মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বজনপ্রীতি বর্জন করতে হবে

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

স্বজনপ্রীতি বর্জন করতে হবে

স্বজনপ্রীতি আমাদের সমাজে এক ভয়ানক মরণব্যাধির নাম। যা ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এবং ধ্বংস করে দিচ্ছে ন্যায়বিচার, ন্যায়নীতি ও নিরপেক্ষতার আদর্শ। চাকরি, ব্যবসা, রাজনীতি, প্রশাসন, সর্বত্র স্বজনপ্রীতি লক্ষ্য করা যায়। আমরা যে যে দায়িত্বে থাকি চেষ্টা করি নিজের পরিবারের সদস্যদের বা পরিচিতজনদের একটু সুযোগ-সুবিধা দিতে। অন্যদের ওপর অগ্রাধিকার দিতে; যা মোটেই কাম্য নয়। ইসলামে স্বজনপ্রীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। তাই স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি ও বংশপ্রীতি বর্জন করতে হবে। হজরত জোবায়ের ইবনে মুতইম (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি লোকদের স্বজনপ্রীতির দিকে ডাকে, নিজেও স্বজনপ্রীতি করতে গিয়ে যুদ্ধ করে এবং স্বজনপ্রীতির সমর্থনে জীবন উৎসর্গ করে সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়।’ আবু দাউদ। এ হাদিস দ্বারা পরিষ্কার বোঝা গেল মুসলমান স্বজনপ্রীতি করতে পারে না। নিজের দলীয় লোকজন, পরিচিত বা আপনজনকে অন্যের তুলনায় অগ্রাধিকার দিতে পারে না। বংশমর্যাদা নিয়ে অহংকার না করার প্রতি আহ্বান জানিয়ে রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের বংশপরিচয় এমন কোনো জিনিস নয় যে এর কারণে তোমরা অন্যকে মন্দ বলবে। তোমরা সবাই (পিতা) আদমের সন্তান। ধর্ম ও পরহেজগারি ছাড়া একের ওপর অন্যের কোনোই মর্যাদা নেই। বস্তুত কারও খারাপ হওয়ার জন্য অশ্লীল ভাষা ও কৃপণ হওয়াই যথেষ্ট।’ মুসনাদে আহমদ, বায়হাকি। প্রিয় পাঠক! মানুষের অভ্যাস এই যে, নিজের লোকজন কোনো বড় অন্যায় করলেও তা চোখে ধরা পড়ে না। ধরা পড়লেও তেমন অপরাধ মনে হয় না। তাই এর বিচার কামনা করি না। তাকে শাস্তি দিতে চাই না। আর অন্য কেউ ছোটখাটো অন্যায় করলেও তা অনেক বড় মনে হয়। তার বিচার করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যাই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এ জন্যই রসুল (সা.) বলেছেন, ‘বস্তুর প্রতি ভালোবাসা তোমাকে বিবেচনাহীন করে ফেলে।’ আবু দাউদ। অর্থাৎ যাকে মুহব্বত করি তার দোষ দেখতে চাই না। আমাদের এ অভ্যাস খুবই দুঃখজনক। প্রিয় নবী (সা.)-এর যুগে একবার এক উচ্চবংশীয় মহিলা চুরির দায়ে অভিযুক্ত হলো। সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে কেউ কেউ চাইলেন উচ্চবংশীয় হওয়ার কারণে তার বিচার মওকুফ করা যায় কি না। শাস্তি থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া যায় কি না। তাই প্রিয় নবী (সা.)-এর কাছে বিষয়টি বিবেচনার জন্য সুপারিশ করা হলো। সুপারিশের আবেদন শুনে রসুল (সা.)-এর চেহারা লাল হয়ে গেল। তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তীরা এ জন্য ধ্বংস হয়েছিল যে তাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয়রা অপরাধ করলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হতো। আর গরিবরা অন্যায় করলে শাস্তি দেওয়া হতো। এরপর প্রিয় নবী (সা.) বললেন, আজ যদি আমার মেয়ে ফাতিমাও এ অপরাধে অভিযুক্ত হতো, আমি নিজ হাতে তার হাত কেটে দিতাম। রসুল (সা.) স্বজনপ্রীতি বর্জন করতেন। নিজেকে সব সময় ছোট মনে করতেন। এমনকি নিজের জন্য বেশি প্রশংসা করাও পছন্দ করতেন না। তাই তিনি ইরশাদ করেছেন, খ্রিস্টানরা মরিয়মতনয় ঈসার প্রশংসা করতে গিয়ে যেরূপ সীমা লঙ্ঘন করেছে, তোমরা আমার ব্যাপারে তদ্রুপ সীমা লঙ্ঘন কোরো না। প্রকৃতপক্ষে আমি তো আল্লাহর এক বান্দা; সুতরাং তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রসুল হিসেবেই জান। বুখারি, মুসলিম।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর