কী পরিমাণ অস্ত্র বর্তমানে কী অবস্থায় আছে সে বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ১৫ নভেম্বর হাই কোর্টে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না এবং মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র। ‘মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র বেচতে চায় সরকার’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিটটি দায়ের করা হয়। রিটের শুনানি নিয়ে আদালত নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি রুল জারি করে। রুলে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র বিক্রি বা আগ্নেয়াস্ত্র স্থানান্তর কার্যক্রম কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ওইসব অস্ত্র সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষা সচিব, অর্থ সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব ও বাণিজ্য সচিবকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। স্মর্তব্য, প্রাচীন নিদর্শন বা স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে অস্ত্রগুলো কিনতে চেয়েছে সুইস ও মার্কিন দুটি প্রতিষ্ঠান। আদালতের আদেশ একটি ভুল সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে আসতে অবদান রাখবে- আমরা এমন আশাই করতে চাই।

সর্বশেষ খবর