মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

নতুন বছর হোক আনন্দময় নিরাপদ

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

নতুন বছর হোক আনন্দময় নিরাপদ

পুরনো, পচা সারা বিশ্বের বেদনার বছর ২০২০ পার করে আমরা ২০২১-এ পা রাখলাম। অবশ্যই আশা করব, ২০২০-এর করোনা মহাপ্রাদুর্ভাবের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে একটা জীবন পাব, আনন্দময় আলোঝলমলে এক নতুন বিশ্বকে দেখতে পাব। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাঝপথেই জো বাইডেনের কাছে হেরে গিয়েছেন। আমেরিকায় খুব একটা এমন ঘটে না। মাঝেমধ্যে মারাত্মক ব্যতিক্রমে কোনো প্রেসিডেন্ট এক পর্বেই ক্ষমতা ছাড়া। যদিও ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়তে চাচ্ছেন না, নানা কলাকৌশল করছেন, ঘাটে ঘাটে হোঁচট খাচ্ছেন। তবু এটাওটা করছেন। এটা অতি সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু যেভাবেই হোক অত উচ্চ আসনে আসীন কারও এ ধরনের আচরণ মানায় না। কিন্তু এখন প্রায় সব বেমানানই যেন এক মহামানানে পরিণত হয়েছে। তাই আমেরিকার এ হুজ্জতি নিয়ে আমাদের ছোট দেশের মানুষের মাথাব্যথা চলে না।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ছিল আমাদের দেশের জন্য এক অভাবনীয় নির্বাচন। বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করেছিল। শুধু সরকারি দল বা জোট নির্বাচন করেছে। সে নির্বাচনে কোনো ভোটারের প্রয়োজন হয়নি। কারণ ১৫৩ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষিত হয়েছিলেন। ৩০০ আসনের পার্লামেন্টে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হলে সে পার্লামেন্টকে আর নির্বাচিত বলা যায় না। তা আপনাআপনিই অনির্বাচিত পার্লামেন্ট বলে পরিচিতি পায়। পরে ১৪৭ আসনে যে নামকাওয়াস্তে নির্বাচন হয়েছিল, সেখানেও ভোটার উপস্থিতি ছিল না। নির্বাচন কমিশনের খুব একটা লাজ-লেহাজ নেই। আগেকার কিছু নির্বাচন কমিশন ছিল, যাদের শ্রদ্ধা করতে গর্ব হতো। এ নির্বাচন কমিশনকে কোনো কিছু বলতে ইচ্ছা করে না। এই কদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অযথাই বলে বসেছিলেন, ‘আমেরিকা পাঁচ দিনেও ভোটের ফল ঘোষণা করতে পারে না। আমরা পাঁচ মিনিটে করে ফেলতে পারি। আমেরিকারও আমাদের কাছ থেকে শিখতে হবে।’ কতটা ভারসাম্যহীন হলে এমন নির্বোধের মতো মন্তব্য করা যায়! সে ১৪৭ আসনে তেমন ভোটার না থাকলেও নির্বাচন কমিশন ৪০ শতাংশ ভোটের ঘোষণা দিয়েছিল। যদি ১৪৭ আসনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়ে তাহলে ৩০০ আসনে ২০ শতাংশের বেশি তাদের হিসাবেই পড়ে না। তাই সে পার্লামেন্টের তেমন গুরুত্ব ছিল না। নির্বাচনের পর সরকার বেশ কয়েকবার বলেছিল, ২০১৪ সালের নির্বাচন ছিল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। তাই আমরা সবাই মিলেমিশে অচিরেই একটি যথার্থ নির্বাচন করব। তা কিন্তু আর হয়ে ওঠেনি। পরে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে অনেকে মনে করছেন সরকার খুবই লাভবান হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ সরকার সর্বোপরি দেশ খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও ইদানীং পো ধরা ছাড়া কারও কথার কোনো গুরুত্ব নেই, তবু আজ হোক বা কাল এ কথা বাস্তবে রূপায়িত হবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যদি কারও লাভ হয়ে থাকে সৎ আমলাদের নয়, অসৎ আমলাদের হয়েছে। এমন এক অবস্থায় আমরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে যাচ্ছি। করোনার নিদারুণ হুমকিতে একটা বছর ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আমাদের সন্তানরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছেন, ‘অবস্থার উন্নতি না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না বা খোলা হবে না।’ অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় জীবনের চেয়ে কোনো কিছুর মূল্য বেশি নয়। তাই প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত না জানিয়ে উপায় নেই। সবার আগে চাই জীবন, তারপর অন্য কিছু। করোনার টিকা আবিষ্কার হয়েছে, উন্নত দেশে দেওয়াও শুরু হয়েছে। আমাদের মতো গরিব দেশ কবে টিকা পাবে এবং এ টিকা ব্যবসায় কে কত কামিয়ে নেবে এখনই বলতে পারছি না। সততা, মানবতা, মনুষ্যত্ব সবই আজ মিথ্যার কাছে পরাজিত। তাই কোনো কিছুই আগ বাড়িয়ে বলা সম্ভব নয়, বিশেষ করে মানবিক বিষয়গুলো। আমরা সবাই আশা করি, ২০২১ আমাদের গর্বের বছর হোক, আমাদের মুক্তচিন্তার বছর হোক। কিন্তু কতটা কী হবে সবই সৃষ্টিকর্তা জানেন। দেশ যদি নিয়মমতো চলত, আইনের বাধানিষেধ মান্য করা হতো তাহলে হয়তো কিছুটা আন্দাজ করা যেত। কিন্তু সে সুযোগও খুব একটা নেই।

হঠাৎ সেদিন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম। এই কদিন হলো প্রবীণ নেতা আ ক ম মোজাম্মেল হকের সহধর্মিণী মারা গেছেন। যে কোনো পোড় খাওয়া রাজনৈতিক নেতার সাথী মারা গেলে তিনি বড় অসহায় হয়ে পড়েন। আ ক ম মোজাম্মেল হকও তা থেকে ব্যতিক্রম নন। মুক্তিযুদ্ধের বেশ কিছু বিষয়-আশয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি ঐকমত্য পোষণ করলেও মনে হলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরও হাত-পা বাঁধা। যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিভাতা। একেবারে সূচনায় বঙ্গবন্ধুর সময় ৭৫ টাকা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিয়ে শুরু হয়েছিল। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা ও খেতাবপ্রাপ্তরা কোনো সম্মানি পেতেন না। একসময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ২ হাজার টাকা ভাতার দাবিতে সংসদ তোলপাড় করেছিলাম। ’৯৬-এ আওয়ামী লীগ সরকার আমার সে দাবি মানেনি, এমনকি অনেক খারাপ খারাপ কথা বলেছিল। পরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দেড়-দুই শ টাকা সম্মানি চালু করে। তবে শুরুতেই প্রতিমন্ত্রী দিয়ে মন্ত্রণালয়ের মর্যাদা অনেকটা কমিয়ে দেয়। আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সে ভাতা বৃদ্ধি করতে করতে এখন ১২ হাজার টাকা করেছে। কিন্তু আমি যখন ২ হাজার টাকার কথা বলেছিলাম তখনকার বাজারদর হিসাব করলে এখন ৫০ হাজার টাকার কাছাকাছি হবে। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের সিটি করপোরেশনের সুইপারদের বেতনও ১২ হাজার নয়, সাধারণ প্রাইমারি স্কুলের পিয়নের বেতনও এখন ১২ হাজারের অনেক বেশি। কেউ কথা শোনে না, তাই বলে লাভ নেই। তবু বিবেকের তাড়নায় এ কথা ওকথা বলি। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানির পর শেখ হাসিনার সরকার খুবই গর্ব করে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানির ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা থেকে বঞ্চিত। সরকারি নীতি বা সিদ্ধান্ত যা-ই থাকুক কোনো এক রাজাকারের ছেলে একসময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কী এক নোট দিয়েছিলেন, কোনো মুক্তিযোদ্ধা যদি যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত হন তাহলে মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত এ তিন ক্যাটাগরির যে ভাতা সর্বোচ্চ তিনি শুধু সেই একটাই পাবেন। সরকার, সরকারি সিদ্ধান্ত গেজেট নোটিফিকেশনের চেয়েও এক রাজাকারের ছেলের নোট বড় হয়ে গেল! এখানে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের কোনো মূল্য নেই। কিছু মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত। মুক্তিযোদ্ধা না হলে তিনি যুদ্ধাহত হতেন না, মুক্তিযোদ্ধা না হলে যুদ্ধ করতে পারতেন না, সাহসিকতার পরিচয় দিতে পারতেন না, খেতাব পেতেন না। সবকিছুর ভিত হচ্ছে তিনি মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা না হলে যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত- এর কোনোটাই হওয়ার সুযোগ নেই। তাই মুক্তিযোদ্ধা গঁংঃ। মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কোনো হেরফের করার কারও কোনো সুযোগ নেই। তারপর কেউ আহত হলে রাষ্ট্র যেহেতু আহতদের জন্য সম্মানি বরাদ্দ করেছে তিনি যুদ্ধাহত সম্মানি পাবেন। সেই একই ব্যক্তি যদি খেতাব পেয়ে থাকেন তাহলে খেতাবপ্রাপ্ত হিসেবেও সম্মানি পাবেন। একটাকে আরেকটার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু কারও সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ নেই। জীবনে এই প্রথম মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য একটা বিল পাঠিয়েছিলাম। এত দিন জানতাম মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবারের চিকিৎসা ব্যয় বহন করে। বছর দশেক আগে আমার চিকিৎসার জন্য ৬০-৭০ হাজার টাকার বিল কল্যাণ ট্রাস্টে পাঠিয়েছিলাম। তারা সে টাকা আমার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছিল। জীবনে এই প্রথম মেয়ের চিকিৎসা খরচ কল্যাণ ট্রাস্টে চেয়েছিলাম। কল্যাণ ট্রাস্ট নাকি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। তারা সেটাকে গ্রহণ করেনি। ঠিক জানি না, কল্যাণ ট্রাস্ট শুধু মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা ব্যয় বহন করে, তাঁর পরিবারের সদস্যদের নয়। এটাই যদি রাষ্ট্রের নীতিমালা হয় তাহলে আমার বলার কিছু নেই। আর যদি একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে অঙ্গের মতো মনে করে তাহলে পরিবারকে বাদ দিয়ে কোনো মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকার যদি ছেলেমেয়ে, বাবা-মা কেউ না থাকলে ভাই-ভাইস্তা হয় তাহলে স্ত্রী বা সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় কেন ট্রাস্ট বহন করবে না? কোনো উত্তর খুঁজে পাইনি। সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো, লাগামছাড়া। এখানে বলতেই হয়। ঘাটাইলের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাছেত সেই ৭৫ টাকার সময় থেকে যুদ্ধাহত ভাতা পেয়ে আসছে। হঠাৎ কে বা কারা অভিযোগ করেছে বাছেত মাস্টার কোনো মুক্তিযোদ্ধাই না। ব্যস, ঠেলা সামলাও। তার ভাতা বন্ধ। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা এখন মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়বে। আমি যে এসব ভাবী না তা নয়। আমিও কখনোসখনো ভাবী, কবে না আমাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর কাদেরিয়া বাহিনীর তেমন কেউ মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। কাদেরিয়া বাহিনীর নাম শুনলেই গ্রেফতার। কারণ কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ’৯০-এ দেশে ফেরার পর কিছু লোক তালিকাভুক্ত হলেও আওয়ামী সরকারের আমলে আমি দল থেকে পদত্যাগের পর সেই আগের অবস্থা। কত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আছে, গামছার দল করে তাই তাকে বাদ দিতে হবে। দেওয়াও হয়েছে অনেককে। যাচাই-বাছাইয়ের নমুনা দেখলে গা-জ্বালা করে। যারা মুক্তিযুদ্ধের আগে পিছে ছিল না তারা এখন যাচাই-বাছাইয়ের চালিকাশক্তি। ডিসি, ইউএনওদের বয়স কারও ৪০-৪২ বছরের বেশি নয়। তারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলবে কী করে আর কী করে যাচাই-বাছাই করবে। কী যে এক হুলুস্থূল কারবার! শুনেছিলাম, কাকের মাংস কাকে খায় না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমন কাড়াকাড়ি হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। মনে হয় এখন দেশে রাজাকারের চেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কঠিন সময়। প্রতিকারের জন্য একেওকে বলি। কিন্তু তাদের করার কিছু আছে কি না বুঝে উঠতে পারি না। সারা জীবন জেনে এসেছি দেশের মালিক জনগণ। কিন্তু এখন আর দেশের মালিক খুঁজে পাই না। এ গুমোট ভাবের অবসান হওয়া দরকার। না হলে একটা দেশ, একটা জাতি কিছুতেই বিশ্বদরবারে তার প্রাপ্য সম্মান পেতে পারে না।

পচা, জরা, পুরনো বছরের শেষ দিনে সাংবাদিকদের শ্রেষ্ঠ সংগঠন জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচন হলো। ফরিদা-ফারুক পরিষদ থেকে ফরিদা ইয়াসমিন সভাপতি আর সবুজ-ইলিয়াস পরিষদ থেকে ইলিয়াস খান সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। আমি তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। সাংবাদিকরা কারও দল, মত, গোষ্ঠীর হতে পারেন না। তারা সমাজের দর্পণ, অন্ধের চোখের আলো। প্রেস ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া যেভাবেই থাকুক তারা না থাকলে দেশ আরও অনেক বেশি অরাজকতায় ছেয়ে যেত। তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থাকতেই পারে। কিন্তু প্রকৃত সাংবাদিক হিসেবে মানুষের নিরাপদ জীবন, দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য নিরন্তর কাজ করবেন। আমি আশা করব, ফরিদা ইয়াসমিন-ইলিয়াস খান মানুষের নিরাপত্তা এবং দেশের সমৃদ্ধিতে তাদের ভূমিকা রাখবেন। সাংবাদিকতা যে বর্তমানে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা সেদিন বগুড়ায় দুই সাংবাদিকের ওপর নিদারুণ আক্রমণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ পরিষদকে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সাহসী ভূমিকা রাখতে কাজ করতে হবে। কেন যেন সমাজে বিক্ষুব্ধতা যারপরনাই বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সামাজিক ব্যাধি আমাদের অবশ্য অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে। দুই সাংবাদিক গ্রামীণ উন্নয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্প দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে ছিল ভেজালের সমাহার। সরকারি টাকায় রাস্তাঘাট, দালানকোঠা কত কিছু হয়। সেখানে প্রাক্কলন হয় বাজারমূল্যের ১০-২০-৩০ গুণ বেশি। আর এখানে শুনছি, যে প্রাক্কলন হয়েছে তাতে নাকি কোনোভাবেই মাটি মিশিয়েও কাজ করা সম্ভব না। বগুড়ার ওই প্রকল্পের নকশা সম্পর্কে আমার জানা নেই। তাই বিশদভাবে বলতে পারছি না। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান যে বলেছেন, যে প্রাক্কলনে কাজ হচ্ছে তাতে সিমেন্ট তো দূরের কথা শুধু বালি মিশিয়েও ভালোভাবে কাজ করা সম্ভব না। এই সাহসী কথার জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। বড় বড় প্রজেক্টে ভুঁড়িওয়ালাদের পেট ভরার জন্য প্রাক্কলন করা হয় খরচের ১০-২০ গুণ বেশি দিয়ে। আর গ্রামে যেখানে সাধারণ মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই তাদের প্রাক্কলন হবে বাজারমূল্যের অর্ধেক বা তারও নিচে। এ তো কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর