শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

৫০ বছরে গণতন্ত্র এখনো সুসংহত হয়নি

৫০ বছরে গণতন্ত্র এখনো সুসংহত হয়নি

আকবর আলি খান (জন্ম ১৯৪৪) সাবেক সচিব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ও পিএইচডি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, পাকিস্তানি জান্তা তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। অর্থনীতি বিষয়ে তিনি একাধিক বই লিখেছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর জন্য তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাহমুদ আজহার

 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পথে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি দেখা যাচ্ছে। ৫০ বছরে গণতন্ত্র এখনো সুসংহত হয়নি। গণতন্ত্রের একটি বড় শর্ত, উদারনৈতিক মতবাদে বিশ্বাস থাকা। সরকারি দল ও বিরোধী দল একে অন্যের সঙ্গে বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। উভয় পক্ষকে ছাড় দিয়ে সমঝোতার রাজনীতি করতে হবে। অবিশ্বাস বা সংঘাতের ভিত্তিতে কাজ করলে চলবে না। গত কয়েক দশক আমরা দেশে সংঘাত-সংশয়ের রাজনীতি দেখতে পাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য চরম উদ্বেগের বিষয়। আরেকটা বিকল্প হতে পারে, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে গণজাগরণ। আপাতত সে সম্ভাবনা আমি দেখছি না।

বুধবার মহান বিজয় দিবসে গুলশানের বাসভবনে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। এই প্রবীণ শিক্ষাবিদ এখন শারীরিকভাবেও ভালো নেই। গত ছয় মাস বাসায় একাকিত্বে সময় কাটে তাঁর। পড়াশোনা, লেখালেখি, পত্রপত্রিকা পড়া আর টেলিভিশনের খবরাখবরেই সময় চলে যায়। তিনি জানালেন, ‘শারীরিকভাবে আমি অসুস্থ। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’

একান্ত আলাপচারিতায় দেশের চলমান অবস্থা তুলে ধরে ড. আকবর আলি খান বলেন, দেশে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার খর্ব হচ্ছে। যে দেশে মানবাধিকার নিশ্চিত করা যায় না, সে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও অর্থহীন। সুতরাং দেশে এখন সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে দুর্নীতি দূর করা জরুরি। এ জন্য বিচার বিভাগের সংস্কার করতে হবে। সুশাসনের অভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগ যথেষ্ট পরিমাণে আকৃষ্ট হচ্ছে না। একই কারণে দেশে দেশে ধনী আরও ধনী হচ্ছে। গরিব আরও গরিব হচ্ছে। ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান বেড়েই চলেছে। 

পরপর দুই সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এগুলো বিতর্কিত ভোট হয়েছে। এর ফলাফল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয়েছে কিনা তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। আইনের দিক থেকে হয়তো এ ভোট ঠিকই আছে। কিন্তু যদি আদর্শের দিক থেকে আমরা তাকাই, তাহলে দেখব, এ ভোটে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এত সমস্যার পরও বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে আশাবাদী প্রবীণ এই লেখক। তাঁর ভাষায়, বাংলাদেশে আমাদের যেসব বাধা-বিপত্তি রয়েছে, তার জন্য আমাদের তারুণ্যের সাহস দরকার। আমি তরুণদের মধ্যে সেই আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। তরুণ কোনো বাধা-বিপত্তি মানে না। তারা নতুন সমাজ গড়তে এগিয়ে আসে।

সাক্ষাৎকারের একটি অংশ ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। তা হুবহু তুলে ধরা হলো :

 

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। আপনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার ৫০ বছরের এই দিনে বাংলাদেশ আজ কোথায় দাঁড়িয়ে?

ড. আকবর আলি খান : আমি প্রথমেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব বীর শহীদ হয়েছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মহান নেতৃবৃন্দকে শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের দেশ একদিকে ভালো একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতা। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি। এটা আমাদের একটা বিরাট অর্জন। আমরা যখন স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিই, তখন আমাদের নিরুৎসাহিত করে বলা হতো, বাংলাদেশ হবে একটি ভিক্ষার ঝুড়ি। এ ধরনের যে মিথ্যা অপবাদ, সেগুলো ধূলিসাৎ করেছি। আমরা প্রমাণ করেছি, দেশ স্বাধীন হলে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারি। এখন বাংলাদেশ খাদ্যে সাড়ে তিন গুণ উৎপাদন বাড়িয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমরা নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সুতরাং এদিক থেকেও আমাদের আনন্দিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে।

তবে শুধু যে আনন্দিত হব তাই নয়, সঙ্গে সঙ্গে কিছু চিন্তার কারণও রয়েছে। প্রথম চিন্তার কারণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো গণতন্ত্র। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পথে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি দেখা দিচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুসংহত হয়নি। গণতন্ত্রে উদারনৈতিক মতবাদে বিশ্বাস থাকতে হবে। এখানে সরকারি দল ও বিরোধী দল একে অন্যের সঙ্গে বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। অবিশ্বাস বা সংঘাতের ভিত্তিতে কাজ করলে চলবে না। বাংলাদেশে গত কয়েক দশক ধরে আমরা সংঘাত-সংশয়ের রাজনীতি দেখতে পাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য চরম উদ্বেগের বিষয়।

বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় উদ্বেগের বিষয় হলো, বাংলাদেশে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। এ জন্য মানবাধিকার খর্ব হচ্ছে। যে দেশে মানবাধিকার নিশ্চিত করা যাবে না, সে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। যে দেশে সুশাসন ভালো সেখানে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়। আমাদের দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ যথেষ্ট পরিমাণে আকৃষ্ট হচ্ছে না সুশাসনের অভাবে।

বিশ্বব্যাংক থেকে সুশাসনের যে মূল্যায়ন করা হয় তার ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, কোনো ক্ষেত্রেই আমরা সুশাসন সূচকে ওপরের দিকে উঠতে পারিনি। আমাদের এ সুশাসনের ঘাটতি অবশ্যই পূরণ করতে হবে। তৃতীয় যে উদ্বেগের কারণ, বাংলাদেশে একদিকে যেমন মাথাপিছু আয় বাড়ছে, অন্যদিকে এ দেশের ধনী আরও ধনী হচ্ছে। গরিব আরও গরিব হচ্ছে। ধনী আর গরিবের মধ্যে ব্যবধান বেড়েই যাচ্ছে। ১৯৭০ সালে আমাদের ধনী-দরিদ্রের যে ব্যবধান ছিল এখন তার একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটছে। পৃথিবীর যেসব দেশে ধনবৈষম্যের সমস্যা প্রকট আমরা তার একটিতে পরিণত হয়েছি। এটা হ্রাস করার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, আমাদের যে পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেখানেও কিন্তু আগামী ২০ বছরে এ বৈষম্য হ্রাস পাবে কিনা- এ ধরনের তথ্য তুলে ধরা হয়নি। যদি আমরা এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা না নিই, তাহলেও বাংলাদেশে সমস্যা দেখা দেবে।

 

আপনারা যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন সে স্বপ্ন কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে?

ড. আকবর আলি খান : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের যে সাফল্য তা হলো আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। আর গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের ক্ষেত্রে যে সাফল্য বা ব্যর্থতা তার প্রধান বিষয়গুলো আমি ইতিমধ্যে বলেছি। শুধু ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে কিছু বলিনি। আমি মনে করি, যে দেশে গণতন্ত্র আছে সে দেশেই ধর্মনিরপেক্ষতা সম্ভব। যে দেশে গণতন্ত্র থাকে না সে দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। সুতরাং গণতন্ত্রের সংগ্রামে যদি আমরা সফল হই, তাহলে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবেও সফল হতে পারব।

 

আপনি বলছেন প্রায় কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে সংঘাতের রাজনীতি চলছে। তাহলে আদৌ কি জাতীয় ঐকমত্য সম্ভব?

ড. আকবর আলি খান : সংঘাত যেখানে আছে সেখানে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে না। সুতরাং সংঘাত দূর করতে পারলে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। সংঘাত দূর করতে হলে সমঝোতা করতে হবে। এটা করতে হলে উভয় পক্ষকে কিছু ছাড় দিতে হবে। কিছু নিতে হবে। এই দেওয়া-নেওয়ার মনোভাবসহ যদি বড় রাজনৈতিক দলগুলো এগিয়ে না আসে তাহলে সংঘাতের রাজনীতি সহজেই দূর হবে বলে মনে হয় না। তবে এর আরেকটা বিকল্প হতে পারে, তা হলো বড় রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে নতুন গণজাগরণ। আপাতত তার সম্ভাবনাও আমি দেখছি না।

 

পরপর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। স্থানীয় সরকার ও উপনির্বাচনও হয়েছে। এগুলো নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতিও অনেক মানুষের আস্থার অভাব। সামগ্রিকভাবে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

ড. আকবর আলি খান : ভোট নিয়ে আমার আলাদা কোনো মূল্যায়ন নেই। বিতর্কিত ভোট হয়েছে। এর ফলাফল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয়েছে কিনা তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। আইনের দিক থেকে হয়তো এ ভোট ঠিকই আছে। কিন্তু যদি আমরা আদর্শের দিক থেকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, এসব ভোটে অনেক কিছুই ঘাটতি রয়েছে।

 

টিআইবিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে বাংলাদেশে ঘুষ-দুর্নীতি বেড়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়লেও ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। এটা কীভাবে বন্ধ হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

ড. আকবর আলি খান : এটা বন্ধ করতে হলে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। কোনো ক্ষেত্রেই দুর্নীতির সঙ্গে আপস করা চলবে না। সুতরাং যদি দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তাহলেই এটা বন্ধ করা যাবে। আমি মনে করি এর সঙ্গে সঙ্গে বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রয়োজন আছে। কারণ যারা দুর্নীতিবাজ তাদের দ্রুত বিচারকাজ করা না গেলে দুর্নীতির অপসংস্কৃতি টিকে যাবে। সুতরাং আমাদের আইন-কানুন, আমাদের বিচার পদ্ধতি সম্পর্কেও চিন্তাভাবনা করতে হবে। এ নিয়ে সামগ্রিকভাবে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারই পদক্ষেপ নেয়নি। যদি নেয় তাহলে নিশ্চয়ই সিভিল সমাজ থেকে তাদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হবে।

 

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যুতে রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও ভেঙেছে। এ অবস্থাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

ড. আকবর আলি খান : ইসলামের ইতিহাসে ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক আছে। বিতর্ক থাকলেও অনেক মুসলিম রাষ্ট্রে ভাস্কর্য টিকে রয়েছে। যেমন আফগানিস্তানে বামিয়ানে বুদ্ধমূর্তি প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে টিকে আছে। অবশ্য অতিসম্প্রতি তালেবানরা এটা ধ্বংস করেছিল। কিন্তু দেড় হাজার বছর ধরে এত বড় আলেম-ওলামারা সেখানে ছিলেন, তারা কিন্তু এটা ধ্বংস করার কোনো পদক্ষেপ নেননি।

 

দেশে এখনো করোনাকাল চলছে। বাংলাদেশে করোনাকালীন অর্থনীতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

ড. আকবর আলি খান : করোনাভাইরাসের ফলে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে আমাদের দেশে ক্ষতির পরিমাণ কম। এখন পর্যন্ত আমরা টিকে আছি। যদিও করোনার ভ্যাকসিন বেরিয়েছে, তা যদি আগামী ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে সারা দেশে সবাইকে দেওয়া যায়, তাহলে আমার মনে হয় করোনার প্রভাব আমাদের ওপর তত পড়বে না। যদি তা না হয় তাহলে করোনার প্রভাব আমাদের ওপর ব্যাপক হতে পারে।

 

করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। স্বাস্থ্যনীতিও নেই। ওষুধের দামও চড়া। সামগ্রিকভাবে এ সেক্টর নিয়ে আপনার মতামত কী?

ড. আকবর আলি খান : স্বাস্থ্যনীতি হলেই যে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি হয় তা ঠিক নয়। আমাদের স্বাস্থ্যনীতিও ছিল। এখানে নীতির বিষয় নয়। স্বাস্থ্যব্যবস্থায়ও সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে এখানে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতি দূর করতে হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে শুধু স্বাস্থ্য খাতে আলাদাভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সামগ্রিকভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

করোনাকালে বাংলাদেশের শিক্ষায় চরম ক্ষতি হয়েছে। সম্প্রতি এইচএসসিতে অটো পাসও দিয়েছে সরকার। এ নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার এ অবস্থায় আপনার মূল্যায়ন কী?

ড. আকবর আলি খান : আমি কখনই অটো পাসের পক্ষপাতী নই। অটো পাস দিলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে আমরা করোনার ভ্যাকসিন দ্রুত দিতে পারলে হয়তো শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠন করা যাবে।

 

বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে আপনি কি কোনো আশার আলো দেখতে পান?

ড. আকবর আলি খান : অবশ্যই আমি তরুণদের নিয়ে অনেক আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। কারণ তরুণ কোনো বাধা-বিপত্তি মানে না। তারা নতুন সমাজ গড়তে এগিয়ে আসে। সুতরাং বাংলাদেশে আমাদের যেসব বাধা-বিপত্তি রয়েছে তার জন্য আমাদের তরুণদের সাহস দরকার। তাদের সৃষ্টিশীল ক্ষমতার প্রয়োজন। বাংলাদেশে তরুণরা এগিয়ে আসুক, এটাই আমি প্রার্থনা করি। বাংলাদেশের জনসংখ্যায় এখন তরুণদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তরুণদের সাফল্যেই আগামী দিনের সাফল্য নির্ভর করবে।

 

আপনার সময় কীভাবে কাটছে?

ড. আকবর আলি খান : আমি এখন অসুস্থ। আমি মূলত বই পড়ি। লেখালেখি করি। এই আমার কাজ। মাঝেমধ্যে সংবাদপত্র ও টেলিভিশন দেখে দেশের খোঁজখবর নিই। কিন্তু ছয় মাসের বেশি সময় ধরে আমি ঘরের মধ্যে বন্দী অবস্থায় আছি। আমি দেশবাসীর কল্যাণ কামনা করি এবং তাদেরও দোয়া চাই।

সর্বশেষ খবর