শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মুনাফেকির গুনাহ থেকে নিরাপদ থাকতে হবে

আবদুর রশিদ

মুনাফেকি থেকে মুমিনদের দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মুখারি ও মুসলিমে ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদিতা সততার পথ প্রদর্শন করে, আর সততা পৌঁছে দেয় জান্নাতে। যে লোক ক্রমাগত সত্য কথা বলে এবং সত্যের ওপর একনিষ্ঠ থাকে, আল্লাহর দফতরে তাকে সিদ্দিক বা পরম সত্যনিষ্ঠ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। আর মিথ্যা মানুষকে অসৎ কাজের দিকে টেনে নেয়, আর অসৎ কাজ মানুষকে জাহান্নামে পৌঁছে দেয়। যে লোক ক্রমাগত অসত্য বলে এবং অসত্য ভাষণে সদা সচেষ্ট, আল্লাহর দফতরে তাকে কাজ্জাব- চরম মিথ্যুক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।’ মুখারি ও মুসলিমের আর এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুনাফেকের আলামত তিনটি। সে যতই নামাজ-রোজা পালন করে মুসলমান হিসেবে নিজের পরিচয় দিক না কেন কথা বলায় সে অসত্য বলে, প্রতিশ্রুতি দিলে ভঙ্গ করে, তার কাছে কিছু গচ্ছিত রাখলে আত্মসাৎ করে।’ অন্য এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার ভিতর চারটি দোষ পাওয়া যাবে সে পুরোপুরি মুনাফেক (হয়ে পড়েছে)। আর যার ভিতর কোনো একটি পাওয়া যাবে সে তা বর্জন না করা পর্যন্ত মুনাফেকির একটি অভ্যাসে অভ্যস্ত থাকে। সে চারটি দোষ হচ্ছে কিছু গচ্ছিত রাখলে আত্মসাৎ করে, কথা বললে মিথ্যা বলে, প্রতিশ্রুতি দিলে ভঙ্গ করে, বিরোধের সময় গালিগালাজ করে।’ বুখারি মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ি।

হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের এরূপ উপদেশ খুব কমই দিয়েছেন যাতে এ কথাগুলো বলেননি, যার আমানতদারি নেই তার ইমান নেই এবং যার অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দীন- ধর্ম নেই।’ আহমাদ, মিশকাত। এ হাদিস দ্বারা প্রতীয়মাণ হয়, আমানত রক্ষা, অঙ্গীকার পূরণ পূর্ণ মুমিন হওয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তোমার কাছে আমানত রেখেছে তাকে সময়মতো তা বুঝিয়ে দাও। আর যে তোমার সঙ্গে খেয়ানত করে তার খেয়ানত কোরো না।’ তিরমিজ, আবু দাউদ, দারেমি, মিশকাত। হজরত সাইদ ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অত্যাচার করে আধা হাত জমি দখল করেছে, নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন অনুরূপ সাতটি জমিন তার কাঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, মানুষের মধ্যে উত্তম কে? তিনি বললেন, প্রত্যেক নিষ্কলুষ অন্তঃকরণ সত্যভাষী। সাহাবিরা আরজ করলেন, সুদুকুল লিসান তো আমরা বুঝি, তবে মাখমুমুল কালব কী? তিনি বললেন, নির্মল ও পবিত্র অন্তঃকরণ, যা পাপ করেনি, জুলুম করেনি, যা খেয়ানত করেনি ও যা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত।’ ইবনে মাজাহ, বায়হাকি, শুআবুল ইমান, মিশকাত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমার মধ্যে চারটি বস্তু বিদ্যমান থাকে তখন দুনিয়ার যা কিছুই তোমার থেকে চলে যায় তাতে তোমার কোনো ক্ষতি নেই। আমানত রক্ষা করা, সত্য বলা, উত্তম চরিত্র হওয়া ও খানাপিনায় সতর্কতা অবলম্বন করা।’ আহমাদ, শুআবুল ইমান, মিশকাত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মুনাফেকির ক্ষতিকর পথ থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন।

            লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর