রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
ইতিহাস

বুদ্ধমূর্তি

কুমিল্লার ময়নামতিতে অন্যূন ১২টি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়েছে যা দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, সমাজ ও অর্থনীতির ওপর আলোকপাত করে। সংগৃহীত মুদ্রার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সামান্য কিছু গুপ্ত ও গুপ্ত-পরবর্তী মুদ্রার অনুকরণে নির্মিত স্বর্ণমুদ্রা, শশাঙ্কের একটি দুর্লভ রৌপ্যমুদ্রা, খড়্গ শাসক বলভট্টের প্রায় এক ডজন স্বর্ণমুদ্রা, গুটিকয় আরাকানি ও অসংখ্য হরিকেল ও ‘আকর’ বংশের মুদ্রা এবং আব্বাসীয় খলিফাদের একটি স্বর্ণ ও কয়েকটি রৌপ্য মুদ্রা। মৃৎপাত্র ছাড়া প্রস্তর, ব্রোঞ্জ, স্টাকো ও পোড়ামাটির ভাস্কর্যসমূহ হলো প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শনাদির মধ্যে একক সর্ববৃহৎ সংগ্রহ। এখানে প্রস্তর ভাস্কর্য বিরল। তবে প্রাপ্ত কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত স্টাকো ভাস্কর্যটি একটি আকর্ষণীয় নমুনা। ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যগুলোয় প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্মীয় অনুভূতি ও মূর্তিতত্ত্বে বিহ্বলতা প্রকাশ পেলেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় মহাযান মতবাদের পরিবর্তে তান্ত্রিক মতবাদ এবং সবশেষে বহু-ঈশ্বরবাদের প্রকাশ পরিদৃষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে বৌদ্ধধমের্র সঙ্গে হিন্দু ও আদিবাসীদের বিশ্বাসসমূহ অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে গেছে। খননের ফলে প্রধানত ফসিল কাঠে নির্মিত ডজনখানেক সংকীর্ণ হাতলের হাত-কুঠার ও বাটালি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি অনুসন্ধানের ফলে ময়নামতির দক্ষিণাংশে কিছু নব্যপ্রস্তর যুগীয় বসতি আবিষ্কৃত হয়েছে। পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নব্যপ্রস্তর যুগীয় নিদর্শনাদির সঙ্গে এগুলোর সুস্পষ্ট সাদৃশ্য বিদ্যমান। ময়নামতিতে পরিচালিত প্রত্নতাত্ত্বিক খনন দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার জীবন ও সংস্কৃতির প্রায় সব বিষয়েই আলোকপাত করেছে। এ অঞ্চলের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে বিশদ তথ্য সরবরাহ করেছে এবং সেই সঙ্গে প্রথম দেব বংশ ও দেবপর্বতের প্রতিষ্ঠাতা বলভট্ট সম্পর্কে জানার পথ সুগম করেছে। এতে বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক প্রশ্নের সমাধান হয়েছে। যেমন সমতটের আয়তন ও সীমানা, দেবপর্বত, পট্টিকের ও লালম্বি-বনের অবস্থান এবং হরিকেলের অবস্থা। আরও তাৎপর্যপূর্ণ এই যে, পোড়ামাটির নিদর্শনাদি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে এবং মৃৎপাত্র ও সাধারণ ব্যবহার্য দ্রব্যাদির তারিখ-ক্রম নিরূপণ করে ময়নামতি এখন এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান ও গবেষণার কার্যকর ভিত্তি স্থাপন করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর