সাংবাদিকতা শুরু থেকেই একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। যারা এ পেশায় আসেন তারা ঝুঁকির কথা মনে রেখেই এর সঙ্গে যুক্ত হন। নির্যাতিত হওয়া কিংবা প্রাণহানির ঝুঁকিকে থোড়াই কেয়ার করেন। রূপকথার ফরাসি মোরগের মতো আত্মগর্বেও ভোগেন এ পেশার অংশীদাররা। ফরাসি উপকথার মোরগ মনে করত সে বাঁক না দিলে সেদিন ভোর হবে না। সাংবাদিকরাও ভাবেন তারা সংবাদ প্রচার না করলে বিশ্ববাসী তা থেকে বঞ্চিত হবে। কোথায় মানুষ অত্যাচারিত হচ্ছে, কোথায় দুঃশাসন থাবা বিস্তার করছে সবকিছু ধামাচাপা পড়ে থাকবে। মাদক ব্যবসায়ী, মানব পাচারকারীসহ অন্য সব অপরাধী পার পেয়ে যাবে। সারা দুনিয়া পরিণত হবে সন্ত্রাসী আর সমাজবিরোধীদের অভয়ারণ্যে। সত্য প্রকাশের সাহসী ভূমিকার জন্য বিদায়ী ২০২০ সালে দুনিয়াজুড়ে অন্তত ৫০ সংবাদকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস। গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক এ সংগঠন তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, যেসব দেশে সাংবাদিক হত্যাকান্ড ঘটেছে সেসব দেশে কোনো যুদ্ধ চলছিল না। যাদের হত্যা করা হয়েছে তার বেশির ভাগই অনুসন্ধানী সাংবাদিক। দুর্নীতি ও পরিবেশ ক্ষেত্রে তারা কাজ করতেন। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস বলছে, ২০২০ সালে ৮৪ শতাংশ সাংবাদিককে সরাসরি তাদের কাজের জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ২০১৯ সালেও এমন লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল ৬৩ শতাংশকে। এর মধ্যে মেক্সিকোয় আট, ভারতে চার, ফিলিপাইনে তিন ও হন্ডুরাসে তিন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। মেক্সিকোর ‘এল মান্ডো’ পত্রিকার প্রতিবেদক জুলিও ভালদিভিয় রদর গুয়েজের মস্তকবিহীন লাশ পাওয়া গেছে। মেক্সিকো এখন সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক স্থান। দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানেও বিদায়ী বছরে পাঁচজন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। বিশ্বের বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দেশ ভারতেও একজন সাংবাদিককে পুড়িয়ে মারা হয়েছে বছর শেষে। বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের ওপর হামলা গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকি। গণতন্ত্রের স্বার্থে এ ঝুঁকির বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সচেতন হতে হবে।