সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ইসলামে বুদ্ধিজীবীদের মর্যাদা অসামান্য

মুহম্মাদ আশরাফ আলী

ইসলাম জ্ঞানচর্চার আলোকবর্তিকা বুদ্ধিজীবীদের অতুলনীয় সম্মান দিয়েছে। জ্ঞানচর্চার প্রতি ইসলামের ইতিবাচক মনোভাবের উৎস পবিত্র কোরআন। পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াতেই আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘পড় তোমার প্রতিপালকের নামে; যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ আলো যেমন অন্ধকার দূরীভূত করে তেমন জাহেলিয়াত বা অজ্ঞানতার অন্ধকারকে দূর করে জ্ঞান সত্য সুন্দর কল্যাণের পথকে আলোকিত করে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের সব সময় জ্ঞান সাধনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘শিক্ষিত সম্প্রদায় নবীর উত্তরাধিকারী। যে জ্ঞানকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে, সে তার এক বিরাট অংশ অধিকার করেছে এবং যে জ্ঞানার্জনের পথে নিজেকে নিয়োজিত করে আল্লাহ তার জন্য বেহেশতের পথ সুগম করেন।’ ‘জ্ঞানের অন্বেষণে যে তার বাসস্থান ত্যাগ করে সে আল্লাহর পথে ভ্রমণ করে।’ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন যুদ্ধে বন্দী অমুসলিম বুদ্ধিজীবীদের মুক্তিপণ হিসেবে আর্থিক বা বৈষয়িক সুবিধার বদলে তারা কোনো মুসলমানকে অক্ষরজ্ঞান দান করলে মুক্তি দেওয়া হবে এমন শর্ত নির্ধারণ করতেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘রাতে কিছু সময় জ্ঞানচর্চা করা সারা রাতের নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম’ (দারিমির সুনান থেকে মিশকাতে)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হন। এ হত্যাকান্ড যে ইসলামের দৃষ্টিতে সাধারণ হত্যাকান্ডের চেয়ে জঘন্য তা বুদ্ধিজীবীদের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই অনুমান করা যায়। ইসলাম যে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডকে জঘন্য অপরাধ বলে মনে করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদাররা বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালায়। ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ নানা অপরাধে তারা জড়িত ছিল। আমাদের দেশের কেউ কেউ এসব অপকর্মে মদদ জুগিয়েছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডেও তাদের ভূমিকা ছিল। ইসলাম কোনো অবস্থায়ই জালেমদের সহায়তা করাকে অনুমোদন করে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘সত্যকে পরাভূত করার জন্য যে ব্যক্তি জালেমকে সাহায্য করল সে মহান আল্লাহ ও তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হেফাজতবহির্ভূত হয়ে গেল।’ ফলে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে যারা জালেমদের সহায়তা করেছে, যারা বুদ্ধিজীবী হত্যায় নিজেদের নিয়োজিত করেছে তারা ইসলামী অনুশাসনকেই লঙ্ঘন করেছে। আর সে জন্যই মহান আল্লাহ তাদের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করেছেন লজ্জাজনক পরাজয়ের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ সব শহীদের জন্য আমরা মহান আল্লাহর কৃপা কামনা করব। আল্লাহ তাদের জান্নাতের সুশীতল ছায়ায় ঠাঁই দিন। আমিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর